Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Manoranjan Byapari and Runa Khatun

মিটল মনোরঞ্জন-রুনা দ্বন্দ্ব! বিধায়ক এবং যুবনেত্রীকে নিয়ে বৈঠকে একসঙ্গে চলার মন্ত্র তৃণমূলের

মনোরঞ্জন ব্যাপারীর একের পর এক বিস্ফোরক ফেসবুক পোস্ট এবং তার পাল্টা যুবনেত্রীর বিধায়ককে আক্রমণ ঘিরে শোরগোল তৃণমূলের অন্দরে। রবিবারই দলকে দু’দিন সময় দিয়ে মনোরঞ্জন হুঁশিয়ারি দেন বিধায়ক।

Manoranjan and Runa

মঙ্গলবার বৈঠক শেষে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী এবং যুবনেত্রী রুনা খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বলাগড় শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২০
Share: Save:

বলাগড়ের বিধায়ক এবং তৃণমূলের যুবনেত্রীর দ্বন্দ্ব মেটাতে দু’জনকে নিয়ে বৈঠকে করলেন হুগলির জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেই বৈঠক শেষে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী এবং দলের যুবনেত্রী তথা হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য রুনা খাতুন। তৃণমূলের দাবি, বৈঠক সফল। দু’জনকে এক সঙ্গে চলার ‘মন্ত্র’ দেওয়া হয়েছে। মনোরঞ্জন এবং রুনাকেও বৈঠকের পর হাসিমুখে দেখা গিয়েছে। এ বার কি ‘বিদ্রোহের’ সমাপ্তি ঘোষণা করলেন লেখোয়াড়-বিধায়ক মনোরঞ্জন? সেই জবাব অবশ্য সরাসরি মেলেনি। তবে তৃণমূলের দাবি, ‘‘সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়েছে।’’

শাসকদলের কোন্দলে গত কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত বলাগড়। যুবনেত্রীকে ‘ফুলন দেবী’ বলে আক্রমণ করেছিলেন বিধায়ক। মনোরঞ্জনের একের পর এক বিস্ফোরক ফেসবুক পোস্ট এবং তার পাল্টা যুবনেত্রীর বিধায়ককে আক্রমণ ঘিরে শোরগোল শুরু হয় তৃণমূলের অন্দরে। এর মধ্যে রবিবারই দলকে আর দু’দিন সময় দিয়ে মনোরঞ্জন হুঁশিয়ারি দেন সমস্যার সমাধান না হলে ‘আন্দোলন’ করবেন। এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ত্রিবেণীর একটি গেস্ট হাউসে বৈঠকে বসে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন অসীমা পাত্র, সভাপতি অরিন্দম গুঁইন, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অসীম মাঝি, মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী শিল্পী চট্টোপাধ্যায়-সহ হুগলি তৃণমূল নেতৃত্বের সেই আলোচনায় ডাকা হয়েছিল মনোরঞ্জন এবং রুনাকে। বৈঠক শেষে মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটাও বলাগড় বিধানসভা এলাকা। মানে আমার কেন্দ্র। দলীয় নির্দেশ ছিল তাই গতকালও জিরাটে গিয়েছি।’’ বস্তুত, অশান্তির সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে বেশ কিছু দিন মনোরঞ্জনকে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে যেতে বারণ করেছিল তৃণমূল। বৈঠকের পর রুনা বলেন, ‘‘আমরা বলাগড়ে যাঁরা তৃণমূলের নেতৃত্ব, তাঁদের লক্ষ্য একটাই— আগামী লোকসভা নির্বাচন। আমি রুনা খাতুন। আমি এক জন স্কুলের শিক্ষিকা হিসাবে যে পরিচিতি পেয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিচয় পেয়েছি তৃণমূলের জন্য।’’

আলোচনা কি ফলপ্রসূ হবে? জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, ‘‘পরিবার বড় হয়েছে। তাই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’’ বিধায়ক বনাম দলের যুবনেত্রীর লড়াইকে ‘ছেলেমানুষি’ বলে আখ্যা দেয় দল। নেতৃত্বের দাবি, মঙ্গলবারের বৈঠকে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে। বস্তুত, সমস্যার শুরু মনোরঞ্জনের বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে। তার মধ্যে রয়েছে বলাগড় ব্লক জুড়ে গঙ্গা থেকে বেআইনি ভাবে বালি ও মাটি তোলার অভিযোগ। সেই অভিযোগ যদিও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে উঠেছে। তবে নানা সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের বহু আশ্বাসেও যে সেই কারবারের রমরমা বন্ধ হয়নি। বিধায়ক মনোরঞ্জনেরও অভিযোগ এ নিয়েই। সমাজমাধ্যমে ব্লকের এক নেতাকে তিনি ‘বালি ও মাটির মাফিয়া’ বলে চিহ্নিত করেন তিনি। খামারগাছি ঘাটে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগানো গাড়ি নিয়ে হুমকি দিয়ে টাকা তুলছেন এক নেতা, এমন ছবিও তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেন বিধায়ক। তিনি জানান, দল চাইলে তিনি ওই ছবি দিতে তিনি প্রস্তুত। ওই দলীয় নেতাকে তিনি চিহ্নিত করেছেন ‘ফুলন দেবীর স্বামী’ হিসাবে। ‘ফুলন দেবী’ বলতে তিনি রুনাকে বুঝিয়েছিলেন। সেই রুনার স্কুলে চাকরি পাওয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও অভিযোগ তোলেন বিধায়ক। পাল্টা বিধায়ককে নানা অভিযোগে বিদ্ধ করেন রুনা।

পরস্পরকে এই আক্রমণের মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি বলাগড়ের বিধায়কের কার্যালয় ভাঙচুর হয়। তার আগে যুবনেত্রী রুনার বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করেন বিধায়ক। পরে সেই পোস্ট ডিলিট করে দেন। এই কাদা ছোড়াছুড়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে বিধায়কের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন দলেরই যুবনেত্রী। এত কিছুর পর অবশেষে হস্তক্ষেপ করল দল। বৈঠকের পর রুনা বলেন, ‘‘বলাগড় ব্লকে যাঁরা তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁদের সবাইকে দলীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। তাঁদের লক্ষ্য, দলকে আরও শক্তিশালী করা। দলের জন্যই তো আমি জেলা পরিষদের সদস্যা হয়েছি। তাই দলীয় অনুশাসন সবার আগে।’’ আর মনোরঞ্জনের কথায়, ‘‘জেলা নেতৃত্ব আমাদের নিয়ে বসেছিলেন। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা শিরধার্য।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে ধুলো থেকে তুলে সোনার মতো মূল্যবান বানিয়েছেন। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে থেকে সিঙ্গুর আন্দোলনে বাইরে থেকে ছিলাম। যত দিন বাঁচব, দিদির লড়াইয়ে থাকব। আমি মমতার অনুগামী।’’ তা হলে ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু কি আর লিখবেন না? এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য কিছুই বলেননি বিধায়ক-লেখক মনোরঞ্জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manoranjan Byapari Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE