
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিয়ো বুধবার দাবি করেছেন, মার্কিন হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মকাণ্ড ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প)-এর পদক্ষেপের পর ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে আরও অনেক পিছিয়ে গিয়েছে।’’ পাশাপাশি, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘ওই রিপোর্ট ভুয়ো। এ নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই উচিত।’’
ইরানের এক সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে আল জ়াজ়িরা জানিয়েছে, ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের আবহেই ইরানের পার্লামেন্টে একটি নতুন বিল পাস হয়েছে। তাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত রাখবে ইরান। আইএইএ-র আধিকারিকেরা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া ইরানে প্রবেশ করতে পারবেন না।
স্থানীয় সময় অনুযায়ী শনিবার গভীর রাতে ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্র, ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহানে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকার সামরিক বাহিনী। ওই হামলার পরে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে ফেলেছেন আমেরিকার গোয়েন্দারা। ওই গোপন রিপোর্ট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একাধিক আধিকারিকের সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’ জানিয়েছে, হামলায় দু’টি পরমাণুকেন্দ্রের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ ভবনগুলিকে ধ্বংস করা যায়নি। তবে অনুমান করা হচ্ছে, এই হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মকাণ্ড মাস কয়েকের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে।
ইরান এবং ইজ়রায়েল সংঘাত থামাতে কি সাহায্যের প্রয়োজন? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করে নাকি এমনই প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন! যদিও রাশিয়ার সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলেই জানিয়েছেন ট্রাম্প। উল্টে পুতিনকেই পাল্টা সাহায্য করার কথা জানিয়েছেন তিনি! মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘ভ্লাদিমির (পুতিন) আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি কি আপনাকে ইরানের ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি? আমি জানিয়েছিলাম, ইরানের ব্যাপারে কোনও সাহায্যের প্রয়োজন নেই।’’ ট্রাম্প আরও জানান, তিনি পুতিনকে বলেন, ‘‘আপনার ব্যাপারে বরং আমায় সাহায্য করতে হবে!’’
সংবাদমাধ্যম আল জ়াজ়িরার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সন্দেহে ইরানে অন্তত ৭০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১৩ জুন ইজ়রায়েলের হামলার পর থেকেই পুরোদমে শুরু হয় ধরপাকড়। ১৪ তারিখই এক জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তার পর থেকে এক সপ্তাহে আরও পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
ইজ়রায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আরও তিন জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল ইরান। বুধবার ভোরে ইরানের উত্তরপশ্চিম প্রান্তে উর্মিয়া জেলে ইরানের ওই তিন নাগরিককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশের বিচারবিভাগ। অভিযোগ, বিদেশ থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য আনার নাম করে লুকিয়ে অস্ত্র আনিয়েছিলেন ওই তিন ব্যক্তি। অভিযোগ, নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁরা।
ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের আবহে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ জানালেন, পরমাণু চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনার টেবিলে ফিরতে পারে আমেরিকা এবং ইরান। স্টিভের কথায়, ‘‘আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ আলোচনা সদর্থক হতে চলেছে বলেও আশাবাদী তিনি।
মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র মার্কিন হানার পরেও ধ্বংস হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে ওই দেশের পারমাণবিক কেন্দ্রের কাজ বেশ কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে।
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের জয় হয়েছে। অন্য দিকে, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দাবি, জয় হয়েছে তাঁদের! দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই দাবি করেন, ‘ঐতিহাসিক জয়’ অর্জন করেছে তাঁদের দেশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপের জন্য ধন্য়বাদ জানান ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
দুই দেশ সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পরেই ট্রাম্প জানান, ইরান এবং ইজ়রায়েল, দুই দেশই যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তাই তিনি ইরানের উপর তো বটেই, বিশেষ ভাবে অসন্তুষ্ট ইজ়রায়েলের উপর।
শেষমেশ ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানায় ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েলের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে, ইজ়রায়েল তাঁর প্রস্তাব মেনে পারস্পরিক সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হচ্ছে।” পাশপাশি, দাবি করা হয়, ইরানের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েল সামরিক সংঘাতে জয়ী হয়েছে ইজ়রায়েল। সে দেশের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকেও স্থগিত করে দিতে পেরেছে তারা। এর পরেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইরানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক গোষ্ঠী ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি কাউন্সিল (জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ)। তারাও জানায়, তারা ইজ়রায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির পথে হাঁটছে। একই সঙ্গে বলা হয়, ‘শত্রুর নিষ্ঠুরতা’র সমুচিত জবাব দিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী।
ট্রাম্পের ঘোষিত সংঘর্ষবিরতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার ঘণ্টাদুয়েকের মাথায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ইজ়রায়েল এবং ইরান প্রায় একইসঙ্গে তাঁর কাছে এসেছিল। দুই দেশই তাঁর কাছে গিয়ে ‘শান্তি’র কথা বলেছিল।
সোমবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ) ইজ়রায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “ইরান ও ইজ়রায়েল— দুই দেশই সংঘর্ষবিরতিতে সহমত হয়েছে। আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে সংঘর্ষবিরতি শুরু হবে। প্রথমে ইরান সংঘর্ষবিরতি শুরু করবে এবং তার ১২ ঘন্টা পরে ইজ়রায়েল তা অনুসরণ করবে।” অবশ্য কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রাম্পের দাবি উড়িয়ে দেয় ইরান। তেহরান জানায়, সংঘর্ষবিরতি সংক্রান্ত কোনও সমঝোতা হয়নি! তবে ইজ়রায়েল নতুন করে হামলা না করলে, তারাও আর সংঘাতে জড়াবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy