প্রতীকী ছবি।
ছাত্রের কাছ থেকে যন্ত্রের সংজ্ঞা জানতে চেয়েছিলেন শিক্ষক। নিজের মতো করে সেই সংজ্ঞা বলতে গিয়ে শিক্ষকের রোষের মুখে পড়েন ছাত্র। শিক্ষকের দাবি ছিল, বইয়ের হুবহু সংজ্ঞাই বলতে হবে, পরীক্ষাতেও লিখতে হবে সেটাই।
শিক্ষা মহলের মতে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার টুকরো ছবি ফুটে উঠেছিল ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার ওই দৃশ্যে। বাস্তব ছবিটা কিন্তু হাঁটি হাঁটি পায়ে পা, হলেও বদলাচ্ছে। ওই সিনেমার জনপ্রিয় চরিত্র র্যাঞ্চোর পথেই হাঁটতে শুরু করেছে শহরের তিন তিনটি স্কুল। প্রচলিত বোর্ডের অধীন ওই স্কুলগুলি পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালরিয়েট (আইবি) ঘরানার পঠনপাঠনকেও অনুসরণ করছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে, আইবি নতুন কিছু নয়। জেনেভায় প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে এই পাঠ্যক্রম। যদিও কলকাতায় তা পৌঁছল অনেক দেরিতে।
ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল এবং দ্য হেরিটেজ স্কুলে বছর দুয়েক ধরে আইবি পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে। এ বার মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসেও শুরু হতে চলেছে এই ঘরানার পঠনপাঠন। যেখানে বার্ষিক পরীক্ষা নয়, দু’বছরে পর্যায়ক্রমে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করা হবে।
মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের অধ্যক্ষা দময়ম্তী মুখোপাধ্যায় জানান, বই এর লেখার বাইরে পড়ুয়াদের নিজস্ব দক্ষতাকে ব্যবহারের জন্যই পাঠন পাঠনের এই পদ্ধতি স্কুলে চালু করা হচ্ছে। আইবি-র প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পর্যায় রয়েছে। আপাতত হেরিটেজ স্কুল এবং মডার্ন হাইস্কুল একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অর্থাৎ আইবি-র ডিপ্লোমা প্রোগ্রামকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আইবি-র প্রথম শর্তই সব কিছু নিজের মতো করে পড়ো এবং লেখো। বইয়ের সংজ্ঞার বাইরে কী ভাবে পড়ুয়ারা কোনও বিষয় উপস্থাপন করতে পারে তার উপরে জোর দেওয়া হয়। খাতায় নয়, গবেষণা ও নিজস্বতার মাধ্যমেই পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করা হয়। এমনকী, পড়ুয়ারা কী বিষয়ে গবেষণা করবে সেটাও বেছে নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা তাদের রয়েছে।
হেরিটেজ স্কুলের অধ্যক্ষা সীমা সাপ্রুর মতে, ‘‘পড়ুয়ারা বিষয়টি ভাল ভাবে নিচ্ছে। এই পদ্ধতিতে পড়ুয়ার জ্ঞানের মূল্যায়ন হয়। বইয়ের বাইরে, আশপাশের জ্ঞানের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়।’’ মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের অধ্যক্ষা দময়ম্তী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষা সব জায়গা থেকে গ্রহণ করতে হয়। পড়ুয়াদের জ্ঞানের ভিত্তিতে স্বনির্ভর হতে শেখায় আইবি পাঠ্যক্রম।’’ যদিও অন্য অসুবিধার কথা বললেন লা-মার্টিনিয়ারের সচিব সুপ্রিয় ধর। তাঁর মতে, ‘‘এ দেশে আইবি পাঠ্যক্রম এখনও জনপ্রিয় হয়নি।
ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সিবিএসসি দ্বাদশ, আইএসসি এবং রাজ্যের বোর্ডগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আইবি উত্তীর্ণকে উচ্চশিক্ষার জন্য ভিন দেশে যেতে হয়।’’
যদিও শিক্ষকদের একাংশের মতে, বিতর্ক থাকলেও শহরে এই পদ্ধতি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy