Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
নিন্দা ঘেরাওয়ের

পাঠ-পরিবেশের দায় উপাচার্যের: নারায়ণন

নরেন্দ্রপুর-সেন্ট জেভিয়ার্সে মসৃণ গতিতে লেখাপড়া চলে। অথচ যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনে বিঘ্ন-ব্যাঘাত কেন ঘটে, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই তুলনাত্মক প্রশ্ন তুলেছিলেন রবিবার। বলেছিলেন, সব বিঘ্নের দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসকদেরই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

নরেন্দ্রপুর-সেন্ট জেভিয়ার্সে মসৃণ গতিতে লেখাপড়া চলে। অথচ যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনে বিঘ্ন-ব্যাঘাত কেন ঘটে, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই তুলনাত্মক প্রশ্ন তুলেছিলেন রবিবার। বলেছিলেন, সব বিঘ্নের দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসকদেরই।

দিন চারেকের মধ্যেই মন্ত্রী পাশে পেয়ে গেলেন এম কে নারায়ণনকে। ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ-পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব উপাচার্যদেরই নিতে হবে,’’ বৃহস্পতিবার নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বলেন বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল নারায়ণন। রাজ্যপাল থাকাকালে পদাধিকারবলে কলকাতা, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন তিনি। ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য নির্ভর করে উপাচার্য এবং আধিকারিকদের উপরে। উপাচার্যদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে অবাঞ্ছিত সব ঘটনা সহজেই এড়ানো যায়,’’ বিশ্বাস নারায়ণনের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকদের ভূমিকা নিয়ে নারায়ণনের বক্তৃতার সময় সেখানে ছিলেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জন উপাচার্য। ছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াও। সম্প্রতি প্রেসিডেন্সির পাঠ-পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মইদুল ইসলাম ওই প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন।

গত দু’বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ‘দাবি’ আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্য ও অন্যদের ঘেরাওয়ের তীব্র সমালোচনা করে নারায়ণন বলেন, ‘‘ঘেরাও করা মানে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। এক জন পড়ুয়াকে সেটা মানায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাওয়ের পরিস্থিতি আসারইঈ কথা নয়।’’ এই মন্তব্য করে তিনি উপাচার্যদেরই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলে শিক্ষা শিবিরের ব্যাখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে বাড়তে থাকা দলীয় রাজনীতি যে আদতে পড়াশোনার পরিবেশের পরিপন্থী, সেটাও ফের সামনে নিয়ে আসেন নারায়ণন। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর মুখে ‘টাকা দিই, তাই নাক গলাবো’ গোছের কথা কি আসলে পরোক্ষ ভাবে রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করারই চেষ্টা নয়?

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে শিক্ষামন্ত্রীর এই ধরনের উক্তির বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে শিক্ষা শিবিরে দু’টি ভাগ আছে। নারায়ণন সে-দিকে যাননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে পঠনপাঠন— সব কিছুতেই রাজনীতি যে ‘নাক গলিয়েছে’, সেটা কার্যত স্বীকার করে নেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ছাত্র সংসদগুলিও চরিত্র পাল্টে রাজনৈতিক দলের ছোট সংস্করণ হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার আবহাওয়া বজায় রাখতে সহায় একমাত্র উপাচার্যেরাই। সহযোগিতা, পারস্পরিক আলোচনাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন চালানোর দক্ষতার মাপকাঠি বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্যের ভূমিকা ঠিক কী, সেটাও পরিষ্কার করে দেন নারায়ণন। ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের ভাঙচুরের ঘটনায় আচার্য হিসেবে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। নিজের সময়ের উদাহরণ দিয়ে নারায়ণন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে আচার্যের ভূমিকা আসলে ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা, এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা।’’

যাঁদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত, প্রাক্তন আচার্য-রাজ্যপালের এই কর্তব্য-নির্দেশ শুনে তাঁরা কী বলছেন?

‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্ সমাজ পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আধিকারিক, গবেষক— সকলকে নিয়েই। আমি বিশ্বাস করি, আলোচনায় সব সমস্যার সমাধান সম্ভব,’’ বলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। পড়ুয়াদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিতেও ভোলেননি তিনি। বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা যখন দাবি জানাতে আসেন, তাঁদেরও উচিত গণতান্ত্রিকতা বজায় রাখা। অন্যের অধিকার খর্ব করে নিজেদের দাবি আদায় কোনও সমাধান নয়।’’

ঘেরাওয়ের রাস্তার নিন্দা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মারজিতও। ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ যে-পড়ুয়াদের উপরে নির্ভর করছে, ঘেরাওয়ের রাজনীতি তাঁদের মানায় না,’’ বলেন তিনি। নারায়ণনের বক্তব্যের সমর্থনে তিনি জানান, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক। ‘‘ভাল কাজের জন্য প্রথমে উপাচার্য প্রশংসিত হন। তবে মনে রাখতে হবে, সমালোচনার তিরও প্রথমে সহ্য করতে হয় উপাচার্যকেই,’’ বলেন মারজিত। তবে প্রতিবাদের পথ আসলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয় বলে মনে করেন বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলন কী ভাবে করতে হয়, বৃহত্তর সমাজকে তা শেখাবে বিশ্ববিদ্যালয়ই। কিন্তু মূল্যবোধহীনতা বদলে ফেলেছে প্রতিবাদের ধরনকে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অরাজকতার কারণ এটাই, মনে করছেন বাসববাবু।

নারায়ণনের বক্তব্য সম্পর্কে মত জানার জন্য ফোন করা হলে সাড়া দেননি প্রেসিডেন্সির উপাচার্য। জবাব দেননি এসএমএসেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE