কলকাতার ফাস্ট ফুড আমার খুব ভাল লাগে। রোজই কিছু না কিছু ফাস্ট ফুড খাই।
ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া অব্দি কোনওদিন কলকাতায় আসিনি। বিয়ের পর বরের সঙ্গেই প্রথম কলকাতা আসা। সেটা ছিল ২০১৫। তখন ঘোরার জন্য এসেছিলাম। তারপর আবার যখন এলাম তখন কাজের সূত্রেই আসি। আজ থেকে তিন বছর আগে। তারপর এই শহরে থাকা শুরু করলাম। তখন আমার মা, শাশুড়ি, বাড়ির সবাই বলত,‘‘একা একা বেরবি না। অজানা একটা শহর। কেমন কি লোকজন।’’ কিন্তু আমাকে তো বেরতেই হত। অ্যাপক্যাব বুক করে বেরোতাম। কলকাতা চিনতাম না। যেখানে যেতে হবে সেখানকার অ্যাড্রেসটা জানতাম। ক্যাব আমাকে ড্রপ করে দিত। আমার হ্যাজব্যান্ড অনেকদিন ধরে কাজের সূত্রে কলকাতায় আসত। ও আমাকে কলকাতা চিনিয়েছে। এভাবেই শহরটা আমার চেনা হয়ে ওঠে।
এখন কলকাতা শহরের সেভেন্টি পারসেন্ট অলিগলি চিনি। কোথায় কী পাওয়া যায় এখন আমার নখদর্পণে বলতে গেলে।
কলকাতা থেকে আমার বাড়ি মালদহে যখন যাই, তিন দিন পর আর ভাল লাগে না। মনে হয়, কখন এই শহরটায় ফিরব। এরকম একটা টান হয়ে গিয়েছে এই শহরের প্রতি। আমার কেরিয়ার এই শহরেই শুরু। সেজন্য কলকাতা মানেই আমার কাছে আলাদা রকম একটা অনুভূতি। এই শহর এখন আমার বাড়ি। কলকাতাই এখন আমার শহর, আমার জায়গা। ভবিষ্যতে আমি যদি অন্য কোথাও থাকি তবুও আমার কাছে সেরা হয়ে থাকবে কলকাতা।
‘কলকাতায় কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই ঘুরতে ভাল লাগে’
কলকাতার ফাস্ট ফুড আমার খুব ভাল লাগে। রোজই কিছু না কিছু ফাস্ট ফুড খাই। ছুটির দিনে হয়তো আমি, আমার বর দু’জনেই ঘরে আছি। ওর হয়তো শরীর খারাপ, রেস্ট নিচ্ছে। আমি জোর করে ওকে নিয়ে বাইরে খেতে যাই। বিভিন্ন রকম খাবার আমার মাথায় ঢোকে। আর সেটা আমি খুঁজতে বেরই। এই যেমন গত কয়েকদিন ধরে ‘লিট্টি চোখা’ খুঁজে বেড়াচ্ছি। দক্ষিণ কলকাতার অনেক জায়গা ঘোরা হয়ে গেল। এখনও পাইনি। ভাবছি এবার উত্তর কলকাতার দিকে খুঁজতে যাব।ফুচকা, মোমোও আছে। ফুচকা তো ভীষণ ভাল লাগে। আমাকে রাত একটার সময়েও যদি কেউ ঘুম থেকে তুলে বলে যে, ‘চল, ফুচকা খেতে যাব’ তো চলে যাব।
কলকাতায় কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই ঘুরতে ভাল লাগে। একা একা খুব একটা বেরই না। আমি বেরনো মানেই আমার বরকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব, জোর করে প্রায়।গড়িয়াহাটে বাজার করতে ভাল লাগে। আর আমার ভীষণ প্রিয় সাউথ সিটি। আমি যখন বাড়িতে থাকি আমার কোআর্টিস্টরা আমাকে টেক্সট করে জিজ্ঞেস করে, ‘কি রে, কী প্ল্যান? সাউথ সিটি?’ সবাই বুঝে গিয়েছে আমি কোথায় যেতে ভালবাসি!
সবই ঠিক আছে, কিন্তু কলকাতার গরম খুব খারাপ লাগে। খুব গরম পড়ে। দিনের বেলা একদম বেরতে ইচ্ছা করে না। এই একটা জিনিসই সবথেকে খারাপ লাগে। আর কিচ্ছু না। এমনকি এখানে কোনওদিন কোনও সমস্যায় পড়িনি। যত জনকে পাশে পেয়েছি, সবাই আমাকে হেল্প করেছে। আমি মানুষের সঙ্গে ভীষণ কথাবার্তা বলতে ভালবাসি, হাসিঠাট্টা করতে ভালবাসি। তাই সবার সঙ্গেই সহজে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। প্রচুর বন্ধুবান্ধব হয়েছে কলকাতায়। এখন আমার পড়াশোনাও কলকাতায়। বাসন্তী দেবী কলেজে সাইকোলজি-এডুকেশন নিয়ে পড়ছি।
কলকাতার সন্ধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে ভাল লাগে। সকাল থেকে কলকাতার যে পরিবেশটা সেটা সন্ধ্যেবেলা গিয়ে অন্য রকম হয়ে যায়। আর মোটামুটি রাত সাড়ে ১০টা-১১টার সময়টাও বেশ লাগে। কলকাতার বেশি রাত অতটা পছন্দ হয় না। যতক্ষণ মানুষজন রাস্তায় থাকে ততক্ষণ ভাল লাগে। রাস্তায় বেরিয়ে মানুষজন দেখতে পছন্দ করি। হয়তো ফুচকা খেতে গিয়ে একটা সবে মুখে দিয়েছি অমনি পাশ থেকে কেউ বলল, ‘এই, তুমি মোহর না!’ বা ‘তুমি দেবী চৌধুরানী!’এটা যেমন এনজয় করি তেমনই অনেক সময় মনে হয়, ‘ইস! খাওয়ার সময় এরকম!’
সবাই চায় কলকাতা আরও উন্নত হোক। আমিও চাই। এখন যেরকম আছে সেটা খারাপ নয়। এটাও ভাল, ভবিষ্যতে উন্নতি হয়ে যা দাঁড়াবে সেটাও আশা করি ভালই হবে। এই যে রাস্তায় এত ট্রাফিক জ্যাম হয় সেটা তাড়াতাড়ি সমাধান হলে খুব ভাল হয়। কোথাও যেতে গিয়ে জ্যামে পড়ে খুব দেরি হয়ে যায়। জ্যামের জন্য এয়ারপোর্টে গিয়েও রিকোয়েস্ট করে বোর্ডিং নিতে হয়েছে আমাকে।