—প্রতীকী ছবি।
বছর পঞ্চাশের মনকি দেবী। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া খাবার জোগাড় করে স্বামীকে খাওয়াতে যাচ্ছিলেন। পথে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। খবর পেয়ে স্ত্রীকে দেখতে গেলেও পেশায় দিনমজুর স্বামী শেষকৃত্য করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা জোগাড় করে উঠতে পারেননি। তিনি জানেনও না, সমব্যথী প্রকল্পে দু’হাজার টাকা অনুদান পাওয়ার কথা। তাই ময়না-তদন্তের পরেও পুলিশ মর্গেই রয়ে গিয়েছে স্ত্রীর দেহ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে হাওড়া ব্রিজের কাছে জিআর রোডে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া খাবার নিতে এসেছিলেন উত্তরপাড়ার মনকি দেবী। উদ্দেশ্য ছিল, হাওড়া স্টেশন এলাকায় দিনমজুরের কাজ করা স্বামীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে সেই খাবার খাওয়ানো। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই প্রৌঢ়া যখন দু’হাতে খাবার নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন, তখন বঙ্কিম সেতু থেকে দ্রুত গতিতে নামতে থাকা ৬১ নম্বর রুটের একটি বাস তাঁকে ধাক্কা মারে। বাস ছুটে আসছে দেখে ঘটনাস্থলের কাছে থাকা পথচারী ও ভ্যানচালকেরা চিৎকার করে সাবধান করলেও মনকি দেবী তা শুনতে পাননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন ওই মহিলা। হাতে থাকা খাবার রাস্তায় পড়ে যায়। বিপদ বুঝে পালাতে গিয়ে বাসচালক ফের ওই মহিলাকে পিষে দিয়ে পালায়। তাঁর মাথার একপাশ থেঁতলে যায়। পরে বাসটিকে জিআর রোড ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা আটক করলেও চালক পালিয়ে যায়।
ঘটনাটি দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। মনকি দেবীকে দ্রুত তুলে নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতদেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামী লালবাহাদুর মাহাতো ও এক পালিত মেয়েকে নিয়ে উত্তরপাড়ার এক বস্তিতে থাকতেন মনকি দেবী। হতদরিদ্র পরিবার। লালবাহাদুর হাওড়ায় দিনমজুরের কাজ করলেও তিন জনের তাতে ভাল ভাবে চলত না। মনকি দেবী তাই প্রায়ই হাওড়ায় এসে জিআর রোডের কাছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া খাবার নিয়ে স্বামীকে খাইয়ে বাকিটা বাড়ি নিয়ে যেতেন। এ দিনও তা-ই করতে এসেছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনা সব শেষ করে দিল।
পুলিশ জানায়, লোক মারফত খবর পেয়ে হাওড়া থানায় ছুটে আসেন ওই প্রৌঢ়ার স্বামী ও শ্বশুর। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, কোথা থেকে টাকা পাবেন? কী করে দাহকাজ সারবেন?
মনকি দেবীর শ্বশুর কৃষ্ণ মাহাতো বলেন, ‘‘ওরা আমাদের সঙ্গে থাকত না। সকালে আমার ছোট মেয়েকে মনকি বলে এসেছিল, লালবাহাদুরের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু এমন যে ঘটবে, ভাবতে পারিনি। সব থেকে বড় কথা, যারা রোজ ঠিকমতো খেতে পায় না, তারা দাহকাজের টাকা জোগাড় করবে কী করে? টাকা জোগাড়ের চেষ্টা চলছে।’’
লালবাহাদুর বলেন, ‘‘পুলিশ বলেছে, উত্তরপাড়ার কাউন্সিলরের থেকে চিঠি লিখে আনলে তবে মৃতদেহ দেবে। শ্মশান থেকে টাকাও পাওয়া যাবে। আমি তো জানতাম না, কেউ মারা গেলে সরকার থেকে দাহকাজের জন্য টাকা পাওয়া যায়। তাই স্ত্রীর দেহ দাহ করতে পারিনি। রবিবার কাউন্সিলরের চিঠি ও টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy