বিজেপি-র রাজ্য দফতরে গিয়ে তাঁকে দুই পুলিশ কর্মী ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন অভিযোগ করেছিলেন তিনি। প্রাক্তন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের ওই অভিযোগের ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।
কিন্তু ঘুষ-কাণ্ডের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের ওই তদন্তের উপর আস্থা নেই অভিযোগকারী রাহুল সিংহের। বুধবার ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিভাগীয় তদন্তে লর্ড সিনহা রোডে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অফিসে হাজিরা দিয়ে ওই তদন্তকে প্রহসন বলে আখ্যা দিয়েছেন বিজেপির ওই নেতা। প্রসঙ্গত, রাহুলবাবু এ বার বিধানসভা ভোটে জোড়াসাঁকো কেন্দ্রের প্রার্থীও বটে। এর আগে বিজেপির সবর্ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ঘুষ কাণ্ডের পিছনে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল। এমনকী, ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থও হয় বিরোধী দলগুলি।
আরও পড়ুন: সময়ের জ্ঞান নেই, শিয়ালদহের ট্রেন যেন যাত্রীদের দুঃস্বপ্ন
তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করে আসার পর এসবি অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে রাহুলবাবুর অভিযোগ, কলকাতা পুলিশ তদন্তের নামে ওই ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে আসল চক্রান্তকারীকে বাঁচাতে চাইছে। কলকাতা পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহযোগিতা ছাড়া ওই পুলিশকর্মীরা ঘুষের প্রস্তাব দিতে পারে না বলে রাহুলবাবু অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে এ দিনের সওয়াল জবাবের সময় তাঁর আইনজীবীকে থাকতে না দেওয়াতেও পুলিশকে একহাত নিয়েছেন রাহুলবাবু। তাঁর অভিযোগ এই ভাবে তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন হবে না। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সাহস থাকলে ঘুষ-কাণ্ডের তদন্ত সিবিআই হোক। যাতে আসল সত্যটা ফাঁস হয়। ওই তদন্তকে বিশ্বাস না করলে তিনি এ দিন কেন এখানে এলেন? এই প্রশ্নের জবাবে রাহুলবাবু জানান, তদন্তে সহযোগিতা করার জন্যই তিনি এসেছেন।
লালবাজার সূত্রে খবর, ২৮ মার্চ রাহুলবাবু অভিযোগ করেছিলেন, ওই দিন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) দুই কর্মী— এএসআই শুভাশিস রায়চৌধুরী এবং কনস্টেবল আমিনুর রহমান বিজেপির রাজ্য দফতরে গিয়ে তাঁকে গরু পাচারে সাহায্য করার জন্য ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছে। জোড়াসাঁকো থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগও দেওয়া তাঁর দলের পক্ষ থেকে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কোন ফৌজদারি মামলা দায়ের না করলেও ঘুষ-কাণ্ডে অভিযোগ পেয়েই অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করে লালবাজার। দু’টি পৃথক তদন্তও শুরু করে কলকাতা পুলিশ। একটি বিভাগীয় তদন্ত। যা করছেন ওই বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মনোজ দাস। আর একটি তদন্ত করছেন ডিসি (সেন্ট্রাল) অখিলেশ চতুর্বেদী।
পুলিশ জানিয়েছে, বিভাগীয় তদন্তের জন্য বুধবার বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবুকে লর্ড সিনহা রোডের এসবি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। বেলা ১২টা নাগাদ তিনি সেখানে আসেন। প্রথমে এসবি অফিসের তিন তলার কনফারেন্স রুমে রাহুলবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তদন্তকারী অফিসার ছাড়াও ছিলেন অভিযুক্ত দুই পুলিশকর্মী এবং তাঁদের আইনজীবী প্রাক্তন পুলিশ অফিসাররা। লালবাজারের এককর্তা জানিয়েছেন, এ দিন প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সেখানে সাওয়াল জবাব চলে। প্রথমে রাহুল সিংহের অভিযোগ জানতে চাওয়া হয়। পরে তাঁর কাছে সেদিন ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা।
বেলা তিনটের কিছু পরে এসবি অফিস থেকে বেড়িয়ে এসে রাহুলবাবু বলেন, শুধু মাত্র নিচুতলার ওই দুই পুলিশকর্মীর শাস্তির জন্য অভিযোগ করিনি। পুলিশ কর্মীদের দলীয় অফিসে ঘুষের প্রস্তাব নিয়ে আসার পিছনে কী আছে, তা জানার জন্য করেছি। যাঁরা এদের পাঠিয়েছিল, তাঁদের খুঁজে বের করা হোক। আসল অপরাধী যাঁদের দ্বারা এটা পরিচালিত তা খুঁজে বের করতে সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন। কলকাতা পুলিশের তদন্ত লোক দেখানো। ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকেও একহাত নিয়েছেন রাহুল।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন ছিল তদন্তের একটি পদক্ষেপ মাত্র। এর পরে তদন্তকারী অফিসার অভিযোগকারীর এ দিনের বক্তব্য খতিয়ে দেখে ফের অভিযুক্তদের ডেকে পাঠাবেন। কলকাতা পুলিশের একটি অংশ জানিয়েছে, ডিসি (সেন্ট্রাল)-এর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে ওই দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছিল। কিন্তু বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট না আসায় ডিসি-র তদন্ত শেষ হয়নি। তবে বিভাগীয় তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে এদের চাকরি থেকে ‘ডিসমিস’ করা হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy