রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে এই করিডর নিয়ে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
বহু আলোচিত চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে মাস খানেকের মধ্যেই মত বদলে গেল রাষ্ট্রপুঞ্জের!
এক সময়ে ওই করিডর নিয়ে ভারতের আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। এ বার সেই রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টেই ওই করিডর নিয়ে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই করিডরের জন্যই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটতে পারে। উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে করিডরের সাফল্য নিয়েও।
চিনের পশ্চিম প্রান্তের জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে শুরু হয়েছে এই চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। শেষ হয়েছে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের গ্বদর বন্দর শহরে। সড়ক এবং রেলপথে চিন থেকে পাকিস্তানে বা পাকিস্তান থেকে চিনে ঢোকার এই করিডর গিলগিট-বাল্টিস্তানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
দিল্লির আপত্তির মূল কারণ ছিল এখানেই। পাক- অধিকৃত কাশ্মীরের এই গিলগিট-বাল্টিস্তানকে ভারত নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেই মনে করে।
দিল্লির যুক্তি, গিলগিট-বাল্টিস্তানের মধ্যে দিয়ে করিডর বানানোর অর্থ ভারতের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা। এই যুক্তি অবশ্য প্রথমে মানতে চায়নি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু, সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে রাষ্ট্রপুঞ্জ কার্যত দিল্লির সেই আপত্তিতেই সিলমোহর লাগালো বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন
হামলা চালায়নি ভারতীয় সেনা, পাক অভিযোগ উড়িয়ে বলল রাষ্ট্রপুঞ্জ
রাষ্ট্রপুঞ্জের এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় সংক্রান্ত কমিশনের পেশ করা ওই রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, চিন-পাকিস্তান করিডর চালু হলে কাশ্মীর সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে, কাবুল এবং কন্দহরে মাঝেমধ্যেই তালিবানদের হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দক্ষিণ এবং পূর্ব আফগানিস্তানে এখনও রীতিমতো সক্রিয় তালিবান জঙ্গিরা। মাঝেমধ্যেই গিলগিট-বাল্টিস্তানের সংশ্লিষ্ট এলাকায় জঙ্গি হামলার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক করিডর কতটা সফল হবে, তা নিয়েও রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
ভারতকেও চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল ইসলামাবাদ ও বেজিং। কিন্তু নিজের সার্বভৌমত্বের যুক্তি তুলে ধরে দিল্লি ওই প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে গোড়া থেকেই।
‘সিল্ক রোড’ প্রকল্পের আওতায় চিনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের এবং পরবর্তী পর্যায়ে গোটা বিশ্বের যোগাযোগ আরও মসৃণ করতে চান প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। সেই প্রকল্পের পোশাকি নাম ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবিওআর বা ‘ওবর’)। ওই প্রকল্পে ভারত-চিন-মায়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে রেল ও সড়ক পথে যোগাযোগকে আরও মসৃণ করে তোলার প্রস্তাবও রয়েছে। সেই প্রকল্পে অংশ নিতে ভারতের আপত্তি নেই। কিন্তু চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে ভারতের আপত্তি থাকছেই।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক রিপোর্ট গিলগিট-বাল্টিস্তানের মধ্যে দিয়ে যাওয়া করিডরের বিরোধিতায় দিল্লির হাত আরও শক্ত করল বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy