গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা সেই মহিলাকে কি সে দিন রাজভবনে আটকে রাখা হয়েছিল? এমনটাই অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মর্মে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন অভিযোগকারিণী। অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন এফআইআর দায়ের করেছে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। শুরু হয়েছে তদন্ত।
রাজভবনের কর্মী এসএস রাজপুত-সহ মোট তিন জনের নাম রয়েছে পুলিশের এই নতুন এফআইআরে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক মহিলাও। অভিযোগ, যে দিন হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন মহিলা, সে দিন তাঁকে রাজভবন থেকে বেরোতে বাধা দিয়েছিলেন ওই তিন জন।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতে গিয়ে অভিযোগকারিণী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে সে দিন সত্যিই আটকানো হয়েছিল কি না, হলে তার কারণ কী, পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
রাজভবনের অস্থায়ী কর্মী ওই মহিলা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন থানায়। কিন্তু যে কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল ভারতীয় সংবিধানের রক্ষাকবচ পান। সংবিধান অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি তদন্ত করা যায় না। তাই মহিলার ওই অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে পারেনি পুলিশ। যদিও যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। রাজভবনের সে দিনের সিসিটিভি ফুটেজও হাতে পেয়েছে পুলিশ। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মহিলার অভিযোগ, রাজভবনের কনফারেন্স রুমে রাজ্যপালের সঙ্গে তিনি দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে রাজ্যপাল তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। মহিলা সেখান থেকে বেরিয়ে প্রথমে পুলিশের আউটপোস্টে যান। পরে হেয়ার স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের আউটপোস্টে যাওয়ার সময়ে রাজভবনে তাঁকে কয়েক জন কর্মী বাধা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
রাজ্যপাল যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একে তিনি ‘ভোটের বাজারে রাজনৈতিক ফয়দা তোলার চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেন। পাশাপাশি, এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর রাজভবনে পুলিশের প্রবেশও নিষিদ্ধ করে দেন তিনি। রাজভবনের সকল কর্মচারীকে জানিয়ে দেন, পুলিশ বা অন্য কারও কাছে এই সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে কোনও কথা বলা যাবে না। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতেও নিষেধ করেন তিনি।
এর মাঝেই এক দিন রাজ্যপাল আবার জানান, কেউ সে দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাইলে রাজভবনে গিয়ে তা দেখে আসতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পুলিশ ছাড়া সকলেই ফুটেজ দেখতে পারবেন বলে জানান তিনি। কিন্তু যে ফুটেজ রাজভবন থেকে দেখানো হয়, তাতে কেবল রাজভবনের ফটকের সামনের অংশ দেখা যায়। অভিযোগকারিণীকে অন্তত দু’বার দেখা গিয়েছিল— তিনি রাজভবনের দিক থেকে বেরিয়ে পুলিশের আউটপোস্টের দিকে যাচ্ছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে পাশের একটি ঘরে যাচ্ছেন। রাজভবনের ভিতরের কোনও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর কী করণীয়, তা জানতে সংবিধান এবং আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছে লালবাজার। সূত্রের খবর, সেখান থেকেই জানা গিয়েছে, রাজভবনের কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্তে কোনও বাধা নেই। নতুন এফআইআরে নাম থাকা ওই তিন কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ কী পদক্ষেপ করে, তা ভবিষ্যৎই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy