বুলবুলের দাপটে চাষের ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের ন’টি জেলায়।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দাপটে চাষের ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের ন’টি জেলায়। কৃষি দফতরের হিসেব বলছে, প্রায় ৫২% কৃষিজমির ফসল নষ্ট হয়েছে। সেই হিসেবে কেন্দ্রের কাছে ক্ষতিপূরণও চেয়েছে নবান্ন।
মাঠে এখন আমন ধান। ৫২% ধান নষ্ট হলে তো এ বার বাইরে থেকে চাল আনতে হবে! কৃষিকর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে কি রাজ্যে খাদ্য সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হবে?
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, গত তিন দশকে বাইরে থেকে চাল আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ বার আমন ধানের উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট হলে তা হবে নজিরবিহীন।
কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোনে ধরা যায়নি। তবে কৃষি অধিকর্তা সম্পদ পাত্র বলেন, ‘‘উৎপাদন নিয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। ক্রপ কাটিং (ফসল ওঠার পরে যে পদ্ধতিতে উৎপাদন মাপে কৃষি দফতর) হোক, তার পর দেখা যাবে।’’
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বুলবুলের পরে প্রাথমিক হিসেবে ছ’টি জেলায় দু’লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্ট আসে। কিন্তু নবান্ন তা আরও ভাল করে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়। কৃষিকর্তারা ফের খোঁজখবর শুরু করেন। এ বার যে রিপোর্ট তৈরি হয়, তাতে দেখা যায়, ওই ছ’টি জেলার মোট কৃষিজমির অধিকাংশই বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও তিনটি জেলা। ন’টি জেলায় মোট ১৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯২৪ হেক্টর জমিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রায় ১২১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে রাজ্য।
আরও পড়ুন: সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়া সিন্দুকে ইতিহাসের গন্ধ
বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কৃষি দফতরের রিপোর্ট তৈরি হওয়াকালীনই বদলি হন কৃষিসচিব রাজেশ সিনহা। নতুন কৃষিসচিব সুনীল গুপ্ত দফতরে যোগ দিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারকে সঙ্গী করে বুলবুল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘তথ্য না দেখে বলা সম্ভব নয়। তবে এত বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু তো প্রভাব পড়বেই। প্রভাব না পড়লে আমাদের এত খাটতে হত না। তবে আমাদের ধান উদ্বৃত্ত থাকে।’’
কৃষি দফতরের সমীক্ষা, বুলবুলে চাষের ক্ষতি হয়েছে দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদে। মোট ২৮ লক্ষ ৪০ হাজার ৬৬৫ হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে ১৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯২৪ হেক্টর জমিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৩৩%-র বেশি ফসল নষ্ট হয়েছে এমন জমির পরিমাণ ১১ লক্ষ ১৪ হাজার ৪২৯ হেক্টর। শুধু উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই ক্ষতির পরিমাণ কৃষিযোগ্য জমির যথাক্রমে ৮৫ ও ৯২%-র মতো।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চাষে ক্ষতির জন্য প্রায় ৩০৮ কোটি টাকা সাহায্য চেয়েছে রাজ্য। উত্তর ২৪ পরগনার জন্য ২৩৮ কোটি টাকার বেশি। হাওড়ার জন্য ৩৩ কোটি টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। হুগলিতে ক্ষতি প্রায় ১৭১ কোটি। আর পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুরে যথাক্রমে ২৫৩ ও ২০৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। যদিও আধিকারিকদের একাংশের মতে, পশ্চিমের চেয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে বুলবুলের প্রভাব ছিল বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy