বছরের এই সময়ে বাতাসে হাল্কা শীতের আমেজ গায়ে এসে লাগে। চোখে পড়ে যায়, হলদে রং লাগতে শুরু করেছে গাছের পাতায়। বুঝতে পারি, শরৎ এসে গিয়েছে।
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী এই প্রাগ শহরে বাঙালির অভাব নেই। তবে গুছিয়ে দুর্গা পুজোর আয়োজন করার মতো উদ্যোক্তা মেলা ভার। নিজের দেশ থেকে বহু দূরে, এই প্রবাসে বসে বড্ড মন কেমন করত এই সময়টা। সেই আবেগ থেকেই এখানে পুজো শুরু করি। কোনও স্পনসরের ভরসায় থাকিনি। নিজেদের যতটুকু সামর্থ্য সে-টুকু দিয়েই শিকড়ের খোঁজে শুরু হয়ে ছিল এই বাউল দুর্গা পুজো। বড় মূর্তি আনানোর সামর্থ্য ছিল না। ছোট্ট দুর্গা প্রতিমাতেই পুজো শুরু হল।
এ বার পঞ্চম বছরে পা রাখল আমাদের পুজো। প্রাগের এই একটিই পুজো। এ বার আরও একটু বড় করে আয়োজন করার ইচ্ছে নিয়ে কাজ শুরু করেছি আমরা।
আমাদের দুর্গা এ বার অস্ত্র সজ্জিতা নয়, বরং তিনি বাউলানি। তাঁর হাতে শুধুই এক তারা, দো তারা, খমক, ডুবকি, করতাল, কাঁসর, ঘণ্টা, কোমরে ডুগ্গি ও পায়ে ঘুঙুর।বাকি দেব দেবীদের হাতেও শুধুই বাদ্যযন্ত্র। এই অশান্তি, এই যুদ্ধ মগ্নতা থেকে গানই তো পারে সমস্ত অশুভ শক্তিকে হারিয়ে দিতে!
ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠান সূচিও তৈরি করে ফেলেছি। তিথি ও বিধি মেনে মহালয়া থেকেই উৎসবের শুরু। চলবে দশ দিন। ষষ্ঠীর বোধন থেকে দশমীর সিঁদুর খেলা— বাদ যাবে না কিছুই। সঙ্গে রয়েছে নানা অনুষ্ঠান— বাউল গান, শাস্ত্রীয় সংগীত ও বাজনা, রবীন্দ্র সংগীত, নৃত্য, যোগ ব্যায়াম, বক্তৃতা আরও কত কী। তবে এ বারের যেটা মূল আকর্ষণ, সেটা মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষ ঘিরে একটি বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী।
এ বছর পুজো হবে চেক মন্ত্রকের বাগানে। পুজো করবেন দুই সংস্কৃত ও তিব্বতি ভাষা বিশেষজ্ঞ চেক মহিলা পুরোহিত, বিয়াঙ্কা ও জুজানা। উদ্বোধন করবেন এ দেশের দুই মেয়র জুজানা বেইবাদভা ও মিখাইলা বার্নাদোভা। থাকবেন চেকের প্রথম মহিলা ভারতীয় রাষ্ট্র দূত নারিন্দর চৌহানও।