Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কালো তারে বলে পাড়ার লোক

তাঁকে নিয়ে প্যারডি এমনই। এক সময় রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্যা। পরে তাঁরই সঙ্গে সম্পর্কে চরম অবনতি। ২৬ বছরের জীবনে কত রং অমিতা সেনের! লিখছেন আশিস পাঠক তাঁর সঙ্গে নিজের গানের প্রাণ বেঁধে রাখতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ৷তাঁকে ঘিরেই লিখেছিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, সুরের বাঁধনে’ গানটি৷অথচ একদিন তাঁকে দেওয়া নিজের গান রেকর্ড করার অনুমতি ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এমনকী যে ক’টি গান রেকর্ড করা হয়েছিল, নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন তার প্রকাশ ও বিক্রিও৷

চিত্রণ: বিমল দাস

চিত্রণ: বিমল দাস

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

তাঁর সঙ্গে নিজের গানের প্রাণ বেঁধে রাখতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ৷

তাঁকে ঘিরেই লিখেছিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, সুরের বাঁধনে’ গানটি৷

অথচ একদিন তাঁকে দেওয়া নিজের গান রেকর্ড করার অনুমতি ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এমনকী যে ক’টি গান রেকর্ড করা হয়েছিল, নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন তার প্রকাশ ও বিক্রিও৷

ছোট্টই জীবন তাঁর। মাত্র ছাব্বিশ বছরের৷ দু’অক্ষরের ছোট্ট ডাকনামটারই মতো যেন, খুকু৷ অথবা হয়তো রবীন্দ্রসঙ্গীতের আকাশে ছোট্ট এক তারার মতো, মেঘে ঢাকা তারা। ‘দুর্দৈব’-র কালো মেঘে৷

অমিত সম্ভাবনা আর কঠিন এক অসুখ নিয়ে এসেছিলেন অমিতা সেন। মৃত্যুও হয়েছিল সেই অসুখে। মাঝখানের সময়টা বিচিত্র ইতিহাস, হতাশা আর উৎসাহের ইতিহাস। কিন্তু সব কিছু নীরবে মেনে নেওয়ার মেয়ে ছিলেন না অমিতা। বেশ ডাকাবুকোই ছিলেন।

শান্তিনিকেতনে তাঁকে প্রথম দেখার স্মৃতি লিখেছেন বন্ধু রমা চক্রবর্তী, ‘‘খুকু কালো ছিল, মুখচোখ খোদাই করা মূর্তি যেন...কমনীয়তা না থাকলেও বুদ্ধির দীপ্তিতে সে ছিল শ্রীময়ী।...যখনকার কথা বলছি তখন তো আমরা ষোলো-সতেরো বছরের মেয়ে। খুকু তখনও ডানপিটে গোছের ছিল।

কাউকে বিশেষ তোয়াক্কা করত না, বিশেষ করে বাইরে থেকে আসা কলেজের ছাত্রদের বাচালতা দেখলে ফোঁস করে উঠত।’’

সেই ‘ফোঁস’ করা মেয়েকে নিয়ে, রবীন্দ্রনাথের গানের প্যারডি করে ছড়া লিখেছিলেন নিশিকান্ত রায়চৌধুরী, ‘‘কালনাগিনী আমি তারে বলি/ কালো তারে বলে পাড়ার লোক/ শুনেছিলাম বইগুদামের ঘরে/ কালো মেয়ের কালো মুখের ফোঁস।’’

ছোটখাটো চেহারার উচ্ছল মেয়েটিকে ভারি ভালবাসতেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তার গানের জন্য। গানের ক্লাসে একদিন না এলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন। লোক পাঠাতেন ডেকে আনতে।

এক বার বেশ কয়েক দিন দিনেন্দ্রনাথের গানের ক্লাসে অমিতা এলেন না। দিনেন্দ্রনাথ শুনলেন, তার নতুন বন্ধুর সঙ্গে নানা বিষয়ে তর্ক করতে করতে গানের ক্লাসের সময় পেরিয়ে যাওয়ার কথা খেয়াল করছে না সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রীটি।

দিনেন্দ্রনাথ তাঁকে বললেন, ‘‘বেশ তো, বন্ধুকে নিয়েই আয়, আমিও তর্কে যোগ দেব।’’

সত্যিই তাই করলেন। রমা চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘‘একদিন দেখা গেল, খুকু ও তার বন্ধু দু’জনকে দু’পাশে রেখে দিনদা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে বলতে চলেছেন।’’

নিজের ভাল না-লাগাটাকে স্পষ্ট জানান দিতে দ্বিধা করতেন না অমিতা। ভয় ছিল না সত্যি কথা বলাতেও।

এমনকী সেটা রবীন্দ্রনাথের সামনে হলেও। হয়তো এই সাহসের জন্যও রবীন্দ্রনাথ তাঁকে পছন্দ করতেন।

দিনেন্দ্রনাথ গান শেখাতেন উত্তরায়ণ-এ। একদিন সেখানে সব ছাত্রীই হাজির হয়েছেন। দিনেন্দ্রনাথ তখনও এসে পৌঁছননি।

গান শেখাচ্ছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, নিজে গাইতে গাইতে। কিছুটা গেয়ে ছাত্রীরা চুপ করে গেলেন। একই গান দিনেন্দ্রনাথ যে অন্য সুরে শিখিয়েছেন। কিন্তু ‘গুরুদেব’কে সে কথা বলবে কে?

বলে দিলেন অমিতা।

শুনে রবীন্দ্রনাথ মজা করে বলেছিলেন, তাঁর পাঁঠা তিনি ল্যাজায় কাটেন কি মুড়োয় তাতে কার কী?

দিনেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে নিজের গানের সুরের ভাণ্ডারী হিসেবে রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতেন ‘খুকু’র ওপরে। ২৬ জুলাই ১৯৩৫-এ তাঁকে লিখেছেন, ‘তোর চিঠি পড়ে মনে পড়ে গেল দিনু তার সকল ছাত্রের মধ্যে তোকেই সকলের চেয়ে স্নেহ করত— সেই স্নেহের দান তুই অজস্র পেয়েছিলি— তোর জীবনে তার সঞ্চয় ফুরোবে না। যা পেয়েছিস তা রক্ষা করার ভার এখন তোদেরই পরে রইল।’’

আর একটি শংসাপত্রে লিখেছেন, ‘‘আমার রচিত যত গান অমিতা তাঁহার (দিনেন্দ্রনাথের) এবং আমার নিকট হইতে সংগ্রহ করিতে পারিয়াছে এমন দ্বিতীয় আর কেহ পারে নাই এ কথা নিশ্চিত বলা যায়। তাহার সাহায্যে আমার গানগুলি বহু পরিমাণে রক্ষা পাইবে ও বিস্তার লাভ করিবে এই আমার আশা ও আনন্দের বিষয় রহিল। বিস্মৃতি ও অনবধানতাবশত তাহার দ্বারা আমার গানগুলির বিশুদ্ধতা ক্রমশ নষ্ট হইবার আশঙ্কা নাই তাহারও যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।’’

রবীন্দ্রনাথের গানের দ্বিতীয় ভাণ্ডারী হয়েই সারা জীবন শান্তিনিকেতনেই কাটিয়ে দিতে চাননি অমিতা সেন।

গান ভাল লাগত তাঁর, কিন্তু নাচ আর অভিনয় ভাল লাগত না। সে কথা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকে।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথ জানতেন, গান খুকুর শুধু ‘কণ্ঠের কুশলতা’ নয়, ‘অন্তরের সম্পদ’। তাই বার বার তাঁকে, তাঁর অনিচ্ছা মেনে নিয়েই, গান গাওয়াতে চেয়েছেন।

২৭ নভেম্বর ১৯৩৫ এক ছোট্ট চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘গোটাতিনেক নতুন গান হয়েছে, বাকি সব পুরনো। তোকে কিছু সাজতে হবে না, কিন্তু গাইতে হবে। আশ্রমে আজকাল সুকণ্ঠের একান্ত অভাব।’’

কিন্তু অমিতা মেধাবী, উজ্জ্বল ছাত্রী। কলকাতায় উচ্চতর পড়াশোনা করে নানা ডিগ্রির পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেতে চান। রবীন্দ্রনাথ চিরকালই ঔপনিবেশিক ডিগ্রিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে।

প্রচ্ছন্ন এই টানাপড়েন বোঝা যায় অমিতাকে লেখা রবীন্দ্রনাথের ৬ জানুয়ারি ১৯৩৭-এর চিঠি পড়লে, ‘‘আমরা একটি নতুন গান-শিক্ষক পেয়েছি— গোপেশ্বরের ভাইপো (অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়)— বয়সে অত্যন্ত কাঁচা কিন্তু বিদ্যায় পাক ধরেচে। একবার কোনও ছুটিতে এসে তার গান বাজনা শুনলে হয়তো তোর লোভ হবে। পরীক্ষার প্রতি বীতরাগ হওয়াও অসম্ভব নয়।’

এ ডাকে তেমন সাড়া দেননি অমিতা। রবীন্দ্রনাথও হাল ছাড়েননি।

তার বছরখানেক পরে শান্তিনিকেতনে অধ্যাপনার জন্য ডাক দিলেন, লিখলেন, ‘‘তোর শক্তি আছে, অনুরাগ আছে, এবং কণ্ঠ আছে। সেইজন্যে আমার এই কাজে তোকে পেতে অনেক দিন থেকে ইচ্ছা করেছি। ভয় ছিল তোর দুরাশা হয়তো অন্য কোনও পথে ধাবিত। যদি তা না হয় এবং যদি আমার প্রতি থাকে তোর ভক্তি এবং আশ্রমের প্রতি নিষ্ঠা, তবে অন্য কর্মজাল থেকে নিষ্কৃতি নিয়ে এখানে চলে আয়।’

নিষ্কৃতি অবশ্য পাননি অমিতা, চানওনি।

শম্ভুনাথ গঙ্গোপাধ্যায় নামে যে বন্ধুকে ভালবাসতেন তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরিশ্রম করতেন।

তার যখন যক্ষ্মা হল, চিকিৎসার জন্য বীণাপাণি পর্দা হাইস্কুলের সামান্য বেতনে খরচে কুলোত না। ঘর ভাড়া থেকে ওষুধ, পথ্য সব ব্যবস্থা করার জন্য অমিতা তখন বিক্রি করে দিলেন নিজের সব গয়না, এমনকী পরীক্ষায় ভাল ফল করে পাওয়া সোনার পদকগুলিও।

এক দিন বিকেলে বন্ধু শম্ভুনাথকে দেখতে গিয়ে দেখলেন ঘর তালাবন্ধ। বাড়িওয়ালা জানালেন, কোনও এক অধ্যাপকের মেয়ে তাঁর স্বাস্থ্য ফেরাতে তাঁকে নিয়ে গিয়েছে পাহাড়ে, অমিতা যেন বাড়িভাড়া মিটিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে চলে যান। অথচ এই শম্ভুনাথের জন্যই অমিতা রবীন্দ্রনাথকে শর্ত দিয়েছিলেন, সেই বন্ধুটিকে বিশ্বভারতীতে চাকরি দিলে তবেই তাঁর প্রস্তাবে সায় দেবেন! রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিক ভাবে রাজিও হয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাপারটা সঙ্গত কারণেই ছেড়ে দিয়েছিলেন আশ্রমের কর্তৃপক্ষের হাতে।

আর তার পরেই চরম ছন্দপতন। সঙ্গীতভবনের কাজ ছেড়ে অমিতা ফিরে গিয়েছিলেন কলকাতায়।

ছুটি নিয়েই গিয়েছিলেন, কিন্তু আর শান্তিনিকেতনে ফেরেননি। দীর্ঘ এক চিঠিতে নিজের ক্ষোভ জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। সে চিঠি অবশ্য পাওয়া যায় না।

তবে রবীন্দ্রনাথ তার উত্তরে যা লিখেছিলেন তা থেকেই অনুমান করা যায় সম্পর্কের অবনতি কত দূর হয়েছিল।

সেই চিঠিতে এত দিনের ‘তুই’ হয়ে উঠল ‘তুমি’। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, ‘‘তোমার সঙ্গে আমার এই শেষ ব্যবহার বলেই শরীরের ক্লান্তি এবং অস্বাস্থ্য সত্ত্বেও কিছু স্পষ্ট করে লিখতে বসেছি।’’

অমিতার চিঠির অভিযোগগুলি স্পষ্টত জানা যায় না, রবীন্দ্রনাথের জবাব থেকে অনুমান করা যায়। ‘রিহর্সলের অশুচিকর ও দুঃখকর আবেষ্টন’ আর সেই বন্ধুটিকে অধ্যাপনার কাজ না দেওয়া। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘‘তোমার অভিযোগগুলি বিশ্লেষণ করে দেখলে দুটি সংখ্যায় এসে দাঁড়ায়। ১ম রিহর্সলের অশুচিকর ও দুঃখকর আবেষ্টনে তোমাকে ক্লিষ্ট করা। এ সম্বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনও আদেশ ছিল না। আমি বৌমাকে একাধিকবার জানিয়েছিলুম তুমি এতে সম্মত হবে না, কিন্তু যখন এতটা অবনতি স্বীকার করতে সম্মত হোলে দেখা গেল তখন সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় আমি অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলুম।...২য় তোমার বন্ধুকে আশ্রমে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত করবার জন্যে তুমি আমাকে অনুরোধ করেছিলে। আমি তদনুসারে আশ্রমের কর্তৃপক্ষদের কাছে আমার প্রস্তাব জানিয়েছিলুম। কাজ খালি ছিল না তবু তাঁরা সম্মত হয়েছিলেন। এটা নিয়ম, এতে মানী লোকের মানহানি হয় না। ভাইসরয়কে নিযুক্ত করবার সময়েও ক্যাবিনেটে আলোচনা হয়ে থাকে। ব্যাপারটাকে যদি অপরাধজনক মনে করে থাকো সে অপরাধ তোমার একলার।’’

২৭ মে ১৯৩৯-এর এই চিঠির তর্ক-বিতর্ক থেকে তখন একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছেন অমিতা।

এর ছ’মাসের মধ্যেই কঠিন অসুখে তখনকার কারমাইকেল, এখনকার আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সেটাই তাঁর জীবনের শেষ বছর। এর মধ্যে ছটি-র মতো রেকর্ড তৈরি হয়েছে অমিতার কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতের। কিন্তু প্রকাশিত হয়নি।

খোলা গলায় একদিন শান্তিনিকেতনের পথে গান গেয়ে বেড়াতে যে মেয়েটি, রবীন্দ্রনাথের অনেক গান প্রথম গলায় তুলে নেওয়ার জন্য ডাক পড়ত যাঁর, তাঁরই রেকর্ড আটকে রাখা হয়েছিল!

‘অন্য কর্মজাল থেকে নিষ্কৃতি নিয়ে’ পুরোপুরি রবীন্দ্রনাথের গানে নিজেকে নিবেদন করার ডাক অমিতাকে একদিন দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

সেই রবীন্দ্রনাথই ‘খুকু’র কাছ থেকে ‘নিষ্কৃতি’ চাইলেন এ বার। ‘খুকু’কে শেষ চিঠি লেখার মাসখানেক পরে ২৪ জুন ১৯৩৯ কিশোরীমোহন সাঁতরাকে লিখলেন, ‘‘খুকুর কথা তোমাকে বলিনি। তার সঙ্গে আমার একটি শেষ পত্র বিনিময় হয়েছে। তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করতে পারি কিন্তু তার ছলনা আমার কাছে অতিশয় ঘৃণ্য হয়ে প্রকাশ পেয়েছে। আমি তাকে স্নেহ করেছিলুম বলে তার স্বভাবের অসরলতা বুঝতে পারিনি। বৌমাকেও সে ভুলিয়েছিল। তিনিও বিস্মিত হয়েছেন। যাক্, নিষ্কৃতি পেয়েছি।’’

কিন্তু একটা কাঁটা, মনের মধ্যে, কোথাও কি ছিল? হয়তো।

‘নিষ্কৃতি’ নেওয়ার পরেও তো হাসপাতালের ঠিকানায় ‘খুকু’কে চিঠি লিখে তার সেরে ওঠা চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।

শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে ডেকে বলেছিলেন, ‘‘খুকু এই চকোলেট খেতে খুব ভালবাসত। ও তো এমনিও বাঁচবে না, তুমি নিজে গিয়ে ওকে এই চকোলেট খাইয়ো।’’

শুধু চকোলেট নয়, এত দিন আটকে রাখা রেকর্ডও ‘ক্ষমা’ করে মুক্ত করে দিলেন।

২৮ জানুয়ারি ১৯৪০ প্রফুল্লচন্দ্র মহলানবিশকে লিখলেন, ‘‘খুকু আজ কারমাইকেল হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়। তাকে আমি ক্ষমা করলুম। তার সেই ছয়টা রেকর্ড মুক্ত করে দিস।’’

তত দিনে ‘খুকু’ নিজেও বুঝে গিয়েছেন যে তিনি আর বাঁচবেন না। টিবি ভেবে ভুল চিকিৎসা চলছিল তাঁর, নেফ্রাইটিস যখন ধরা পড়ল তখন দেরি হয়ে গিয়েছে।

যে ঘরে জন্মেছিলেন সেই ঘরেই মৃত্যু হোক, চেয়েছিলেন অমিতা। সেইমতো নিয়ে যাওয়া হল ঢাকায়।

শেষ চেষ্টা হিসেবে শুরু করা হল কবিরাজি চিকিৎসা। কিন্তু কবিরাজমশাইও একদিন চরম নিদান দিলেন। সামনেই তখন তার ছাব্বিশ বছরের জন্মদিন।

জেঠিমা জিজ্ঞেস করলেন,

‘কী খেতে ইচ্ছে করে খুকু?’

খুকু বলল, ‘‘দেবে আমায় খেতে—যা চাইব? আমার খেতে ইচ্ছে পোলাও, ডিমের ডালনা, মাছ এই সব।’’

শেষ জন্মদিনের দিন সাজিয়ে দেওয়া হল সব। কালো মেয়েটির পরনে তখন ঢাকাই শাড়ি, কপালে চন্দনের ফোঁটা...।

পরের দিনই কোমায় চলে গেলেন অমিতা সেন। ইতিহাস ঢেকে রাখল তাঁর নাম। কালো মেঘে, নাকি ‘রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে’?

ঋণ: অমিতা (সম্পাদনা ইলিনা সেন), বুলবুলি (পার্থ বসু), রবীন্দ্রবীক্ষা

(সংকলন ১৮)

অন্য বিষয়গুলি:

Amita sen write-up
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy