এ বছর দশে পড়বে উৎসবের দুর্গাপুজো। লণ্ডনের পূর্বপ্রান্তের উপকণ্ঠ, ইলফোর্ড টাউন হলে ধুমধাম করে প্রতি বছরের মতো এবারেও দুর্গোৎসব পালন করবেন ‘উৎসব’ ক্লাবের সদস্য, সমর্থকেরা, পুজোর নির্ঘণ্ট মেনে।নির্দিষ্ট দিনগুলিতেইইয়োরোপ-আমেরিকার অনেক পুজোর মতো শুধু সপ্তাহান্তের অবসরে নয়। তবে উৎসবের দুর্গাপুজোয় সপ্তাহের দিন সন্ধেবেলাতেও জমজমাট ভিড়ের কোনও অভাব হয়নি কোনও দিন।শত ব্যস্ততার মধ্যেও, লন্ডনের পুবদিকের এই এলাকার বাঙালিরা দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে পূজাপ্রাঙ্গণে এসে জড়ো হবেনই। অনেকেই আসেন আদ্যন্ত বাঙালি সাজে। আলোর উজ্জ্বল বিচ্ছুরণ, ঝলমলে পোশাকের বর্ণময় সমাহারে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পূজাপ্রাঙ্গণ।
দর্শনার্থী এবং অতিথি অভ্যাগতদের সংখ্যার নিরিখে বোধহয় ‘উৎসব’-এর দুর্গাপুজো লন্ডনের উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির একটি। উৎসবের দুর্গাপুজোর অন্যতম প্রধান কর্মকর্তাদের একজন সতীপদ দাস। পেশায় ডাক্তার। তিনি বললেন, “গত বছরের আগের বছর নবমীর দিন সন্ধেবেলায় আটশোরও বেশি অতিথিকে খাবার পরিবেশন করেছি আমরা।” লন্ডনের সব পূজারই রীতি হল, যাঁরা পুজো দেখতে আসেন তাঁদের দু-বেলা পেট ভরেখাওয়ানো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা করা হয় নিরামিষ আহারের। প্রথা ভেঙে নবমীর দিন সন্ধেবেলা মাংস-ভাত পরিবেশনের রীতি শুরু করে ‘উৎসব’, আজ থেকে দশ বছর আগে। সেই ব্যবস্থা আজও অব্যাহত। ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী— পাঁচ দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে রান্নাঘর চালান ‘উৎসব’ ক্লাবের ‘খাই-খাই কমিটি’র সদস্য দেবাশিস দাস, অমর হালদার, দেবাশিস রাহা-সহ আরও অনেকে।
পুজোটি অনুষ্ঠিত হয় ইলফোর্ডের টাউন হলের বিশাল হলঘরে। সেখানে নজর কাড়া মঞ্চসজ্জাটি যিনি করবেন এবছর, সেই কৌশিক রক্ষিতও পেশায় ডাক্তার। পুজোর ঠিক আগে ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে কাজে লেগে পড়াটা তাঁর নেশার মধ্যে পড়ে। সতীপদ দাস বললেন, “অন্যান্যবারের মতো এবারেও কচিকাঁচাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে সপ্তমীর দিন সন্ধেবেলা। প্রবাসে দুর্গাপুজো করার একটা বড় উদ্দেশ্যই হল এদেশে বড় হওয়া প্রজন্মকে বছরের এই কয়েকটি দিন দেশজ সংস্কৃতির স্পর্শ দেওয়া।”
আরও পড়ুন: এডিনবরার পুজোয় এ বার বাংলার গ্রাম
সেই কথাই মনে করিয়ে দিলেন উৎসব ক্লাবের প্রেসিডেন্ট অজিত কুমার সাহাও। তিনি বললেন,“দুর্গাপুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি আসলে বাঙালির একটি সাংস্কৃতিক উৎসব। আমারা দুর্গাপুজো করি এই আশা নিয়ে যে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম, যারা মূলত এদেশে বড় হয়েছে, তারাও বাঙালির এই ঐতিহ্য বজায় রাখার বিষয়ে সমানভাবে উদ্যোগী হয়ে উঠবে।” অনুচ্চ কণ্ঠে অজিতবাবুর সুচিন্তিত মন্তব্য।
তাই এ বছরও ঠিক একই ভাবে উৎসব ক্লাবের নবীন-প্রবীণরা মেতে উঠবেন দুর্গাপুজোয়। মা-বাবার হাত ধরে পুজো দেখতে আসবে এদেশে বড় হয়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীরা। এসে দেখবে জ্বলজ্বল করছে দশভুজার আয়ত নেত্র, সিংহের থাবা বসেছে অসুরের বুকের পাঁজরে। ঢাকের বাদ্যি। কাঁসর-ঘণ্টার অপরিচিত আওয়াজ। প্রদীপের আরতি। পূজাবেদীর সামনে গিয়ে স্মার্টফোনে নিজস্বী তোলার মুহূর্তে হঠাৎ হয়তো এক ঝলক ভাল লাগা,তার উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখবে ধূপের গন্ধ, ফুলের গন্ধ থ’মেরে আছে।