কালীগঞ্জে বোমার আঘাতে নাবালিকার মৃত্যুর ঘটনায় আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার শরিফুল শেখ নামের ওই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হল। পুলিশ সূত্রে খবর, নাবালিকার পরিবার যে ২৪ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল, তার মধ্যে ছিল শরিফুলের নামও।
নাবালিকার বাবা কর্মসূত্রে ওড়িশায় থাকেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই সোমবারই ট্রেনে ওড়িশা থেকে রওনা দিয়ে মঙ্গলবার সকালে গ্রামে এসে পৌঁছোন। তাঁর অভিযোগ, “বিরোধী দল করার জন্য বাড়িতে হামলা, বোমাবাজি করা হয়। পুলিশের উপর ভরসা নেই। মেয়ের বিচারের জন্য আদালত থেকে শুরু করে যত দূর যেতে হয় যাব।”
অন্য দিকে, পুলিশ সুপারের ‘দুর্ঘটনা’ মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন নিহত নাবালিকা তমন্না খাতুনের মা সাবিনা বিবি। বোমা হামলায় নাবালিকার মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে। সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, “দুর্ঘটনাবশত বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে।” ইতিমধ্যেই এই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে নাবালিকার পরিবার। তমন্নার মা বলেন, “এটি পরিকল্পিত খুন। কোনও ভাবে এটিকে দুর্ঘটনা বলে অপরাধের গুরুত্ব কমানো যাবে না। পুলিশকে অনুরোধ করব দুর্ঘটনার কথা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।” এই বিষয়ে মুখ না-খুললেও পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে।
মঙ্গলবার থেকে ধৃতদের বাড়ি এবং সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয়েছে পুলিশি তল্লাশি। বাঁশবাগান, পাটখেতেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কোথাও কোনও বোমা, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র মজুত আছে কি না তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
সোমবার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের গণনা হয়। গণনা শেষ হওয়ার আগেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ বিপুল ভোটে জয়ী হতে চলেছেন। বিজয়মিছিল বার করেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, একটি বিজয়মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয় সিপিএম কর্মীদের বাড়ি লক্ষ্য করে। সকেট বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় বছর দশেকের তমন্নার। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া ওই নাবালিকা বড় চাঁদঘর পঞ্চায়েতের মোলান্দা গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনার পর মৃতার মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেছিলেন, ‘‘আমি দেখেছি কারা বোমা ছুড়েছে। আমরা সিপিএম করি। ওদের নাম না-জানলেও সকলের মুখ চেনা, সবাই তৃণমূল করে।’’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ তুলেছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।