গল্প সেই মেয়েটির। নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসার টানতে টানতে অফিস যায় যে। সেই উদ্বাস্তু মানুষটিরও গল্প, যে নিম্ন মধ্যবিত্ত দু’টি সংসারকে বাঁচাতে নতুন করে একান্নবর্তী পরিবারকে (এক অর্থে ‘কমিউন’ও বটে) ফিরিয়ে আনতে চায়। তরুণ মজুমদারের ছবি মানেই সেই সব রবীন্দ্রসংগীতের গল্প, এখনও যারা আমাদের অঙ্গে অঙ্গে বাজায় বাঁশি।
তরুণবাবুর ছবি মানেই ভালবাসার ছোঁয়া। বসন্তের হাল্কা বাতাসের মতো। ঠিক যেমনটা হয়েছে ‘পলাতক’, ‘ঠগিনী’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘দাদার কীর্তি’ বা হাল আমলের ‘আলো’-তেও। তরুণবাবু সাধারণত বাংলা সাহিত্য থেকে গল্প বেছে থাকেন। যে গল্পে থাকে চুলোর ধোঁয়া ওঠা গ্রামের গন্ধ, শাপলা-শালুকে ভরা পুকুর, গলা ছেড়ে গান, মিষ্টি প্রেম আর একান্নবর্তী পরিবারকে ঘিরে আরও একান্নবর্তী হয়ে ওঠা। প্রচেত গুপ্তের গল্প থেকে তৈরি ‘ভালবাসার বাড়ি’তে এই সব উপাদানই আছে। পটভূমিটাই যা গ্রাম নয়, কলকাতার কাছে কোন্নগর। নাম দেখানো শুরু হতেই পরদায় গেয়ে ওঠেন ঋতুপর্ণা (বল্লরী): ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়... তখন শুধু কলকাতা বা কোন্নগর কেন, সদ্য বসন্তের হাওয়ায় ভাসতে থাকা গোটা বাংলারই হৃদয় ভরে যায়।
এই ভাবেই পরের সওয়া দু’ঘণ্টা ধরে একটি ভাল লাগার গল্প হয়ে উঠতে চেষ্টা করে ‘ভালবাসার বাড়ি’। স্কুলে পড়া বোন, চটকলে চাকরি করা বাবা, ঘরোয়া মাকে নিয়ে বল্লরীর পরিবার। এক দিন চটকলে তালা পড়ে। পরিবার নামে বেঁচে থাকার যুদ্ধে। বল্লরী খুলল গানের স্কুল। বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করল বল্লরীর বাবা ভবতোষের সহকর্মী জনার্দন। সে এবং ভবতোষ মিলে খুলল দোকান। দেখতে লাগল, নতুন এক একান্নবর্তী পরিবারের স্বপ্ন।
বেদখল জমিতে তৈরি সেই দোকানের সূত্রে এল বল্লরীর বিয়ের সম্বন্ধ। তত দিনে সে চাকরি পেয়েছে ট্র্যাভেল এজেন্সিতে। পরিচয় হয়েছে ছটফটে তরুণ কল্যাণের সঙ্গে। কল্যাণ-বল্লরী কাছাকাছি আসে। তবে বিয়ে ভেঙে দিতে বলে বল্লরী। তার পর... বাকিটা তোলা থাক রুপোলি পরদার জন্য।
ভালবাসার বাড়ি
পরিচালনা: তরুণ মজুমদার
অভিনয়: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত,
দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তী
৪.৫/১০
‘ভালবাসার বাড়ি’ শুরু হয়েছিল বিয়ে বাড়ি দিয়ে। মধ্যেটা ফ্ল্যাশব্যাক। তার পর আবার বিয়েবাড়িতেই ফিরে আসা। মাঝের গল্পটা তরুণবাবু বুনতে চেয়েছেন তাঁর ভালবাসা আর রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে। কিন্তু কোথাও যেন তাল কেটে যায় অনেক প্লটের ধাক্কায়। কখনও গল্প ‘কমিউন’-এর কথা বলে। কখনও এসে জোটে পাড়ার উঠতি মস্তান। কখনও স্মৃতিভ্রংশ মা এবং নিরলস তার সেবা করে যাওয়া বৌদি। মেকআপেও ধরা পড়েছে খামতি। বিশেষ করে শ্রীলা মজুমদারের ক্ষেত্রে। ছবির অনেক দৃশ্যই ঠিক মতো নির্মাণ করা হয়নি। এমনকী ক্লাইম্যাক্সও নয়। আর এত কিছুর মধ্যে দিশা হারায় ছবি।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (বল্লরী), চৈতালী দত্তবর্মন (বল্লরীর বন্ধু চন্দ্রা), প্রতীক সেন (কল্যাণ) ছবির মূল তিন চরিত্র। প্রতীকের মেলানকলিক মুখ মনে রাখার মতো। ঋতুপর্ণাও মন্দ নন। তবে যে দু’জন ছবিটাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, তাঁরা হলেন বল্লরীর বাবার ভূমিকায় দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর বন্ধু জনার্দনের ভূমিকায় বিভাস চক্রবর্তী।
রবীন্দ্রসংগীত শোনার জন্য দেখতে যাওয়া যায় ‘ভালবাসার বাড়ি’। বাকিটা মনের মতো না-ই যদি হয়, ক্ষতি কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy