‘‘ভীষণ ভালবাসি কলকাতার বিরিয়ানি, চাইনিজ, চিন্ডিয়ান যেটা।’’
আমি অনেক শহরে থেকেছি। মুম্বইতে থেকেছি, দিল্লিতে থেকেছি, অরুণাচল প্রদেশে অনেক বছর কাটিয়েছি, ছোটবেলায় দার্জিলিংয়ে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু আমার মনে হয়নি অন্য কোনও শহর কলকাতার মতো। আই লাভ মাই সিটি। কলকাতায় এত রকমের খাবার পাওয়া যায়! ভীষণ ভালবাসি কলকাতার বিরিয়ানি, চাইনিজ, চিন্ডিয়ান যেটা। আসলে সব খাবারই আমার খুব প্রিয়।
এই শহরের মানুষের উষ্ণতা আমার খুব ভাল লাগে। আমি এই শহরের বাসিন্দা। আলাদা করে আর কী সুখ্যাতি করব নিজের শহরের? মাঝে মাঝে মনে হয়, শহরের মানুষজন যদি একটু কম অলস হত তো ভাল হত। আর একটু প্রফেশনাল হলে ভাল হত। হয়েছে অনেকটা, আর একটুখানি দরকার। তাহলে হয়তো শহরের ওয়ার্কফোর্স বেড়ে যাবে। আরও পজিটিভ হবে শহরটা।
‘‘আমার শহরটাকে সব অর্থে দূষণমুক্ত, সুন্দর দেখতেই আমি পছন্দ করব’’
কলকাতার রাস্তায় ঘুরতে একই রকম, মানে আগের মতোই লাগে। আগে সল্টলেকে ঘুরে বেড়াতাম, এখন গড়িয়াহাটে ঘুরে বেড়াই। তবে কলকাতায় এখন এত শব্দ, এত হইচই হয় যে আমার ঠিক ভাল লাগে না। সব উৎসব পালিত হয় এই শহরে। এটা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু হইচই, বাজি ফাটানো, ভিড়ভাট্টা অনেক বেড়ে গিয়েছে আগের থেকে। আমাদের স্বভাবই হল শব্দ তৈরি করা। কয়েকজন বন্ধু এক জায়গায় হলেও আমরা জোরে জোরে কথা বলি, হাসি, ফোনেও জোরে জোরে কথা বলি। অন্যদের সমস্যা হচ্ছে কিনা মাথায় রাখি না।
উৎসবে এই ব্যাপারটা আরও ব্যাপকভাবে হয়। শিশু, বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ মানুষ, জন্তুজানোয়ার— কারও অসুবিধার কথা তখন মাথায় থাকে না। অন্যদের সমস্যা তৈরি করে আনন্দ করার পক্ষপাতী নই আমি। এমন যদি হয় যে আনন্দও করলাম আবার অন্যদের সুবিধার কথাও মাথায় রাখলাম, তাহলে খুব ভাল হয়। আমার শহরটাকে সব অর্থে দূষণমুক্ত, সুন্দর দেখতেই আমি পছন্দ করব। রাস্তায় যেখানে সেখানে নোংরা না ফেলারও আর্জি জানাব মানুষের কাছে।
‘‘হইচই, বাজি ফাটানো, ভিড়ভাট্টা অনেক বেড়ে গিয়েছে আগের থেকে।’’
‘কোড়া পাখি’ ধারাবাহিকে আমার চরিত্র আমন। সে কিন্তু শহর থেকে অনেক দূরের এক গ্রামের আদিবাসী মেয়ে। বহু যুগ ধরে তার সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় সম্পর্ক। যদিও কলকাতায় যেমন সবুজের অস্তিত্ব কমে আসছে, সারা পৃথিবীতে বনজঙ্গলও ধ্বংস হচ্ছে। আমন যে গ্রামে থাকে সেটা তো পৃথিবীর বাইরের কোনও গ্রাম নয়। সেখানেও জঙ্গল ধ্বংস হয় নিশ্চয়। তবে এখনও জানি না আমাদের গল্পে এই বিষয়টা থাকবে কিনা। অন্যদিকে, আমনের মতো মেয়ে কলকাতায় কী ভাবে পৌঁছবে দেখা যাক। আর পৌঁছনোর পর কলকাতার সঙ্গে সে কী ভাবে অ্যাডজাস্ট করবে, আদৌ করতে পারবে কিনা, কলকাতার মানুষ তাকে কী চোখে দেখবে, তার ফলে আমনের মানসিক সমস্যা হবে কিনা এখনও অনুমান করা কঠিন। তবে এগুলো যেহেতু হিউম্যান এলিমেন্ট, গল্পে আসতেই পারে।
ব্যক্তিগতভাবে চাইব, আমনকে আমার শহরের মানুষরা যেন তার গোষ্ঠী পরিচয়ের জায়গা থেকে না দেখে। বলতে চাইছি আদিবাসী-জনজাতি, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে আমার শহর যেন হাতে হাত মেলায়।