হরে রামা হরে কৃষ্ণা
এই জায়গাটায় এলেই নিশ্চয়ই পুরনো একটা অনুভূতি মনে ফিরে ফিরে আসে!
কেন? আমার তো সে রকম কোনও অনুভূতি নেই।
আরে সান-এন-স্যান্ড হোটেল তো দেব আনন্দের জায়গা বলে গোটা ইন্ডাস্ট্রিতে বিখ্যাত। এখানকার একটা ঘর থেকেই তো ওঁর গোটা অফিস চলত।
দেবসাবের সঙ্গে আমার নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ থাকত। উনি ছিলেন আমার মেন্টর। আমাকে আবিষ্কার করে বড় করে তোলার পিছনে ওঁরই ভূমিকা। কিন্তু কখনও মনে পড়ে না এখানে ওঁর সঙ্গে দেখা করেছি বলে।
আপনি ‘হরে রামা...’তে শুরু করলেন ওঁর বোন হিসেবে। তারপর হয়ে গেলেন নায়িকা। এ রকম দৃষ্টান্ত আর আছে বলে তো মনে হয় না।
হ্যাঁ, আমাদের একসঙ্গে সেকেন্ড ছবি ‘হীরা পান্না’তেও আমি ওঁর প্রেমিকা রাখির বোন। অথচ আমাদের নামে ছবির টাইটেল। তার পর তো আমরা আরও বেশ কিছু ছবি একসঙ্গে করি। ‘ওয়ারেন্ট’, ‘ডার্লিং ডার্লিং’, ‘কালাবাজ’, ‘ইশক্ ইশক্ ইশক্’। দেবসাবকে খুব রেসপেক্ট করতাম আমি।
আপনার সঙ্গে তো দেব আনন্দের বয়সের প্রচুর তফাত ছিল। ‘অড’ মনে হত না?
সে তো সব লিডিং হিরোদের সঙ্গেই নায়িকাদের বয়সের অনেক তফাত ছিল।
আপনার ক্ষেত্রে ওটা একটু বেশিই ছিল। তিরিশ বছরের কাছাকাছি। আপনার বয়ফ্রেন্ডরা ঠাট্টা-ইয়ার্কি করত না?
হা হা হা (খিলখিলিয়ে হাসি)। বললাম তো, ওঁকে খুব রেসপেক্ট করতাম। উনি যখন ‘হরে রামা’র জন্য আমাদের একদল তরুণ-তুর্কিকে উঠিয়ে নিয়ে কাঠমান্ডু চলে গেলেন, আমরা বলতে গেলে কিছুই জানতাম না। ওঁকে আর মুমতাজকে দেখতাম আর শিখতাম। শ্যুটিংটাই ছিল আমাদের ওয়ার্কশপ। দেবসাবের সঙ্গে কাজ করার সুবিধে ছিল উনি জানতেন ঠিক কী চান। ক্লিয়ার কাট স্ক্রিপ্ট থাকত ওঁর। বাঁধানো চিত্রনাট্য সেই সময়ের বেশির ভাগ ডিরেক্টরেরই যা ছিল না। তাঁরা স্ক্রিপ্ট রাখতেন নিজেদের মনে।
এখন যেমন
সেই দেব আনন্দকে ছেড়ে আপনি হঠাৎ রাজ কপূরের দিকে চলে গেলেন। কোথাও কি মনে হয় ইন্ডাস্ট্রির এই দুই সুপার পাওয়ারের মধ্যে পড়ে আপনি চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিলেন?
আমার কোনও দোষই ছিল না। ‘সত্যম শিবম’য়ের রোলটা খুব অদ্ভুত ভাবে আমার কাছে আসে। আমি, রাজ আর শশী কপূর মিলে একটা ফিল্মের শ্যুটিং করছিলাম। ‘উকিলবাবু’। তখন রাজ ‘সত্যম শিবম...’ বানাবেন। ছবিটাতে তখনই উনি ডুবে গিয়েছেন। সারাক্ষণ ওঁর মুখে শ্যুটিংয়ের সময়ও রূপা, রূপা, রূপা। শুনতে শুনতে কী রকম আমার সিস্টেমের মধ্যে চলে গিয়েছিল। একদিন রাজ কাজকর্ম সেরে ওঁর স্টুডিয়োতে ফিরে গিয়েছেন। আমার কী মনে হল, দেখি তো রাজের স্বপ্নের রূপা সাজতে পারি কি না! রূপার চরিত্রটা কিন্তু আমি এত কাল যা করে এসেছি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আদৌ জানি না রাজের স্বপ্নের সঙ্গে সেটা মিলবে কি না। ঘাগরা চোলি পরলাম। মেক আপে নিজের মুখ বিকৃত করে চুলটা ওই ভাবে বেঁধে চলে গেলাম আরকে স্টুডিয়োতে রাজের কটেজে। বেল দিলাম। উনি বললেন, “কে?” আমি অন্য রকম গলা করে বললাম, রূপা। উনি বেরিয়ে এসে আমায় দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তাড়াতাড়ি কৃষ্ণাজিকে ডেকে আনলেন, “দ্যাখো, দ্যাখো, এত বড় স্টার! সে কি না অডিশন দেওয়ার মতো করে চলে এসেছে!” তখনই সোনার মুদ্রা দিয়ে কৃষ্ণাজি আমায় আর্র্শীবাদ করলেন। ‘সত্যম শিবম’য়ের জন্য আমার অ্যাডভ্যান্স।
কিন্তু দেব তো খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। আপনাকে যে দিন উনি প্রোপোজ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সে দিনটাই আপনি রাজকে পার্টিতে জড়িয়ে ধরলেন। দেবের মনে হল, ওঁকে আপনি জীবন থেকে চিরতরে সরিয়ে দিলেন।
দেবসাব বোধহয় ভাবেননি আরকে ব্যানারে ছবি করার জন্য আমি এতটা মরিয়া হতে পারি। রাজের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল একটা পার্টিতে। একটা পাবলিক প্লেসে মানুষ আর কী অনুরাগ দেখাতে পারে! আমি তার চেয়ে বাড়াবাড়ি কিছু করিনি।
আসলে প্রেমে পড়ে মানুষ বেশি পোজেসিভ হয়ে যায়। তুচ্ছ জিনিসকেও বড় করে ধরে। আর দেব তো বইতে স্বীকারই করেছেন, উনি গভীরভাবে আপনার প্রেমে পড়েছিলেন।
আমি সেই অ্যাঙ্গলটা বুঝতে পারছি। কিন্তু দেবসাবের বই পড়ে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। উনি কী থেকে ধরলেন যে, আমার সঙ্গে রাজ কপূরের প্রেম চলছে? রাজের সঙ্গে আমার নিখাদ পেশাদারি সম্পর্কের বাইরে কিছু ছিল না। আজও জোর গলায় সেটা বলতে পারি। দেবসাবকে যদি দুঃখ দিয়ে থাকি, আজ এত বছর পরেও ক্ষমা চাইছি। কিন্তু ওঁর বইটা পড়ে আমি সত্যিই শকড্ হয়ে যাই। মানুষটা এত ভুল বুঝল!
এত আপসেট হলে প্রতিবাদ করে আপনার ভার্সানটা জানালেন না কেন?
কারণ আমি দেবসাবকে সত্যিই শ্রদ্ধা করতাম। কোনও শান্তি নষ্ট হোক চাইনি। আই হেল্ড মাই পিস।
দেব মারা যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে? ওঁর ছেলে সুনীল আনন্দ বা অন্য কারও সঙ্গে?
নাহ্, জীবন বয়ে যায় নিজের মতো... এগিয়ে যায়...। পিছনের দিকে তাকানোর সময় কোথায়? সময়ের টানে যে যার মতো করে বিচ্ছিন্ন।
আপনি কিন্তু ভারতীয় নায়িকাদের মধ্যে একটা ট্রেন্ড তৈরি করে গিয়েছেন। যাকে বলে গেমচেঞ্জারের ভূমিকা!
লোকে তাই বলে দেখি (হাসি)।
আপনার মতো ভাল ফিগার, ওই রকমই ওয়েস্টার্নাইজড ভাবভঙ্গি নিয়ে আজও কেউ এলে সে দ্রুতই হয়ে যায় সেকেন্ড জিনাত।
তা কেন! এখনকার মেয়েরা যথেষ্ট ভাল। ওরা ইলেকট্রনিক মিডিয়া সামলায় ২৪ ঘণ্টা ধরে। ঠিকঠাক কথা বলে। সারাক্ষণ ক্যামেরার সামনে নিজেদের ক্যারি করে। এটা মোটেও সহজ কাজ নয়। আমাদের এই পরীক্ষাটা দিতে হয়নি।
তা-ও আপনার কি মনে হয়, সেকেন্ড জিনাত যদি বলতে হয়, তা হলে কাকে?
ওরা সবাই ভাল। প্রিয়ঙ্কা। করিনা। ক্যাটরিনা।
অনেকে বিপাশার সঙ্গে আপনার মিল খুঁজে পান।
জিনাত: বিপাশার ফিজিক খুব ভাল। নিজেকে ক্যারি করে ভাল।
ওঁর কোন ছবি আপনার ভাল লেগেছে?
আমি তো বিপাশার কোনও ফিল্মই দেখিনি। আমার সিনেমা দেখাই হয় না। কালেভদ্রে কেউ বলল, চাপাচাপি করল দিজ ইজ আ মাস্ট সি মুভি, তখন গেলাম।
এসআরকে-র ফিল্মটিল্মও দেখেননি?
‘দিলওয়ালে...’ দেখেছিলাম। ভাল লেগেছিল।
সে তো অনেক কাল আগের।
আর একটা দেখেছি ওর। ‘ডন’। ওটার প্রিমিয়ারে বিশেষ ভাবে নেমন্তন্ন করেছিল।
প্রচারের আলো বা আগেকার লাইমলাইট মিস করেন না?
এতটুকুও না। ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার সময়টা খুব রঙিন ছিল। সত্তর দশকে ওই সময় হিরো বলুন, পরিচালক বলুন, মিউজিক ডিরেক্টর বলুন, গায়ক বলুন— সবাই ক্রিয়েটিভিটির চুড়োয় ছিল। তখন কাজ করতে পারাটা দারুণ সুযোগ। তা বলে তো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই তো জীবনের সব নয়। জার্নির একটা পার্ট। আমি এখন পরিবারের সঙ্গে আছি। ছেলেদের নিয়ে আছি। খুব সুখী এই জীবনে।
তবু টিভিতে তো হরবখত পুরনো সিনেমাটিনেমা দেখায়। সেগুলো দেখে কেউ ফোনটোন করে না জিনাত, তোকে দারুণ লাগছিল?
হ্যাঁ, এক-আধটা টেক্সট মেসেজ আসেটাসে। কিন্তু আমি এই জীবনে ফিল্মের কোনও রকম যোগাযোগ ছাড়াই কাটাই। আমাকে ঘিরে যারা থাকেটাকে, তাদের কারও আমার ফিল্ম সত্তা সম্পর্কে কোনও রকম উৎসাহ নেই। আমার এখনকার বৃত্তে আমি মোটেও জিনাত আমন নই!
আপনার জীবনে এত সব উথালপাতাল করা অভিজ্ঞতা। বই লিখবেন না?
তিনটে পাবলিশিং হাউস থেকে আমার অফার আছে। কিন্তু আমায় ওয়েট করতেই হচ্ছে। কারণ আমার ছেলেরা এখনও জীবনে প্রতিষ্ঠিত নয়। সবে তারা ডানা মেলে ওড়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। আমার ভয় বইতে সত্যি কথা লিখলে বেশ কিছু লোককে আমি চটিয়ে দেব। তাতে ওদের জীবনে ক্ষতি হয়ে যাবে।
ছেলেরা এখন ঠিক কোন স্টেজে?
জাস্ট অ্যাবাউট টু ফ্লাই। তারপর আমি অনেক সময় পাব ভাবার যে বাকি জীবন নিয়ে কী করব?
হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সে সময়ে শাসন করতেন আপনারা তিনজন। হেমা মালিনী, আপনি আর রেখা। তার মধ্যে রেখা এখনও সেই মোহিনী। চিররহস্যময়ী।
হা হা হা। তাই।
হাসছেন কেন? আপনারা কি বন্ধু নন?
না। গলায় গলায় বন্ধু না হলেও কখনও এ দিক ও দিক দেখা হলে হাসিঠাট্টা হয়। রেখা যেটা করেছে সেটা নিশ্চয়ই ওর জন্য কাজ করেছে। মাস্ট হ্যাভ ওয়ার্কড ফর হার। হেমাজির সঙ্গে ‘কফি উইথ কর্ণ’তে গিয়েছিলাম। দেখা-টেখাও হয়। হেমাজিকে আমি খুব সম্মান করি।
‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে যো দিলকো’— এখনও যখন প্রতিবার দেখায়, লোকে বিজয় অরোরাকে গালাগাল করে। বলে তোর কী যোগ্যতা ছিল ওই দৃশ্যটায় থাকার।
হাহাহা, দ্যাট ইজ সো ফানি, এর আগে কখনও শুনিনি। পুওর বিজয় অরোরা। বেচারা মারা গিয়েছে।
‘ইয়াঁদো কি বরাত’য়ের ওই দৃশ্যটা হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে একটা মনে রাখার মতো সং সিকোয়েন্স। সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে?
নিশ্চয়ই মনে পড়ে। আমাকে ওই দৃশ্যটার জন্য খুব টাইট করে পোশাক পরানো হয়েছিল। চুলের স্টাইলটা পুরো আশা পারেখ। আমার কেমন যেন দমবন্ধ করা লাগছিল ওই স্টাইলটাতে। আমি তখন ভীষণ স্লিম। ওই রকম টাইট ড্রেসে মানাতেই পারছিলাম না। তার পর ডিরেক্টর আমাকে অনুমতি দিলেন নিজের মতো করে সাজার। তখন আমি নিজের মতো সেজেটেজে অনেকটা রিল্যাক্সড হতে পারলাম। আবার জিনাত আমনে ফিরলাম আশা পারেখ থেকে। ওই গানের দৃশ্যটায় দেখবেন আমাকে দুটো ড্রেসেই দেখিয়েছে।
আশা ভোঁসলে আর আপনার অসামান্য যুগলবন্দি ছিল। যেমন ছিল রাজেশ বা দেব আনন্দের সঙ্গে কিশোরকুমারের।
অ্যাবসোলিউটলি। কী ভয়েস আশাজির! আর তেমনই ভার্সাটিলিটি। আমার ছবিতে ওঁর গান বহু বার ব্যবহার হয়েছে। ওই সময় বলা হত আশা-আরডি-জিনাত আমন এরা একটা সুপার টিম।
আপনি তো বম্বে সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে পাশ করেছেন? গাওস্করও ওই কলেজের। আপনারা কি কাছাকাছি সময়ের?
উইকিপিডিয়াতে পেয়েছেন তো? একদম ভুল। প্রচুর ভুল তথ্য আমার সম্পর্কে ওখানে আছে। আমার আর ওগুলো উদ্যোগ নিয়ে কারেক্ট করা হয়নি। আমি স্কুল করেছি পঞ্চগনিতে। তার পর আমেরিকা চলে যাই কলেজ করতে। পড়াশোনায় খুব ভাল ছিলাম। ভীষণ দুষ্ট ছিলাম বলে আমাকে স্টুডেন্টদের প্রিফেক্ট করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনায় সবার আগে। আর সেই খুঁতখুঁতে স্পিরিটটাই ইন্ডাস্ট্রিতে আনতে চেয়েছিলাম। অথচ কলেজটা পুরো করাই হয়নি। এত অল্প বয়সে আমার সিনেমায় নেমে পড়া। নেটে আমার সম্পর্কে এ রকমই প্রচুর ভুল তথ্য নানা সময়ে লেখা হয়েছে। আগেও অবশ্য হত।
যেমন?
যেমন সেই সময়কার ফিল্মি পত্রিকাগুলোয় বিকৃত অনেক কিছু লেখা হত।
কী ভুল লেখা হত?
ফিল্ম ম্যাগাজিনগুলো যেমন লিখত, আমার জীবনটা মোটেও তত রসে ভরা ইন্টারেস্টিং ছিল না (হাসি)।
কিন্তু আপনি তো তখন বরাবর মিডিয়ার খুব কাছের লোক ছিলেন...
‘স্টারডাস্ট’ তখন শুরু হয়ে বাড়ছে। আমিও ম্যাগাজিনটার সঙ্গেই গ্রো করছিলাম। আর ‘সিনে ব্লিৎজ’য়ের প্রথম ইস্যুতেই ওরা কভার পেজে আমার ছবি ছেপেছিল।
তাই ‘স্টারডাস্ট’ যখন অমিতাভ আর আপনার তথাকথিত ‘প্রেমকাহিনি’ নিয়ে লিখল, তখন অমিতাভ মিডিয়াকে বয়কট করলেও আপনি তাদের ডার্লিং থেকেই গেলেন।
মিস্টার বচ্চন কি তার জন্য মিডিয়াকে বয়কট করেছিলেন নাকি? না না, সেটা কারণ ছিল না।
ম্যাডাম একটু মনে করে দেখুন সেটাই কারণ ছিল ১৯৭৫ সালে ওই একটা বিশেষ সংখ্যার প্ররোচনা।
হতে পারে। মিস্টার বচ্চনই সেটা বলতে পারবেন।
অমিতাভ আপনার এতগুলো ছবির নায়ক। বয়সের তফাত খুব বেশি নয়। ওঁকে মিস্টার বচ্চন বলছেন কেন বারবার?
ওঁর স্টেচারটা সেই শ্রদ্ধা দাবি করে বলে।
আপনি কি ওঁকে ডাকেনও মিস্টার বচ্চন বলে?
না, আমি বলি দা।
দা কেন?
আসলে ওঁর ভাই অজিতাভের আমি প্রথমে বন্ধু ছিলাম। ওঁদের গ্রুপে আমি আড্ডা মারতাম, মিশতাম। তার পর ওঁর সঙ্গে আলাপ হয়। সেই থেকে দা।
আমার মনে আছে আপনি একবার ইন্টারভিউতে বলেছিলেন স্পোর্টস সম্পর্কে আপনার কোনও উৎসাহ নেই। অথচ দু’জন ক্রিকেটার আপনার সম্পর্কে বরাবর এত উচ্চকিত।
কে তাঁরা (আগ্রহের সঙ্গে)?
হরভজন সিংহ আর আপনার পুরনো বন্ধু ইমরান। ভাজ্জি নাকি আপনাকে বলেছেন আপনি আমার সময়ের নায়িকা হলে সারাদিন আপনার ঘরের বাইরে আমি ফ্যানের মতো বসে থাকতাম!
হা হা হা। হরভজন ইজ ভেরি সুইট। আমাদের একজন কমন বন্ধু আছে। এটা ভাবলেও খুব সুইট লাগে যে এত বছর বাদেও লোকে আমাকে নিয়ে এই ভাবে ভাবে।
আর ইমরান?
ইমরান কী?
যোগাযোগ আছে এখনও?
(কিছুটা উদাসীন— না কি দৃষ্টি পড়তে ভুল হল? কিছুটা নস্টালজিক, নাকি বেশি ভাবলাম) না, ইমরানের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। তবে শুভেচ্ছা জানাই ও যেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়। সেটা দারুণ হবে!
সত্যিই যোগাযোগ নেই?
বললাম তো নেই।
একটা মতবাদ রয়েছে।
কী?
তা হল আপনি জীবনে যে দুই পুরুষকে এত ভালবাসা উজাড় করে দিলেন, তারা শুধু ভয়ঙ্কর বিট্রে-ই করল না, শারীরিক অত্যাচার করল আপনার ওপর। প্রকাশ্যে মারল। আজ ভাবলে কী মনে হয়?
(শোনা যায় মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলে প্রথম স্বামী সঞ্জয় খান এমন মেরেছিলেন জিনাতকে যে একটা চোখ আজও একেবারেই ভাল নেই। এর পর মারেন দ্বিতীয় স্বামী প্রয়াত মজহর খান)
ভিন্ন পরিস্থিতি। ভিন্ন সময়। সেই পুরুষেরা আজ অতীতের অংশ। আমার জীবনে সেই পার্টটা আজ আর নেই। এখন জীবন আমার দুই ছেলেকে ঘিরে। যারা প্রায় সাবালক হয়েই গিয়েছে। আমার জীবনে এমন বেশ কিছু চুরমার করা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তার পর সেই টুকরোগুলোকে জুড়েটুড়ে আমি সাহসের সঙ্গে পথ চলছি। আমি জীবনটাকে এ ভাবেই দেখি।
জীবনের সংজ্ঞাটা তা হলে কী? আ স্কুল অব হার্ড নকস?
তা কেন? জীবনে কত আনন্দের মুহূর্ত আছে। কত রূপ-রস-গন্ধ আছে। তার বাঁকে বাঁকে হয়তো চড়াই-উতরাই। সবটা মিলে লাইফ খুব ইন্টারেস্টিং একটা জার্নি।
আপনি কি জানেন ‘টিপু সুলতান’য়ের সেটে ওই রকম সর্বগ্রাসী আগুন ধরে খান-দের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পরেও বলিউডে অনেকেই দাঁত চেপে বলেছিল সঞ্জয়ের ঠিক হয়েছে। সার্ভস হিম রাইট। (জিনাতকে যা করেছিল)
আমি জানি। আমাকেও অনেকেই তাই বলেছিল। স্ট্রেঞ্জ লেগেছিল আমার। যাই হোক, আমার নিজের নীতি হল যা চলে গিয়েছে, চলে গিয়েছে।
(ইন্টারভিউ শেষ। মোবাইলে ফোন এল। জিনাত বললেন, “ভিতরে এসো।” দীর্ঘকায় মজহর-পুত্র হাজির মা-কে নিতে। জিনাত তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে গেলেন আবার মা-য়ের ভূমিকায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy