কাটা চন্দনগাছের টুকরো তুলে রাখছেন পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র
শান্তিনিকেতন, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুরের পরে এ বার বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ। আবারও চন্দন-বনে হানা দিল দুষ্কৃতীরা।
রবিবার রাতের অন্ধকারে হিড়বাঁধে বন দফতর ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে লাগানো তিনটি শ্বেত-চন্দন গাছ কেটে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। সোমবার বিকেলে বন দফতরের তরফে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
মাস কয়েকের ব্যবধানে একের পর এক এলাকায় চন্দন চুরির একাধিক ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোনওটিরই কিনারা করতে পারেনি। তারই মধ্যে হিড়বাঁধে চন্দন চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন বন দফতর। ব্যক্তিগত জমিতে বা বাড়িতে যাঁরা চন্দন গাছ লাগিয়েছেন আতঙ্কে তাঁরাও।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হিড়বাঁধ মৌজার উপরে বাঁধের বাগান থেকে দু’টি চন্দন গাছ কেটে নেয় দুষ্কৃতীরা। গাছগুলি কেটে ফেললেও সেগুলি আর নিয়ে যায়নি তারা। ওই রাতেই পাশের কাদাবাঁধের পুকুরপাড়ে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে একটি চন্দন গাছ কাটে দুষ্কৃতীরা। গাছের গোড়ার কিছুটা অংশ নিয়ে পালালেও বাকি অংশ ফেলে রেখে যায়। সোমবার সকালে চন্দন গাছ চুরির বিষয়টি স্থানীয়দের প্রথমে নজরে আসে।
হিড়বাঁধের রেঞ্জ আধিকারিক শুকদেব মাহাতো বলেন, “উপরবাঁধ এলাকায় চন্দন গাছগুলি খুবই ছোট। গাছে কোনও সুগন্ধও নেই। তা সত্ত্বেও কে বা কারা সেগুলি কেটে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল।’’ তাঁর অনুমান, গাছগুলি কাটার পরে সুগন্ধ না পেয়ে সেগুলি ফেলে রেখে গিয়েছে চোরেরা। তিনি জানান, হিড়বাঁধ ব্লকের হিড়বাঁধ, চাকাডোবা, মিরগি, ধানাডুংরি, আমঝোড়, বাসদেবপুর মৌজায় সরকারি জমির পাশাপাশি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে প্রায় হাজার চারেক চন্দনগাছ রয়েছে। তার অধিকাংশই শ্বেত-চন্দন।
চন্দনগাছ চুরির ঘটনায় উদ্বেগে বন দফতর। আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারাও। হিড়বাঁধ এলাকায় অনেকের বাড়িতে চন্দন গাছ রয়েছে। তাঁদেরই একজন বললেন, “বাড়িতে চন্দন গাছ রয়েছে অনেকেই জানে। যে ভাবে ফের চুরি শুরু হয়েছে তাতে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। শুধু মনে হচ্ছে চোরেরা এ বার আমার বাড়িতে হানা দেবে। সব সময় ভয়ে ভয়ে রয়েছি।” চুরির পিছনে কোনও চক্র সক্রিয় বলেই মত পুলিশের। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছে, গুণগত মান অনুযায়ী শ্বেত চন্দনের দাম বেশ চড়া। এক কেজি চন্দন কাঠের দাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই একটা গাছ চুরি করতে পারলে তা থেকে ২৫-৩০ কেজি কাঠ মেলে। যার বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা। সেই কারণে এই গাছ চুরির একটি চক্র রাতের অন্ধকারে চন্দন গাছ লোপাট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চুরি ঠেকাতে বনকর্মীদের নজরদারির প্রয়োজন বলে ওই পুলিশ আধিকারিকের মত।
হিড়বাঁধের রেঞ্জ আধিকারিক অবশ্য দাবি করেছেন, দিনের বেলায় পাহারা থাকে। কর্মী সংখ্যা কম। তাই রাতে সব জায়গায় পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। সেই সুযোগে চোরেরা খুব কম সময়ে ব্যাটারি চালিত চিনা করাত দিয়ে চন্দন কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রাতে টহল বাড়ানোর কথা জানিয়েছে পুলিশও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy