লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনের প্রশ্নে ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার বীরপাড়ায় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশুতোষ বর্মা’র নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁরা লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে সমর্থনের কথা জানান। এরই মধ্যে অবশ্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বংশীবদন বর্মন মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ভোট প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। দলের দুই গোষ্ঠীর এই দুই মেরুকরণে গ্রেটার কোচবিহার ভাঙনের মুখেই বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান।
তিনি বলেন, “আশুতোষবাবু-সহ যাঁরা তৃণমূলকে সমর্থনের কথা বলছেন, তাঁরা কোচবিহারের বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। দলের মধ্যে আলোচনা ছাড়াই তৃণমূলকে সমর্থনের কথা বলা হচ্ছে। আজ, শুক্রবার বৈঠক করে ওই নেতাদের বহিস্কার করা হবে।” বংশীবাবুর বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ তুলে পাল্টা সরব হয়েছেন আশুতোষবাবু। তিনি বলেন, “গত ২৯ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওইদিন পর্যন্ত দেখব। এর মধ্যে বংশীবাবু মনোনয়ন না তুলে নিলে তাঁকে আমরা দল থেকে বহিস্কার করে দেব। উনি নিজের খেয়ালখুশি মত দল চালাচ্ছেন।”
গ্রেটার কোচবিহারের সমর্থন নিয়ে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের নেতারাও আবার অস্বস্তিতে রয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, গ্রেটার বিরোধী ভোটারদের একটি বড় অংশ শাসক দলের সঙ্গে রয়েছেন। এই অবস্থায়, গ্রেটারের সমর্থন নিলে সেই ভোটে বিরোধীরা থাবা বসাতে পারে বলে আশঙ্কা তৃণমূল নেতাদের। দলের জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে কেউ দেখা করতে পারেন। কিন্তু আমাদের গ্রেটারের সমর্থনের প্রয়োজন নেই। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমরা এমনিতেই জিতব।”
২০০৮ সালে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের আলাদা রাজ্যের দাবিকে ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কোচবিহার। ঘটনায় এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২ পুলিশ কর্মী এবং ২ গ্রেটার সমর্থকের মৃত্যু হয়। সেই সময় গ্রেটারের আন্দোলনের মুখ ছিলেন বংশীবদন বর্মন। পুলিশ খুন-সহ একাধিক অভিযোগে বংশীবদন-সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। বংশীবদন বর্মন আত্মসমর্পন করেন প্রায় পাঁচ বছর জেলে থাকেন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি জামিনে ছাড়া পান। েই সময়ের মধ্যে সংগঠন ভেঙে একাধিক সংগঠন তৈরি হয়। আশুতোষবাবুর নেতৃত্বে গ্রেটার কোচবিহার ডেমোক্রেটিক পার্টি তৈরি হয়। বংশীবদন জেল থেকে বার হয়ে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টি তৈরি করেন। পরে সব সংগঠন ফের এক হয়ে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন নামেই আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে দলের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ ছিলই বলে অভিযোগ। নির্বাচনের মুখে সে বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
আশুতোষবাবুদের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী রাজবংশী জনজাতির জন্য ঊন্নইয়নমূলক কাজ শুরু করেছেন। রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি, পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির মাধ্যমে রাজবংশী মানুসদের সম্মান জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দাবি জানিয়েছি। প্রাথমিক স্তরে রাজবংশী ভাষার প্রসার-সহ কর্মসংস্থান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। সেই কারণেই আমরা তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থন করছি।” তাঁর দাবি, “এই অবস্থায় আলাদা রাজ্যের দাবির মানেই হয় না। আমাদের পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতির মর্যাদার জন্যই লড়াই। সরকার তো এসব নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
বংশীবদনবাবু অবশ্য পরিষ্কার জানিয়েছেন, তিনি পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে সরছেন না। তাঁর কথায়, “পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে সরে ওঁরা কোচবিহারের মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। আমি আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়েই ভোটের আবেদন করে মানুষের দরবারে যাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy