মহিলা ঢাকিদের তালিম চলছে। আরামবাগের রামনগর গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ দিন ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। কিন্তু সংসার খরচ বেড়েই চলেছে। সামাল দিতে ঢাক বাজানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন আরামবাগের বেশ কিছু মহিলা। ইতিমধ্যে মোট ১৮ জনের দু’টি দল তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আরও অন্তত ১৮ জন।
সালেপুর-১ পঞ্চায়েতের রামনগরের ঢাকিদের প্রশিক্ষণ দেন দিলীপকুমার দাস। তিনি মহিলাদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। রামনগর পিরতলায় প্রতিদিন বিকেল ৪টে এবং বলরামপুরে সন্ধের পর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানান দিলীপ। তিনি বলেন, “বছর চারেক আগে এলাকার চার মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করি। তাঁদের দেখে আরও কিছু মহিলা উৎসাহী হন। এখন ১০০ দিনের কাজ বন্ধ বলে প্রশিক্ষণের চাহিদা আরও বেড়েছে।” তিনি আরও জানান, রামনগরের গির্জাতলা এবং পার্বতীচক মিলিয়ে মোট ১০ জন দক্ষ মহিলা ঢাকির একটি দল তৈরি হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭ জন উপজাতি এবং ৩ জন তফসিলি। অন্য দিকে, মায়াপুর ২ পঞ্চায়েতের বলরামপুরেও ৮ জন তফসিলি মহিলা ঢাকির দল হয়েছে। তাঁরা নিয়মিত বায়নাও পাচ্ছেন।
মহিলাদের দলগুলির মধ্যে রামনগরের ‘কালীমাতা ঢাক পার্টি’-র চম্পা মল্লিক বলেন, “কিছুটা মজা করেই আমরা জনা চারেক প্রশিক্ষণ নিই। এখন ঢাক বাজানোর উপার্জন থেকে সংসারের অনেকটাই সামালাচ্ছি।” ওই দলের আর এক ঢাকি বুল্টি মান্ডির কথায়, ‘‘পরিবারের এবং স্বামীর আপত্তি বিরুদ্ধে গিয়েই কাজটা শুরু করি। এখন বছরে ঢাক বাজিয়েই ৩০-৪০ হাজার টাকা পাই।” ওই দলের সদস্যা মানসী দাস এখনও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “অন্তত ২০-২৫ ধরনের বোল তোলা শিখতে হয়। সব এখনও রপ্ত হয়নি। এখনই একা বাজানোর বরাত পাচ্ছি। আপতত বছরে ২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। সব বোল শিখে গেলে এটা আরও বাড়বে নিশ্চিত।”
ওই চার মহিলার দল প্রথম বরাত পান স্থানীয় ডোঙ্গলের আলুপট্টিতে। সেখানে তাঁদের ঢাকে বোল তোলা দেখে বিভিন্ন জায়গা থেকে বায়না আসতে শুরু করে। পরে বলরামপুরে কালীপুজোয় ওই মহিলা দলকে দেখেই উৎসাহী হন সেখানকার রুইদাস পাড়ার মহিলারাও। মহিলা ঢাকিরা জানান, বাইরে দলগত ভাবে পুজোয় গেলে মণ্ডপপিছু দর মিলছে ১৩-১৪ হাজার টাকা। একা গেলে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা।
এই মহিলা ঢাকিদের একটাই ক্ষোভ, সরকারি ‘লোক প্রসার’ প্রকল্পে তাঁদের এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দিলীপ বলেন, “ওই প্রকল্পের আওতায় আসতে ব্লক প্রশাসন, তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত বহুবার দরবার করেছি। শিল্পীরা নিজেরাও যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও কিছু হয়নি।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, রাজ্য স্তরই প্রকল্পটিতে নতুন নাম নথিভুক্তিকরণ বন্ধ রেখেছে ২০১৬ সাল থেকে। ওই শিল্পীদের সহায়তার বিষয়টি নিয়ে জেলা স্তরে চিন্তা-ভাবনা চলছে।