বিয়ের পর অনুষ্কার করা প্রথম টুইট
এপ্রিল, ২০১৫। ইডেনের ড্রেসিংরুমের সামনে বসে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তখনই এক পাগল প্রেমিক বিরাট কোহালি। তারকা হয়েও প্রকাশ্যে বিয়ের আগেই বলে দিলেন, ‘‘আমি এই সম্পর্কে বিশ্বাস করি।’’ অনুষ্কা পাশে থাকলেই তিনি নিশ্চিন্ত, সুখী। অনুষ্কা বললে তিনি চুপচাপ শোনেন। কথা বলতে বলতে প্রতিবেদকের মনে হয়েছিল, বিরুষ্কা তখনই ‘হ্যাপিলি ম্যারেড’! তুলে দেওয়া হল, সেই সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ...
• অনুই প্রেরণা
আমার সাফল্যের কারণ ও-ই। অস্ট্রেলিয়ায় যে চারটি সেঞ্চুরি আমি করতে পেরেছিলাম, তার আসল প্রেরণা ছিল অনুষ্কা। সেই সিরিজটায় প্রত্যেকটা টেস্টে ও ছিল আমার সঙ্গে। আমি ভাল খেলছিলাম মাঠে আর মাঠের বাইরে থেকে ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিল। সেই সিরিজটায় আমি মনের দিক থেকে খুব খুশি থাকতাম। অন্য কিছু নিয়ে ভাবতাম না। সেটা সম্ভব হযেছিল অনুষ্কা সঙ্গে ছিল বলেই। ও-ই আমাকে সব সময় এমন হাসিখুশি রেখেছিল। অস্ট্রেলিয়ায় যখনই মাঠে নামতাম, নিজেকে দারুণ ফুরফুরে লাগত। কোনও ‘স্ট্রেস’ অনুভব করিনি, কারণ মাঠের বাইরে অনুষ্কার সঙ্গে দারুণ সুখী ছিলাম।
• পবিত্র এক সম্পর্ক
একটাই কথা বলব অনুষ্কার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিয়ে। এটা আমার জীবনের পবিত্রতম সম্পর্ক। এর চেয়ে ‘স্পেশ্যাল’ আমার কাছে আর কিছুই নেই। আমার জীবনে অনুষ্কার ভূমিকা শুধুই ইতিবাচক। কখনও আমার খারাপ কিছু ঘটতেই পারে না ও পাশে থাকলে।
• প্রেমিকার অপমানে ক্ষুব্ধ
অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হারার পরে যেটা হয়েছিল, সেটা মেনে নিতে পারিনি। মাঠে খেললাম আমি, আমাদের টিম। আমরা হারলে অনুষ্কা কী করবে? ভাবুন তো, ওর ছবিগুলো যখন পোড়ানো হচ্ছিল, ওর বাড়ির লোকজনের কী মনে হতে পারে? যারা এই ঘৃণ্য কাজটা করছিল, তাদের বান্ধবী বা স্ত্রীকে যদি এ রকম অন্যায় ভাবে আক্রমণ করা হতো, কেমন লাগত? আমি কোনও ডামি নই। অনুষ্কা কোনও ডামি নয়। আমরা রক্তমাংসের মানুষ। আমার প্রেমিকাকে কেউ আক্রমণ করলে গায়ে তো লাগবেই। জীবনে কিছু কিছু ঘটনা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। অনেকে বলবেন, অনুষ্কার ছবি পোড়ানো হয়তো সে রকম একটি ঘটনা। পাত্তা দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমি চুপচাপ বসে এ সব সহ্য করতে পারব না।
আত্মীয়দের সঙ্গে নব দম্পতি
• বিয়ের আগেই অনুষ্কার সফর
ইংল্যান্ডে প্রথম যখন ওকে নিয়ে যাই, খুব হইচই হল। অনুষ্কা খুব দুঃখ পেয়েছিল। আমরা দু’জনেও বেশ চমকে উঠেছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম, আমি ঠিক কাজই করছি। আমি একটা সিরিয়াস সম্পর্কে রয়েছি, তা হলে এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কী আছে? দিনের মধ্যে ছ’ঘণ্টা থাকে ক্রিকেট। বাকি আঠেরো ঘণ্টা হয়তো আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরও ক্রিকেটের বাইরে জীবন আছে। সেই কারণে অনুষ্কাকে সফরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যে প্রশ্ন উঠছিল, সেটাকে পাত্তা দিইনি। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে আমি রবি ভাইকে (রবি শাস্ত্রী) জানাই, অনুষ্কাকে নিয়ে যেতে চাই। বোর্ডের সচিবের সঙ্গে কথা বলে তাঁর অনুমতি নিয়ে অনুষ্কাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। ইংল্যান্ডে অনুষ্কার যাওয়া নিয়ে নানা কথা উঠেছিল। ওখানে আমি রানও পাইনি। তাই আমি চেয়েছিলাম আর একটা সফরে ওকে নিয়ে যেতে। ওর সামনে ভাল খেলতে। সেটা অস্ট্রেলিয়ায় করতে পেরেছিলাম। আমরাই জানি, কী সব ঝড়-ঝাপটার মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। তাই অস্ট্রেলিয়ার চারটে সেঞ্চুরি খুবই আনন্দ দিয়েছিল।
• যৌথ বিবৃতি
যখনই মাঠে আমি ভাল কিছু করেছি আর গ্যালারি থেকে ও হাততালি দিয়েছে, আমার মন ভরে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় আমি সেঞ্চুরি করছিলাম আর ও হাততালি দিচ্ছিল। আমার কাছে দারুণ স্পেশ্যাল সেই মুহূর্তগুলো। অনুষ্কার উপস্থিতি আমার জন্য কতটা প্রেরণামূলক হতে পারে, সেটা বুঝতে পারছিলাম। আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ায় আমরা একটা যৌথ বিবৃতি পেশ করতে পেরেছিলাম যে, দু’জনে এক হলে ভাল কিছুই ঘটে! যারা বলছিল, ও এসেছে বলে আমি খেলতে পারিনি, তাদের জন্য এটা একটা যোগ্য জবাব ছিল।
জমজমাট বিয়ের সাজ
অনুষ্কা পরেছেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের ডিজাইন করা পেল পিঙ্ক ব্রাইডাল লেহঙ্গা, যার উপর রেনেসাঁ এমব্রয়ডারির কাজ। গয়নাও সব্যসাচীর হেরিটেজ কালেকশনের। তাতে আনকাট হিরে, ফ্যাকাসে গোলাপিরঙা স্পাইনেল ও জাপানের কালচার্ড মুক্তোর সম্ভার। বিরাট পরেছেন ওই ডিজাইনারের আইভরিরঙা র-সিল্কের শেরওয়ানি, যার উপর বেনারসির কাজ। সঙ্গে সিগনেচার হাউজ বোতাম।
• দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ
আমি অনুষ্কাকে বিশ্বাস করি। আমাদের সম্পর্কে বিশ্বাস রাখি। প্রেমিকাকে নিয়ে আমার এই অনুভূতিকে যাঁরা সম্মান করার, ঠিকই করেন। আমি সততা নিয়ে যদি কিছু বলি, সেটা লোকে বিশ্বাস করবে না কেন? আমি তো বাচ্চা নই! জেনেশুনে একটা সম্পর্কে এসেছি, যে-সম্পর্ক আমার জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। আমার দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ অনুষ্কা। ক্রিকেট মাঠে আমি কখনও ফাঁকি দিইনি। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য আমি জীবনও দিয়ে দিতে পারি। একই সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সিরিয়াস থাকাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
• শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন থেকে প্রেম
সম্পর্ক এক দিনে তৈরি হয় না। আমি ওকে দেখেছি, ও আমাকে দেখেছে। তার পরে দু’জনে একটা সম্পর্কে এসেছি। তার পরে আমরা দু’জনে দু’জনের কাছে ‘স্পেশ্যাল’ হয়েছি। আর আমার জীবনে যে ‘স্পেশ্যাল’, তাকে আমি আগলে রাখতে প্রস্তুত। এ নিয়ে কোনও দ্বিধা বা সংশয়ই নেই আমার মনে।
• ওম শান্তি ওম
অনুষ্কা আমার জীবনে ‘মোটিভেশন’। ও-ই একমাত্র ব্যক্তি যে, আমাকে ধীর-স্থির, শান্ত রাখতে পারে। আমার জীবনে খুব কম মানুষই আছে, যাদের কথা আমি চুপচাপ, শান্ত হয়ে বসে শুনতে পারি। অনুষ্কা তাদের মধ্যে একজন। আমি কোনও ভুল করলে অনুষ্কাই সেটা ধরিয়ে দেয়। ও পাশে থাকলে আমি খুব আশ্বস্ত বোধ করি। বড় ‘ইমোশনাল সাপোর্ট’ হিসেবে অনুষ্কা রয়েছে আমার জীবনে। আমি জানি, যা-ই ঘটুক না কেন, অনুষ্কা আমার পাশে দাঁড়াবে। এই অনুভূতিটা যে আমার কাছে কত বড় ব্যাপার, বলে বোঝাতে পারব না। আমার জীবনে অনুষ্কার উপস্থিতি আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। ও আমার জীবনে আসার পরে শুধু ভাল ঘটনাই ঘটেছে।
বিরুষ্কার রিসেপশনের কার্ড
স্বপ্নের বিয়ের রিসেপশন হবে দিল্লি এবং মুম্বই, দু’জায়গাতেই। দিল্লিতে এ মাসের ২১ তারিখ এবং মুম্বইয়ে সম্ভবত ২৬ তারিখ। দিল্লির রিসেপশন হবে তাজ ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভের দরবার হলে এবং মুম্বইয়ের রিসেপশন এক পাঁচতারা হোটেলে। সেখানেই নিমন্ত্রিত ক্রিকেট ও বলিউডের তারকারা।
বিয়ের পর বিরাট-অনুষ্কা কোথায় থাকবেন, তা নিয়েও চলছে জল্পনা।
শোনা যাচ্ছে, ইন্ডিয়ান স্কিপার নাকি ওরলিতে কিনেছেন তাঁর স্বপ্নের সি-ফেসিং অ্যাপার্টমেন্ট, ৩৪ কোটি টাকা দিয়ে। ৩৪ তলায় বিরুষ্কার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টটি আয়তনে সাত হাজার স্ক্যোয়ার ফিটেরও বেশি, থাকবে পাঁচটি বেডরুম। আগামী বছর নাকি অ্যাপার্টমেন্ট হাতে পাবেন তাঁরা। এই অ্যাপার্টমেন্টেরই ২৯ তলায় রয়েছে যুবরাজ সিংহ-হেজেল কিচের ফ্ল্যাট।
• হ্যাপি ফ্যামিলি
জীবনে একটা সময় আসে, যখন নিজেকে খুব নিশ্চিন্ত মনে হয়। আমার জীবনে সেটা এসেছে অনুষ্কা আসার পরেই। ওর সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকে নিজেকে খুব ‘স্টেব্ল’ মনে হচ্ছে। সিরিয়াস সম্পর্ক হওয়ার পরে আমি ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক হয়েছি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের অধিনায়ক হয়েছি। জীবন সঙ্কেত দেয়, আপনি ঠিক পথে এগোচ্ছেন কি না। পুরোটাই তো একটা যাত্রাপথ। আর অনুষ্কা আমার জীবনে আসার পর থেকে একটাই সঙ্কেত পেয়েছি— আমি ঠিক পথে এগোচ্ছি। যখন আমি ক্রিকেট খেলি না, অনুষ্কার সঙ্গে সময় কাটাই, নিজের জীবনটা খুব শান্তিপূর্ণ, নিশ্চিন্ত মনে হয়।
• প্রিয় আড্ডার বিষয়
অনুষ্কার সঙ্গে যে কোনও রকম ভাবেই সময় কাটাতে আমার ভাল লাগে। খুব ছোটখাটো জিনিসগুলোতেও আমরা দারুণ খুশি থাকতে পারি। হয়তো দু’জনে কোথাও হাঁটতে বেরোলাম। বা কফি খেতে গেলাম। সব সময় যে দারুণ ঝকমকে কিছু করতে হবে, এমন তো নয়। কাউকে দেখানোর কোনও ব্যাপার নেই। আমরা নিজেদের মতো করে সুখী থাকতে চাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy