গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
অমিত শাহ বলছেন, ২০১৯-এ বাংলা থেকে ২২-এর বেশি আসন চাই। কিন্তু দীর্ঘ দিন বাংলায় প্রান্তিক শক্তি হিসেবে রাজনীতি করে আসা সংগঠনের আড় ভাঙছে না কিছুতেই। দলের মিডিয়া সেলকে রাজ্য সদর দফতরে বৈঠকে ডেকেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক(সংগঠন) শিব প্রকাশ। ১৪টি জেলা কমিটি থেকে কেউ যোগই দিলেন না বৈঠকে। অবস্থা দেখে শিব প্রকাশ বেজায় অসন্তুষ্ট বলে বিজেপি সূত্রের খবর। বৈঠকেই তিনি তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ রাজ্য বিজেপির মিডিয়া সেল।
গত মাসের শেষের দিকে দু’দিনের জন্য বাংলা সফরে এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। একগুচ্ছ সাংগঠনিক বৈঠক করে গিয়েছিলেন সেই দু’দিনে। ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট কমিটি, সোশ্যাল মিডিয়া সেল, ব্লকে ব্লকে ছড়িয়ে থাকা বিস্তারকরা— সকলের সঙ্গেই দফায় দফায় বৈঠক করেন অমিত। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়ে যান তিনি। প্রচারাভিযানও তীব্র করার পরামর্শ দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তো বটেই, রাজ্যের প্রথাগত সংবাদমাধ্যমের কাছেও নিজেদের বক্তব্য তৎপরতার সঙ্গে পৌঁছে দিতে হবে— অনেকটা এমনই বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। সোশ্যাল মিডিয়ার লড়াইয়ে এ রাজ্যে তৃণমূলের মোকাবিলা এখনও ঠিকমতো করতে পারছে না বিজেপি— অমিত শাহের পর্যবেক্ষণ এই রকম ছিল বলেই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল। কিন্তু সর্বভারতী সভাপতির ‘ভোকাল টনিক’-ও যে রাজ্য বিজেপির সব অংশকে চাঙ্গা করে তুলতে পারেনি তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রবিবার মিডিয়া সেলের বৈঠকের চেহারা থেকেই।
বিজেপির মিডিয়া সেল ৩৭টি সাংগঠনিক জেলা কমিটিতে বিভক্ত। রবিবারের বৈঠকে প্রত্যেকটি জেলাকেই যোগ দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে হাজির হন ২৩টি জেলার প্রতিনিধিরা। বাকি ১৪টি জেলা অনুপস্থিত ছিল বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইস্তফার ইঙ্গিত সুরঞ্জনের, বললেন তিনি স্বাধিকারের পক্ষে
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশ ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন রাজ্য বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ সপ্তর্ষি চৌধুরী। ১৪টি জেলা থেকে কোনও প্রতিনিধি বৈঠকে হাজির হননি দেখে সপ্তর্ষির সামনেই শিব প্রকাশ অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে খবর। এই ভাবে যদি সংগঠন চলে, তা হলে তৃণমূলের মোকাবিলা করা আদৌ কতটা সম্ভব, তা নিয়ে শিব প্রকাশ সংশয় প্রকাশ করেন বলে জানা গিয়েছে। বার বার বলা সত্ত্বেও কেন আরও আগ্রাসী হতে পারছেন না কর্মী-সমর্থকেরা, তা নিয়ে শিব প্রকাশ বৈঠকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক কাঁথিতে বিজেপির যে সাংগঠনিক জেলা রয়েছে, সেখান থেকে কোনও প্রতিনিধি শিব প্রকাশের বৈঠকে যোগ দেননি বলে জানা গিয়েছে। বৈঠকে ছিল না মুর্শিদাবাদ জেলা, ছিল না পূর্ব বর্ধমানও। এই জেলাগুলি থেকে কেন কেউ বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না, তা রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়নি বলে খবর। শুধু কারণ জানানো হয়নি এমন নয়, বৈঠকে যে তাঁরা যোগ দেবেন না, অধিকাংশ অনুপস্থিত জেলা সেটুকুও আগে থেকে জানায়নি।
আরও পড়ুন: মোদীর সফর: আঁচ বাড়ালেন বক্সী-মানস
পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক দেবাঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে জেলা বিজেপির পর্যবেক্ষক অনল বিশ্বাস বললেন, ‘‘দেবাঞ্জনবাবু অসুস্থ। সেই কারণে বৈঠকে যেতে পারেননি।’’ আহ্বায়ক অসুস্থ হতেই পারেন। তাঁর বদলে অন্য কোনও প্রতিনিধিকে কি পাঠানো যেত না বৈঠকে? অনল বিশ্বাস বললেন, ‘‘আর কাউকে পাঠিয়ে লাভ কী? জেলার মিডিয়া সেল সম্পর্কে দেবাঞ্জনবাবু ছাড়া আর কেউ কিছু জানেন না। কিছু না জেনে বৈঠকে যাওয়া তো ঠিক নয়।’’
আরও পড়ুন: বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চান? টাকার হিসেবটা কিন্তু আগে বুঝে নেবেন
পূর্ব বর্ধমানের সাংগঠনিক পর্যবেক্ষকের কথা থেকেই স্পষ্ট, এ রাজ্যের জেলায় জেলায় বিজেপির সংগঠনের চেহারাটা ঠিক কী রকম। নানা রকমের কমিটি, নানা রকমের শাখা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সে সব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নামসর্বস্ব। এখনও পুরোদস্তুর সক্রিয় নয় সংগঠন। বিরোধী রাজনীতির পরিসরে রাজ্যে এই মুহূর্তে যে শূন্যতা রয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বাংলায় ভোট বাড়িয়েছে ঠিকই। কিন্তু দ্বিতীয় স্থান থেকে উঠে এসে তৃণমূলের সঙ্গে মুখোমুখি টক্কর নিতে হলে সংগঠনকে যে আরও অনেক আগ্রাসী হতে হবে, রবিবারের বৈঠকের চেহারা দেখে সে কথা আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা শিব প্রকাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy