কলকাতা শহরটার সঙ্গে আলাদা ইমোশন সত্যিই জড়িয়ে আছে,আমি তো কথা বলি শহরটার সঙ্গে।
যখন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে তখন থেকেই আমি কলকাতায়। কমলা গার্লস-এ পড়তাম। কলকাতায় যত জায়গা আছে তার মধ্যে সাদার্ন অ্যাভিনিউ আমার সবচেয়ে ভাল লাগে। এখানে আমার প্রচুর স্মৃতি। এখানেই আমার ছোট থেকে বড় হওয়া, কৈশোর থেকে যৌবন।
আমি আশুতোষ কলেজে পড়েছি। প্রায়ই উত্তর কলকাতার অনেক জায়গায় ঘুরতে যেতাম। প্রিন্সেপ ঘাট, কুমোরটুলি... অনেক জায়গায় যেতাম। বইমেলায় যাওয়া তো আছেই।
কলকাতা শহরটার সঙ্গে আলাদা ইমোশন সত্যিই জড়িয়ে আছে, আমি তো কথা বলি শহরটার সঙ্গে। আমার জীবনে যখনই কিছু হয়... আনন্দের কিছু ঘটলে বা দুঃখের কিছু ঘটলে... যাই ঘটুক না কেন এই শহরটার সঙ্গে প্রচন্ড কমিউনিকেট করতে পারি। যখনই বাইরে কোথাও বেড়াতে যাই চার-পাঁচদিন পর থেকেই হোম সিকনেস শুরু হয়। আবার অনেক দিন পরফিরে যখন কলকাতায় নামি...এটার মধ্যে আলাদা একটা থ্রিল আছে যেটা প্রত্যেক বার ফিল করি, প্রত্যেক বার। একটা অদ্ভুত ব্যাপার ভেতরে কাজ করে।
শহরটা এক্সপ্লোর করতে খুব ভাল লাগতো
কলকাতা আমার খুবই কাছের একটা শহর। ‘এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু’-র মতো। প্রথম বার টিউশন যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিলাম, ক্লাস ইলেভেনে পড়ি তখন। কমলা গার্লস-এর বন্ধুদের সঙ্গে গোলপার্কে ফুচকা খেতে গিয়েছিলাম। অবভিয়াসলি প্রথম ডেটে যাওয়া... কলকাতা শহরই তার সাক্ষী ছিল। আমি হাঁটতে খুব ভালবাসি, কিন্তু এখন এতটা সুযোগ হয় না। স্কুলের সামনে দিয়ে গড়িয়াহাট হয়ে, গোলপার্ক হয়ে আবার সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কাছে যে রাস্তাটা যায়, ওই রাস্তাটায় হাঁটতে প্রচন্ড ভালবাসতাম। বহু বন্ধুর সঙ্গে ওই রাস্তায় হেঁটেছি এবং দীর্ঘ কথোপকথনের একটা সিন চলেছে। এই রকম কতবার হয়েছে। অনেক কিছু আছে। বলতে গেলে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে যাবে। সেজন্য বেশি ডিটেলিং-এ যাচ্ছি না।
তবে নিজের গাড়ি, ঠিকঠাক বন্ধুবান্ধব যখন থাকে তখন আমি রাতের কলকাতা দেখতেও বেরোই যেটা আমার প্রচন্ড একটা অ্যাট্রাকশন। ডে বাই ডে রাতের কলকাতার একটা অদ্ভুত অ্যাট্রাকটিভ ব্যাপার চলে এসেছে। আলো দিয়ে সাজানো থাকে শহরটা এবং যদিও মানুষজন সবাই ব্যস্ত, তবু কেমন একটা মায়ানগরী মনে হয় কলকাতাকে, স্পেশালি যখন অনেকটা রাত হয়ে যায়। রাতের কলকাতায় ড্রাইভে যেতে খুব ভাল লাগে।
আমি রাতের কলকাতা দেখতেও বেরোই যেটা আমার প্রচণ্ড... একটা অদ্ভুত অ্যাট্রাকশন
উত্তর কলকাতায় কয়েকটা জায়গা আছে যেতে প্রচন্ড ইচ্ছে করে কিন্তু যেতে পারি না। কফি হাউজ হোক বা প্যারামাউন্ট, অনেকদিন যাওয়া হয় না। উত্তর কলকাতায় আমার এক বন্ধুর বাড়ি পুজো হয়। ওর বাড়ি পুজো দেখতে যাওয়ার এক ফাঁকে একবার প্যারামাউন্টে সরবত খেতে গিয়েছিলাম। তারপর আর যাওয়া হয়নি। আগে প্রেসিডেন্সি কলেজে ঘুরতেও আমার খুব ভাল লাগতো। কোনও বাহানা পেলেই প্রেসিডেন্সির ভেতরে ঘুরে আসতাম। কিন্তু রিসেন্টলি শুনলাম, প্রেসিডেন্সিতে এখন এভাবে সবাই ঢুকতে পারে না। ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে যেতে ভাল লাগত। এরকম প্রচুর জায়গা আছে। শহরটা এক্সপ্লোর করতে খুব ভাললাগত। এখনও ভালবাসি।
কলকাতা শহরটা যেমন আছে সে রকমই থাক। আমি প্রার্থনা করব, শহরের গাছগুলো যেন কাটা না হয়। সবুজ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যা পরিস্থিতি আমার মনে হয় একটু সচেতন হওয়া দরকার। শহরে আরও গাছ লাগানো ও তার পরিচর্চা করা দরকার।