এই চিত্র বদলাতে চায় পুলিশ।ফাইল চিত্র।
আদালতের লক-আপ থেকে এজলাসে যাওয়ার পথে কনস্টেবলের কাছে আখের রস আর পান খেতে চেয়েছিল বন্দি। খাওয়ার পরেই এক অসতর্ক মুহূর্তে পকেট থেকে লঙ্কার গুঁড়ো বার করে, সেই ‘বন্ধু’ পুলিশের চোখে তা ছুড়ে পালাল সে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় আলিপুর জেলা দায়রা আদালতে। গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই কনস্টেবলের দু’টি চোখ। এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
এ দিকে, এ দিনের এই ঘটনার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। বন্দিদের নিয়ে যাওয়ার সময়ে এতটা অসতর্ক হওয়া কেন, তা নিয়েই শুরু হয়েছে হইচই। আলিপুর আদালতের মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় জানান, কোর্ট লক-আপ থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে প্রত্যেক বন্দির দায়িত্বে আলাদা কনস্টেবল থাকেন। আদালতের আর এক আইনজীবী নবকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে লক-আপ থেকে আদালতে নিয়ে যেতে যেতে অনেক সময়ে বন্দিদের সঙ্গে কনস্টেবলের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সম্পর্ক থেকেই কখনও বন্দিরা বাইরের খাবার খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। যদিও এটা ঠিক নয়।’’ তবে ওই বন্দির পকেটে লঙ্কার গুঁড়ো কোথা থেকে এল, তার উত্তর নেই পুলিশের কাছেও।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৫ সালে যাদবপুরের এক ডাকাতির ঘটনায় ধরা পড়ে শেখ রজ্জাক নামে ওই বন্দি। তারই সঙ্গে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আরও চার জন বন্দির এ দিন আলিপুর জেলা দায়রা আদালতের ৮ নম্বর ঘরে হাজিরার কথা ছিল। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ডাকাতির ঘটনায় ধৃত শেখ রজ্জাক-সহ সকলেই আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ছিল। ওই মামলার ম্যাজিস্ট্রেট ছুটিতে থাকলেও আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য ও পরের হাজিরার দিন নির্ধারণের জন্য বন্দিদের আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। কোর্ট লক-আপ থেকে এজলাস পর্যন্ত বেশ কিছুটা রাস্তা হেঁটে আসতে হয়। এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ বাকি বন্দিদের সঙ্গে শেখ রজ্জাকও হেঁটে যাচ্ছিল। তবে সে ছিল সকলের পিছনে। প্রত্যেক বন্দির সঙ্গেই এক জন করে কনস্টেবল ছিলেন। কনস্টেবলেরা বন্দিদের হাত ধরে ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এজলাসে যাওয়ার ওই রাস্তায় আখের রস বিক্রি হচ্ছিল। তার পাশেই ছিল পানের দোকান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালতের গেটের কাছে মোটরবাইক নিয়ে এক যুবক অপেক্ষা করছিলেন। রজ্জাক দৌড়ে গিয়ে ওই মোটরবাইকে উঠে পড়ে। সেটি আদালতের পাশের গলিতে ঢুকে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। যে কনস্টেবলের চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে ছিল রজ্জাক, তিনি ওই বন্দিকে ধাওয়া করেন। কিন্তু রজ্জাককে ধরা যায়নি।
এই ঘটনার পরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে আদালতে। খবর যায় আলিপুর থানায় এবং লালবাজারের ডাকাতি দমন বিভাগেও। তাদের একটি দল আসে আলিপুর আদালতে। আলিপুর থানার ওসি-ও ঘটনাস্থলে যান।
ওই আদালতের আইনজীবীদের একাংশ জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বন্দিদের কোমরে বা হাতে দড়ি পরানো যায় না। হাত ধরে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু আলিপুর জেলা দায়রা আদালতে কোর্ট লক-আপ থেকে এজলাস পর্যন্ত অনেকটা রাস্তা এবং সেটি জনবহুল। সামান্য অসতর্ক হলেই এমন ঘটনা ফের ঘটার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ। )
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy