netaji

ওয়ান্ডারার চেপেই নেতাজির পলায়ন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে!

গেটে ছিল শ্বেতপাথরের ফলক, সুভাষচন্দ্র বসুর বাবার নাম লেখা। এখনও ওখানে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন কাচ দিয়ে ঘেরা এই ওয়ান্ডারার গাড়ি।

Advertisement

জয়দীপ সুর

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:৫৯
Share:

ফাইল ছবি।

সময়টা ১৯৪১ সালের ১৬ই জানুয়ারী। ব্রিটিশ সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পালানোর সেই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে এই দিনেই। এলগিন রোডের বাড়ি থেকে যখন সবার অজান্তে নতুন করে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধিতা গড়ে তুলতে বিদেশে যাচ্ছেন, তার বাহন ছিল ওয়ান্ডারার।

Advertisement

নেতাজির বাড়ি আর পাঁচটা সাধারণ বাঙালি বাড়ির মতোই ছিল। গেটে ছিল শ্বেতপাথরের ফলক, সুভাষচন্দ্র বসুর বাবার নাম লেখা। এখনও ওখানে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন কাচ দিয়ে ঘেরা এই ওয়ান্ডারার গাড়ি। গাড়ির নম্বর বিএলএ ৭১৬৯, এক ঝলক দেখলেই আপনি চিনতে পারবেন এই গাড়িকে।

আপনি ওই গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন গাড়ির পিছনে দেওয়ালে শ্বেতপাথরের ফলকে লেখা রয়েছে, এই গাড়িতে করেই শিশির কুমার বসু নিজেই সুভাষচন্দ্রকে ড্রাইভ করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৬-১৭ই জানুয়ারির রাতে কলকাতা থেকে গোমোতে নিয়ে যান কালকা মেল ধরতে, যেটা ছিল সুভাষচন্দ্রের পলায়নের প্রথম ধাপ।

Advertisement

আরও খবর: পুজোয় কিনুন এই স্মার্ট স্কুটি, দাম মাত্র...​

শিশির কুমার বসু নিজের বইতে লিখেছেন “বাড়ির সামনের গেট খুলতেই আমি গাড়ি চালু করি। বিকট একটা আওয়াজ করে গাড়ি চালু হয়। দেরি না করে আমি গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে যাই তাঁর কথা মতো। প্রথমে দক্ষিণে কিছুটা গেলেও গন্তব্য ছিল উত্তরে। যাঁদের নজরদারিতে থাকার কথা, সেই পুলিশ ও সিআইডি-র লোক ছিল ঘুমিয়ে। তারা একটা অস্থায়ী ছাউনি মতো করেছিল এলগিন রোড এবং উডবার্ন রোডের সংযোগস্থলে, যাতে সেখান থেকেই তারা বাড়ির ওপর ভালো ভাবে নজরদারি করতে পারে। যখন আমরা গাড়ি চালিয়ে বেরিয়েছি, তারা জেগে ছিল না।”

আরও পড়ুন: পুজোর আগে নতুন রূপে বাজারে হাজির নিসানের ‘সানি’​

শিশির কুমার বসু ছোট থেকেই গাড়ির ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন। তাঁর বাবা, শরৎচন্দ্র বসু এই ওয়ান্ডারার গাড়িটা কিনেছিলেন ১৯৩৭ সালে। এই সময় শিশির মেডিকেল কলেজের ছাত্র। তিনি নিজেই রোজ গাড়ি চালিয়ে যাতায়াত করতেন। ১৯৫৫ তে যখন তাঁর বিয়ে হয়, তার পরেও ওয়ান্ডারার নিয়ে শিশিরকুমার বসু এবং তার স্ত্রী কৃষ্ণা বসু মাঝে মাঝেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। শিশিরকুমার বসু ১৯৫৭ সালে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো গঠন করেন। সেই বছরেই গাড়িটি দান করে দেন মিউজিয়ামে। তখন থেকেই নেতাজি ভবনে এই গাড়িটি সকলের দেখার জন্য রাখা রয়েছে।

গাড়ির বর্ণনা
ওয়ান্ডারার জার্মানির একটি কোম্পানি। যারা দু’চাকা ও চার চাকার গাড়ি বানাত। ১৮৯৬ সালে স্থাপিত এই কোম্পানি ১৯১১ থেকে ওয়ান্ডারার ব্র্যান্ড নামে পরিচিতি পায় এবং ১৯৪১ অবধি সাধারণ মানুষের জন্যে যানবাহন বানাতে থাকে। ১৯৩৭ সালে ওয়ান্ডারার ডব্লিউ ২৪ প্রকাশ পায়। ৪ সিলিন্ডার এবং ৪ স্ট্রোকের এই গাড়িতে ছিল ১৭৬৭ সিসি ইঞ্জিন। ৪টি গিয়ারের ট্রান্সমিশন, সর্বোচ্চ ৪২ পিএস ক্ষমতা ছিল ৩৪০০ আরপিএমে। এর চেসিসটা ছিল বাক্স ফ্রেম, দু’টো বা চারটে দরজার মডেল পছন্দ করে নিতে পারতেন ক্রেতারা। ৭৫ বছর পরে, এই মডেলের যে ক’টা গাড়ি এখনও রয়েছে, সেগুলি এক দিকে দুর্মূল্য, তার ওপর এই গাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ রকম সব ইতিহাস!

অনুবাদ অর্চিষ্মান সাহা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement