Rajya Sabha

অভিবাসন প্রসঙ্গে সংসদে এপিকও তুলল তৃণমূল

রাজ্যসভায় অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আলোচনার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এপিক প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৫৫
Share:

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা জাল এপিক নম্বরের বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রের উপর চাপ বজায় রাখছে তৃণমূল। আজ এক দিকে রাজ্যসভায় অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আলোচনার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এপিক প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন। পাশাপাশি তৃণমূলের পক্ষ থেকে এপিক এবং জাল আধার নিয়ে পরবর্তী ধাপে কথা বলার জন্য গত তিন দিনে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে দু’টি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আজও রাজ্যসভায় এপিক নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে একাধিক নোটিস জমা দিয়েছেন তৃণমূলের সাংসদেরা।

Advertisement

আজ ঋতব্রত তাঁর বক্তৃতায় প্রথমে অভিবাসন সংক্রান্ত বিল নিয়ে বলা শুরু করেন। তাঁর বক্তব্য, “ভিসা দেওয়ার বিষয়টিকে নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে মোদী সরকার। যাঁরা সরকারের সমালোচনা করছেন, তাঁদেরই ভিসা বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।’’ বাংলাদেশের প্রসঙ্গে এসে তিনি বলেন, “কোনও বাংলাদেশি ছাত্র যদি দেশভাগ নিয়ে গবেষণার জন্য ভারতে আসতে চান, অথবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে চান, তাঁর ভিসা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।” এর পরই তিনি বলেন, “সংসদে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দুষে বলা হচ্ছে, চব্বিশ পরগনায় নাকি জাল আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড নিয়ে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঘটছে। আমার প্রশ্ন হল, আধার কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর দেখে? কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা রয়েছে তার জন্য। নির্বাচন কমিশন রয়েছে।’’ রাজ্যসভার আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ বলেন, “সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফ-এর এলাকা। অনুপ্রবেশকারীরা কি সুপারম্যান? ৫০ কিলোমিটার লাফিয়ে এসে তাঁরা মমতার দরজায় গিয়ে আধার কার্ড জোগাড় করে ফেলছেন!”

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই এ প্রসঙ্গে দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার জমি দিচ্ছে না বলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৪৫০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর বক্তৃতার মধ্যেই প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের ঋতব্রত। তাঁকে প্রথমে অনুমতি দিয়েও পরক্ষণেই প্রশ্ন করতে নিষেধ করা হয়। পরে তৃণমূল সাংসদ দাবি করেন, “কেন্দ্র অসত্য অভিযোগ করছে। ৪৫০ কিলোমিটার নয়, বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে ২৯৭ কিলোমিটার জমি চাওয়া হয়েছে এখনও পর্যন্ত। তার মধ্যে ২৫৫ কিলোমিটার চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।” ঋতব্রত যোগ করেন, ‘‘তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতা থেকে একই এপিক কার্ডে বিভিন্ন ভোটার কার্ডের বিষয়টি প্রথম উত্থাপন করেছিলেন। নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি সামনে চলে আসে এর পর। হরিয়ানা, গুজরাতের অসংখ্য নাম আমাদের এপিক নম্বরে ঢুকে গিয়েছে। এরা কি এসে বাংলায় ভোট দেবেন? মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় যা হয়েছে, তা বাংলায় হবে না। বিজেপি বাংলায় বাইরের লোক ঢুকিয়ে ভোট করতে চাইছে। কিন্তু আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা হতে দেবেন না।”

Advertisement

আজ রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায় নয়া অভিবাসন বিল (অভিবাসন এবং বিদেশি নাগরিক বিল, ২০২৫)। আলোচনা পর্বের শেষে নিত্যানন্দ পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি অভিবাসীদের অনুপ্রবেশে ‘সহায়তা’ করা এবং ভোটার তালিকা ও রেশন কার্ডে তাঁদের নাম তুলে বসবাসের পাকাপাকি বন্দোবস্ত করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। কংগ্রেস এবং তৃণমূল সাংসদরা এতে তীব্র আপত্তি জানান। পরে তাঁরা ওয়াকআউট করেন। নিত্যানন্দ দাবি করেছিলেন, নয়া নাগরিকত্ব আইনে হাজার হাজার মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের সুস্মিতা দেব পাল্টা বলেছিলেন, ২০১৯ সালে সিএএ পাশ হয়েছে, আর ২০২৪-এ নিয়মাবলি তৈরি হয়েছে। মাত্র ৩৫০ জনকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। নিত্যানন্দের যদিও বক্তব্য, এই তথ্য ঠিক নয়। হাজার হাজার জন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। নির্দিষ্ট সংখ্যা দেননি তিনি। তাঁর দাবি, “৩৬ হাজার বেআইনি অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠিয়েছি আমরা।” তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন পরে এপিক প্রসঙ্গে বলেন, “৩১ মার্চ তৃণমূল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লেখে ২ এপ্রিল বিকেলে সময় চেয়ে। কিন্তু সময় দেওয়া দূরস্থান, সেই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকারও করা হয়নি। তাই আজ বিকেলে আমরা আবার চিঠি লিখেছি কমিশনকে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement