সুরক্ষা: নৌকায় ওঠার আগে। নিজস্ব চিত্র
সৌন্দর্যায়ন ও পরিচ্ছন্নতায় নজর দিতেই অনেকটা পাল্টে গিয়েছে মুকুটমণিপুরের চেহারা। বিষয়টি নজর কেড়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু কংসাবতীর জলাধারে পর্যটকদের নৌকা বিহারে ঝুঁকিটা রয়েই গিয়েছে। এ বার জলাধারেও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী হল মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এমডিএ)।
জলাধারের নৌকা চালক ও মালিকেরা মিলে মুকুটমণিপুর নৌকা বিহার পরিষেবা সমবায় সমিতি গড়েছেন। ওই সমবায় সমিতিকে ইতিমধ্যেই একটি স্থায়ী টিকিট কাউন্টার গড়ে দিয়েছে এমডিএ। সম্প্রতি ওই সমবায় সমিতিকে এমডিএ দিয়েছে দুশোটি লাইফ জ্যাকেট। এমডিএ-র নির্দেশে নৌকা বিহারে যাওয়া সমস্ত পর্যটকের লাইফ জ্যাকেট পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে।
কোনও নৌকায় সমস্যা হলে দ্রুত পর্যটকদের উদ্ধার করার জন্য সিভিল ডিফেন্সের তরফে একটি নজরদারি বোটও রাখা হয়েছে।
এতেই শেষ নয়। এমডিএ নির্দেশ দিয়েছে দ্রুত কাঠের নৌকা বদলে ফাইবার বা ইস্পাতের নৌকা চালাতে হবে। বলা হয়েছে, বর্তামনে যে কাঠের নৌকাগুলি চলে, তা অবৈধ।
এ দিকে, নিরাপত্তার ব্যাপারে এমডিএ-র তৎপরতাকে ভাল বললেও কিছু বিষয়ে আবার প্রশ্ন তুলছে জলাধারের নৌকা চালক ও মালিকদের সংগঠন। সমস্যা কোথায়? মুকুটমণিপুর নৌকা বিহার পরিষেবা সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান তারাপদ সিংহ সর্দার বলেন, “প্রশাসন যে ক’টা লাইফ জ্যাকেট দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। পর্যটন মরসুমে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নৌকায় চড়েন। সবাইকে লাইফ জ্যাকেট নিতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে অনেকেই ধৈর্য হারিয়ে নৌকায় না চড়েই ফিরে যাচ্ছেন।” এতে ব্যাবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তাড়াতাড়ি আরও লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
তারাপদবাবুদের দাবি যে অযৌক্তিক নয়, তা মেনেই নিয়েছেন মহকুমাশাসক (খাতড়া) তনয়দেব সরকার। তিনি বলেন, “প্রথম দফায় দুশো লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়েছে। আরও দেওয়া হবে।’’
কাঠের নৌকা বদলে ফাইবারের করার ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠছে। তারাপদবাবু বলেন, “বছরে মেরেকেটে দু’মাস পুরোদমে নৌকা চলে এই জলাধারে। বাকি সময়ে পর্যটক আসে না বলে আমাদের অন্য কাজ দেখতে হয়। ফাইবার বা ইস্পাতের নৌকার দাম প্রচুর। এত টাকা দিয়ে আমাদের পক্ষে ওই নৌকা কেনা সম্ভব নয়।”
বৈধ নৌকা কেনার জন্য অবশ্য জলধারা প্রকল্প থেকে ভর্তুকির আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে সমবায় সমিতির কর্তাদের দাবি, ভর্তুকির টাকা যথেষ্ট কম। সে ক্ষেত্রে বাকি টাকা তাঁদের ঋণ নিতে হবে। নৌকা চালিয়ে যা রোজগার হয় তাতে ঋণ শোধ করা এক প্রকার অসম্ভব বলে দাবি করেছেন তাঁরা। এই ব্যাপারে অবশ্য মহকুমাশাসক বলছেন, ‘‘নৌকার মালিকদের কিছুটা এগিয়ে আসতেই হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপাতত দু’টি ফাইবারের নৌকা এমডিএ-র তরফে সমবায় সমিতিকে দেওয়া হবে।” চলতি পর্যটন মরসুমেই ওই দুটি নৌকা মুকুটমণিপুরে নামানোর তোড়জোড় করছে এমডিএ।
২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী মুকুটমণিপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে এমডিএ গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই মুকুটমণিপুর এলাকাকে প্লাস্টিক, ধূমপান ও মদ্যপানমুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে কড়া পদক্ষেপ করেছে এমডিএ। মুকুটমিপুরের পরিচ্ছন্নতা বজায় ও সৌন্দর্যায়নেও অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সদ্য জেলা সফরে এসে মুকুটমণিপুরে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমডিএ-র সার্বিক কাজকর্ম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
মুকুটমণিপুরে হোম ট্যুরিজম চালু করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুরু হয়ে গিয়েছে প্রকল্পের খসড়া বানানোর কাজ। বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর উদ্যোগে মুকুটমণিপুর জলাধারে মনোরঞ্জনের আধুনিক বন্দোবস্ত করার ভাবনাচিন্তাও করছে এমডিএ। মহকুমাশাসক বলেন, “মুকুটমণিপুর জলাধারে পর্যটকেরা যাতে নিজেরাই বোট চালাতে পারেন তার জন্য ক্যানোয়িং পরিষেবা চালু করার ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া জলাধারে স্পিড বোট নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’
মুকুটমণিপুরের একটি হোটেলের মালিক প্রবীর দত্ত বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই মুকুটমণিপুরে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার গেম চালু করার দাবি তুলে আসছি। এ বারও পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের কাছে ওই প্রসঙ্গ তুলেছিলাম। প্রশাসন এই ব্যাপারে উদ্যোগী হলে মুকুটমণিপুরে পর্যটনের জোয়ার আসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy