বিদ্যা বালন।
বলা হতো, বিদ্যা বালন এমন পরশপাথর, যাঁর স্পর্শে সব কিছুই সোনা হয়ে যায়। যে ছবিই তিনি করতেন, হিট হতো। কিন্তু সময় এক রকম যায় না। বিদ্যাকেও দেখতে হয়েছে ব্যর্থতার মুখ। তাঁর অভিনীত শেষ কয়েকটি ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ‘ববি জাসুস’, ‘কহানি টু’ বা ‘বেগমজান’-এ কাজ করেনি বিদ্যার জাদু। সেই বিদ্যাই ফিরছেন ‘তুমহারি সুলু’ নিয়ে।
প্র: ইন্ডাস্ট্রিতে বারো বছর কেটে গেল। অভিনেত্রী হিসেবে নিজের মধ্যে পরিবর্তন অনুভব করেন?
উ: প্রথম প্রথম কাজের খিদে আর তৃষ্ণা দুটোই ছিল। এখনও আছে। তবে এখন ভেবেচিন্তে ছবি সাইন করি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি করেছি, যা করব তা যেন আমাকে আনন্দ দেয়। লাভ-লোকসানের কথা ভেবে কাজ করতে চাই না।
প্র: ‘তুমহারি সুলু’র মতো ছবি করার পিছনের কারণটা কী?
উ: আমার বোনের বর কেদারের জন্য ‘তুমহারি সুলু’র পরিচালক সুরেশ ত্রিবেণী অ্যাড ফিল্ম বানিয়েছিলেন। কেদার সুরেশের খুব প্রশংসা করেন। আমি কেদারের ক্রিয়েটিভ সাইড খুব পছন্দ করি। কেদারই বলেছিল, সুরেশের সঙ্গে কথা বলে ওঁর ভাবনাটা শুনতে। এর আগে আমার পরিবারের কেউ কাজের বিষয়ে কোনও কথা বলেনি। সুরেশের সঙ্গে কথা বলে আমার দারুণ লেগেছিল। একজন গৃহিণী রেডিয়োতে মধ্যরাতে টক শো চালায়। দিনের বেলায় সে সাধারণ গৃহিণী, কিন্তু রাতে হয়ে ওঠে লাস্যময়ী রেডিও জকি। সুরেশ যে ভাবে আমাকে ছবিটা বর্ণনা করেছিলেন, সেটা আমার ইন্টারেস্টিং লেগেছিল।
আরও পড়ুন: ‘ঋদ্ধি আমার…’, সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন সুরঙ্গনা
প্র: সমাজ অনেক ক্ষেত্রে গৃহবধূদের অবজ্ঞা করে। অনেক গৃহিণীও হীনমন্যতায় ভোগেন। আপনার কি মনে হয় ধারণাটা বদলানো উচিত?
উ: নিঃসন্দেহে। অনেকে বিয়ের পর আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন, আমি কী ভাবে ঘর আর কাজ সামলাই? আমার কাছে অপশন আছে সেটা করার। অনেক গৃহিণীর কাছে তা থাকে না। বাড়িতে কাজ না করলেও কী হচ্ছে, তার খবর রাখি। প্রত্যেক স্বামীর উচিত তাঁদের বউদের পুরোপুরি সাপোর্ট করা। যখন ক্লাস ফোর-এ পড়তাম, স্কুলটিচার মিস রডরিক্স বলেছিলেন, তোমাদের মা বাড়িতে সব কিছু করেন বলে তোমরা স্কুলে আসতে পারছ। তাই একবার খাওয়ার পরে মাকে আমি ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলেছিলাম। মা খুব অবাক হয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমার সঙ্গে এত ফর্মাল হচ্ছ কেন? বড় হয়ে বুঝেছিলাম, মা বাড়িতে যে কাজই করেন, তার জন্য তাঁকে বাহবা দেওয়া উচিত। গৃহবধূদের তো মাস মাইনে নেই। আমার মা আদর্শ গৃহিণী। টাকার ভ্যালু মায়ের কাছেই শিখেছি। মা শিখিয়েছেন, কী ভাবে ভালবাসতে হয়।
প্র: আপনি আপনার মায়ের মতো না কি বাবার মতো?
উ: আমার মনে হয় আমি দু’জনের মতো। আমি বাবার মতো ফোকাসড। যে কাজটা হাতে নিই, সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ি না। মায়ের থেকেও কিছু গুণ পেয়েছি। সাড়ে পনেরো বছর বয়স থেকে কাজ করছি। তাই রান্নাঘরের দিকে মন দিইনি। আমি সাংঘাতিক খারাপ রাঁধুনি (হেসে)।
প্র: একটা সময়ে আপনার ছবি পরপর হিট হয়েছে। কিন্তু শেষ ছবিগুলো সে ভাবে চলেইনি। এর কী কারণ বলে আপনার মনে হয়?
উ: ছবির সাফল্য বা ব্যর্থতা কোনও অঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে নেই যে, দুই আর দুই মিলে চারই হবে। তাই বলা খুব মুশকিল। তবে অনেক সময় অভিনেতা খুব সফল হলে, নির্দেশক একটু ঢিলে দিয়ে দেন। ‘টেকেন ফর গ্র্যান্টেড’ হয়ে যায়। নির্দেশক ভাবেন, সফল হিরোইন নিয়ে ছবি বানালে সেটা চলবেই। কোনও কোনও সময় পরিচালক তাঁর আইডিয়া সফল ভাবে পরিণত করতে পারেন না। কেউ কেউ আবার সেটে গিয়ে অলস হয়ে পড়েন। এটুকুই বলতে পারি যে, আমার পরিশ্রমে কোনও খামতি থাকে না। সব চরিত্রের জন্যই আমি মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করি।
বিদ্যা বালন
প্র: ‘বেগমজান’ না চলায় বাংলার দর্শক কিন্তু খুব দুঃখ পেয়েছিল...
উ: এ নিয়ে আমার পক্ষে বলা খুব মুশকিল। একই নির্দেশক (সৃজিত মুখোপাধ্যায়) বাংলায় ও হিন্দিতে ছবিটা বানিয়েছিল। দর্শক বাংলা ছবিটা পছন্দ করেছিল।
প্র: সিদ্ধার্থ রায় কপূর (বিদ্যার স্বামী) সফল প্রযোজক। ছবিতে সাইনের আগে ওঁর টিপস নেন?
উ: না, আমি ওর থেকে নিই না। কিন্তু ও আমার থেকে নেয় (হেসে)। কাল যদি আমার ছবি না চলে, আমি ওকে দোষারোপ করতে পারব না। এ বিষয়ে আমরা একে অপরকে স্পেস দিই। তবে হ্যাঁ, কী ভাবে আমি সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ আমাকে সাহায্য করে। সব সময়ে বলে, আর এক দিন সময় নাও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে। আসলে আমরা একে অপরের খুব ভাল সাপোর্ট সিস্টেম।
প্র: বিয়ের পর সিদ্ধার্থ আপনাকে কতটা বদলে দিয়েছে?
উ: আমি আগের চেয়ে অনেক সৎ হয়ে গিয়েছি। আমি সব সময় খুব ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছিলাম। কারও সঙ্গে এক ছাদ শেয়ার করাটা আমার কাছে বিশাল ব্যাপার ছিল। ৩৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছি, তখন আমি অলরেডি সেটলড। আমি জানি, আমার কী ভাল লাগে, কী খারাপ। এখন নিজেকে অনেক সত্যি কথা বলি। আমার আর সিদ্ধার্থের অভ্যেসগুলোও অনেকটাই এক।
প্র: আপনি আর সিদ্ধার্থ সন্তানের কথা ভাবছেন?
উ: (হেসে) আপাতত আমাদের দু’জনের পরিবার নিয়েই আমরা খুশি। যে দিন আমি আর সিদ্ধার্থ এ নিয়ে ভাবব, নিশ্চয়ই হবে।
প্র: বাংলা ছবি করছেন না কেন?
উ: অফার আসছে। কিন্তু যেমন ছবি চাইছি, তেমন অফার তো পাচ্ছি না। আর আমি যদি বাংলা ছবি করি, তা হলে সেটা স্পেশ্যাল হতেই হবে।
প্র: সুচিত্রা সেনের বায়োপিক বানানো হলে আপনাকেই কিন্তু অনেকে ফার্স্ট চয়েস মনে করেন...
উ: (হেসে) রাইমা থাকতে আমি সেই রোলটা কোনও দিন করব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy