Advertisement
E-Paper

সমালোচকরা চায় তেরো জন সিনেমা দেখুক

‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সুপারহিট। বক্স অফিস কালেকশন প্রায় ২০০ কোটি। সোমবার কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তাঁর সংবর্ধনা। তার আগে ফারহা খান-এর বিস্ফোরক সাক্ষাত্‌কার। সামনে ইন্দ্রনীল রায়।‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সুপারহিট। বক্স অফিস কালেকশন প্রায় ২০০ কোটি। সোমবার কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তাঁর সংবর্ধনা। তার আগে ফারহা খান-এর বিস্ফোরক সাক্ষাত্‌কার। সামনে ইন্দ্রনীল রায়।

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share
Save

কনগ্র্যাচুলেশনস্‌ ফর ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’...

থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। কলকাতা আর বাংলার মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলা থেকে বক্স অফিস কালেকশন দেখে সত্যি আমরা নিজেরাই চমকে গিয়েছি। ইট’স এক্সট্রাঅর্ডিনারি। চার্লিকে তারা খুব ভালবেসেছে।

তারা হয়তো ‘চার্লি’কে ভালবেসেছে। কিন্তু নিজের ছেলে থাকা সত্ত্বেও জয়া বচ্চন তো ভালবাসেননি আপনার ছবি। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’কে উনি নাকি ‘দ্য মোস্ট ননসেন্সিকাল ফিল্ম’ বলেছেন...

হ্যাঁ, জানি। এটা নিয়ে আমি আর কী বলব? তবে জয়া বচ্চনকেও কিন্তু প্রেস ছিঁড়ে খেয়েছে ওসব বলার জন্য। ইট ওয়াজ ইভেন ব্যাড ফর হার। তবে আমার মনে হয় ওঁকে আউট অব কনটেক্সট কোট করা হয়েছিল।

খারাপ লাগেনি?

খারাপ লাগার থেকেও একটা বিষয় আমি বলতে চাই। অনেস্টলি আমার কিন্তু মনে হয় জয়াজি ওয়াজ রং। আমার তো স্ক্রিপ্টটা বেশ স্মার্টই মনে হয়। তবে এটুকু বুঝে গিয়েছি, ফারহা খান মানেই কিছু না কিছু ড্রামা অবধারিত।

শাহরুখ খান কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করেছিলেন যখন জয়াজির কমেন্টগুলো প্রেসে বেরোল? বা যখন ক্রিটিকরা আপনার ছবিকে ছিঁড়ে খেল?

‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ দেখেছেন?

হ্যাঁ।

সেই ডায়ালগটা ছিল না, “ফ্র্যাঙ্কলি মাই ডিয়ার, আই ডোন্ট গিভ আ ড্যাম।” শাহরুখ সেই ভাবেই রিঅ্যাক্ট করে... (হাসি)

সোমবার তো কলকাতায় আসছেন। কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আপনাকে ফেলিসিটেট করবে ক্লোজিং সেরিমনিতে...

হ্যাঁ, আমি অনার্ড। খুব স্পেশাল লাগছে নিজেকে। কিন্তু তার আগে কিছু কথা বলতে চাই...

নিশ্চয়ই।

তখন ১৯৮৯ কী ১৯৯০। আমি ডান্স ট্রুপ চালাই। প্রচুর মেম্বার আমার দলে। তাদের সঙ্গে আমি নিজেও বড় বড় স্টারদের শো-তে নাচি। যে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আমাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেলিসিটেট করবেন, সেই স্টেডিয়ামে ২৫ বছর আগে আমি গ্রুপ ডান্সার হিসেবে প্রচুর শো করেছি।

তখন পিঙ্ক এলিফ্যান্ট বলে একটা ডিস্কো ছিল। সেটাতেও যেতাম। মাঝে মধ্যে মনে হয় সত্যি স্বপ্ন দেখছি। ২৫ বছরে কতটা বদলে গেল আমার জীবন। (হেসে) আচ্ছা, একটা ক্যুইজের প্রশ্ন করতে পারি?

প্লিজ করুন...

কোরিওগ্রাফার হিসেবে আমার প্রথম ফিল্ম কী জানেন?

যত দূর জানি, ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’য়ের ‘পহেলা নশা’ গানটা?

রং আনসার। ওটাই সবাই ভাবে আমার প্রথম। কিন্তু ঠিক নয়। কোরিওগ্রাফার হিসেবে আমার প্রথম ছবি কিন্তু বাংলায়। টলিউডে।

কী বলছেন?

ইয়েস ইয়েস ইয়েস। ছবির নাম ছিল ‘এক পশলা বৃষ্টি’। নীতীশ রায় ছিলেন পরিচালক। সেই সময় নীতীশদার কলকাতার বাড়িতে থেকেছিলাম এক মাস। প্রচুর ঘুরতাম কলকাতায়। আই লভ দ্য সিটি। আর কোরিওগ্রাফার হিসেবে আমার প্রথম হিরো ছিল প্রসেনজিত্‌ চট্টোপাধ্যায়। হিরোইন ছিল ঋতু বলে একটি মেয়ে।

ঋতু দাস। সেই সময় থেকে শুরু করে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’য়ে শাহরুখ খানকে ডান্স শেখানোর জার্নিটা কিন্তু ফ্যাসিনেটিং।

লাইফ আফটার ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ কিন্তু এই ইন্টারভিউয়ের থিম। প্রায় ২০০ কোটি কালেকশন, ছবি সুপারহিট। ফার্স্ট রিঅ্যাকশনটা কী?

ভ্যাকুয়াম। বিরাট একটা ভ্যাকুয়ামের মধ্যে চলে গিয়েছে জীবনটা। আমি সেদিনই করুণাকে (করুণা বদওয়াল-শাহরুখ খানের সেক্রেটারি) বলছিলাম, প্রায় এক বছর বোধহয় আমি চার ঘণ্টার বেশি ঘুমোইনি।

আজ যখনই পারছি, একটু করে ঘুমিয়ে নিচ্ছি। বাচ্চাদের হোমওয়ার্ক দেখছি, বিকেলে মাছ কিনতে যাচ্ছি।

এত কাজ সামলান কী ভাবে? পুরুষ পরিচালকরা কি এতটা অর্গানাইজড?

দেখুন, পরিচালনার বিষয়ে কিন্তু কোনও জেন্ডার ইক্যুয়েশন হয় না। পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনি পুরুষ কী নারী, তাতে কিছু এসে যায় না। তবে আমার মনে হয় একজন মহিলা হওয়ার সুবিধা হল তারা বাই ইন্সটিংক্ট অনেক বেশি অর্গানাইজড।

আমি এক দিকে সংসার করতে পারি। ২০০ জন ক্রুকে সামলাতে পারি। স্টারকে প্যাম্পার করতে পারি। বাড়ির রান্নাঘরে হলুদ শেষ হয়ে গেলে শট নেওয়ার আগে ফোন করে সেটা ড্রাইভারকে দিয়ে আনিয়ে নিতে পারি।

এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার মহিলারা নিজেদের অত সিরিয়াসলি নেয় না। একজন পুরুষ যে কাজ করে দশ বার বলবে, একজন মহিলা সেটা কাউকে না বলে অনায়াসে করে যাবে।

একটু ফিল্মের প্রসঙ্গে আসি। ২০০ কোটির কাছাকাছি কালেকশন ঠিকই। কিন্তু সমালোচকদের তো একেবারেই ভাল লাগেনি ছবিটা।

আমি একটা জেন মোডে চলে গিয়েছি জানেন। কোনও কিছুতেই আমি আর অ্যাফেক্টেড হই না। ২০০ কোটি যখন কালেকশন, তখন সাধারণ মানুষ তো ছবিটা দেখেছে। এমনি এমনি তো হয়নি।

আচ্ছা ছবি রিলিজের আগের দিন, মানে ২৩ অক্টোবর শাহরুখ কী ফারহা খান কতটা টেনশনে ছিলেন?

টেনশন তো ছিলই। সে দিন আমরা দুবাইতে। ওখানে প্রিমিয়ার। প্রিমিয়ারের পরে হোটেলে পার্টি চলেছিল অনেক রাত পর্যন্ত।
একটা স্টেজের পর দেখলাম সবাই ড্রাঙ্ক (হাসি)

ছবি রিলিজের আগের দিন একজন পরিচালক কী প্রযোজকের মনের অবস্থা ছেলে-মেয়ের বিয়ের দিন বাবা-মায়ের মনের অবস্থা যেমন হয় ঠিক তেমনই থাকে। মনে হয়, কাল থেকে আর তোমার ছবিটা নিজের থাকবে না। এত দিন ধরে যাকে তুমি বড় করেছ, যাকে আরও ভাল করার জন্য রাতে ঘুমোতে পারোনি, সে-ই কালকে সবার সামনে পরীক্ষা দিতে বসবে। আমি কী বলছি, সেটা একজন পরিচালক কী প্রযোজকই বুঝবে। অন্য কেউ বুঝবে না। টেনশনের থেকেও এ রকম ফিলিংটাই বেশি হচ্ছিল।

কিন্তু অনেকে বলেছে আপনার কাছে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আপনি শাহরুখের সঙ্গে একটা ‘চক দে’ বানাতে পারলেন না...

আমার মনে হয় ‘চক দে’ সেই অর্থে কমার্শিয়াল ছবি ছিল না। আমার কাছে ফিল্ম মানে কমপ্লিট এন্টারটেনার। আমি ভারতের সবচেয়ে বড় স্টারকে কমপ্লিট এন্টারটেনার হিসেবেই দেখতে চাই। আর এ সব কথাবার্তা আজকাল বেশি হয় টুইটার, ফেসবুকে। এখানে তো সবাই নিজেদের মতামত দিয়ে চলেছে। এ ছাড়া আছে কয়েকজন ফ্রাস্ট্রেটেড ক্রিটিক। তারা কী বলল, তাতে কী এসে যায়? বেশির ভাগ ক্রিটিক তো হাতে স্ক্রিপ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দুটো কথা বলার পরেই বলে, “আমার একটা স্ক্রিপ্ট আছে। কিন্তু প্রোডিউসর খুঁজছি।”

তারা যখন দ্যাখে ফারহা খান কী রোহিত শেট্টিকে দিয়ে ছবি বানানোর জন্য শাহরুখ ১০০ কোটি খরচ করছে, হিংসেয় জ্বলে পুড়ে মরে।

ক্রিটিকদের ওপর আপনার রাগ কিন্তু অনেক দিনের।

হ্যাঁ, অনেক দিনের। ওরা ‘ম্যয় হুঁ না’কে বলেছিল চিপ। ‘ওম শান্তি ওম’ বলেছিল ডিজাস্টার। কিন্তু টিভিতে চললে আজও বহু লোক সেই ছবিগুলো দ্যাখে।

আরে সেদিন জাভেদ (আখতার) সাবের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’ হোক কী ‘ইয়াদোঁ কী বারাত’ কী ‘শোলে’ হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে যে ছবিগুলো ল্যান্ডমার্ক, সেগুলোর কোনওটাই তো ক্রিটিকদের ভাল লাগেনি। আমি বলছি না ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সেই শ্রেণির ছবি। কিন্তু আমাদের ক্রিটিকদের আরও একটা সমস্যা আছে..

কী সেটা?

হাউসফুল বোর্ড দেখলে গা পিত্তি জ্বলে যায় তাদের। ফাঁকা হল, তেরো জন লোক দেখছে, তার মধ্যে তিন জন ঝিমোচ্ছে এমন সব ছবি দেখবেন ক্রিটিকদের দারুণ লাগছে। সহজ ছবি, মানুষ হাসছে, এ সব দেখলেই ওদের রাগ।

আমার তো মাঝে মধ্যে মনে হয় আর প্রেস শো করব না। প্রেস শো-তে ফ্রি টিকিটে ছবি দেখবে, প্রোডিউসরের টাকায় কোল্ডড্রিঙ্ক আর পপকর্ন খাবে, আর বেরিয়ে এসে বেসলেস ক্রিটিসিজম করবে। আপনি কি ইন্ডাস্ট্রির সেই জোকটার কথা জানেন?

কোনটা?

আরে আপনারা সাংবাদিকরা যেমন আমাদের নিয়ে কথা বলেন, আমরাও আড্ডা মারতে মারতে আপনাদের নিয়ে কথা বলি। আমাদের একটা জোক আছে ক্রিটিকদের নিয়ে। দু-তিনজন ক্রিটিকের রিভিউ নিয়ে তো আমরা সব সময় চিন্তায় থাকি। সেটা কিন্তু তাদের রিভিউয়ের জন্য নয়, কিন্তু তারা যদি কোনও ছবিকে ফোর স্টার দেয়, আপনি লিখে দিতে পারেন সে ছবিটা তিন দিনও চলবে না (হাসি)

ওদের কাছে দুর্বোধ্য পোলিশ কী ফ্রেঞ্চ সিনেমা অনেক ভাল। কিন্তু কানপুর কী কলকাতায় কী কোয়েম্বূত্তরে যে সিনেমা দেখে মানুষ এন্টারটেনড হচ্ছে, সেটা সহ্য হয় না। ওরা কী চেনে ভারতবর্ষটা? ওই যে বললাম শাহরুখ যে ভাবে রিঅ্যাক্ট করে ওদের ব্যাপারে, সেই ভাবেই রিঅ্যাক্ট করা উচিত...

সেই ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’য়ের ডায়ালগের মতো বলছেন?

(হাসি) হ্যাঁ, সেই ডায়ালগটা, “ফ্র্যাঙ্কলি মাই ডিয়ার, আই ডোন্ট গিভ আ ড্যাম।”

ananda plus indranil roy farha khan interview

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}