Advertisement
০২ মে ২০২৪

রবিনসন স্ট্রিটের সেই বাড়িতে ঘুরলেন আবেগতাড়িত পার্থ

সেই রবিনসন স্ট্রিট। সেই পার্থ দে। কিন্তু আট মাসের ফারাকে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। সেটা বোঝা গেল বৃহস্পতিবার। যখন ফের নিজের বাড়িতে ঢুকলেন তিনি!

রবিনসন স্ট্রিটে পার্থ দে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

রবিনসন স্ট্রিটে পার্থ দে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২১:৪০
Share: Save:

সেই রবিনসন স্ট্রিট। সেই পার্থ দে। কিন্তু আট মাসের ফারাকে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। সেটা বোঝা গেল বৃহস্পতিবার। যখন ফের নিজের বাড়িতে ঢুকলেন তিনি!

পুলিশ সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশে চাবি ফিরে পেয়ে বৃহস্পতিবার রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি ফিরে এসেছিলেন তিনি। পুলিশ এক পরিচিত পাদ্রীকে নিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন পার্থ। কোথায় দিদি দেবযানীর কঙ্কাল পড়ে ছিল, ১০ জুন রাতে কোথায় বাবা অরবিন্দ দে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন— সবই আঙুল তুলে দেখাচ্ছিলেন তিনি। পুরনো স্মৃতি ঘাঁটতে ঘাঁটতে কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন বলেও পুলিশ সূত্রের খবর।

পুলিশ বলছে, বাবা-দিদি বেঁচে থাকতে কাকা অরুণ দে-র পরিবারের সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না বলেই তদন্তকারীদের জানিয়েছিলেন পার্থ। এ দিন কাকাকে দেখতে পেয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন পার্থ। জড়িয়ে ধরেন খুড়তুতো ভাইকে।

বদল এসেছে পার্থর চেহারাতেও। গত ১১ জুন সকালে রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে বেরনোর সময় পার্থর পরনে ছিল ময়লা পোশাক, গাল ভর্তি দাড়ি, শরীরে বাসা বেঁধেছিল নানা রকমের রোগ। এ দিন ফিরলেন হলদে শার্ট, কালো ব্লেজার, কালো ট্রাউজার্স পরে। চুল, দাড়ি পরিচ্ছন্ন করে কামানো। বাড়ির চত্বরে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘‘আমি সুস্থ হয়েছি। এ বার সুখী জীবনে ফিরতে চাই। কাজ করতে চাই, থিতু হতে চাই।’’ তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে দিদি বা বাবাকে নিয়ে টুঁ শব্দও করেননি তিনি।

বিয়ে করবেন কি না, সেই প্রশ্নের কোনও সরাসরি উত্তর দেননি পার্থ। বলেছেন, ‘‘সব কিছুই ভাবনার মধ্যে রয়েছে। তবে এখনও কিছু স্থির করিনি।’’ পৌনে এক ঘণ্টা বাড়িতে কাটিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, মিশনারিজ অব চ্যারিটির একটি হোমেই আপাতত থাকবেন তিনি।

কঙ্কালটি যে দেবযানীর সে বিষয়ে যেমন নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ, তেমনই তিনি যে খুন হননি, তা-ও মেনে নিয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে দিদির সৎকার না করা, দুর্গন্ধ ও মারাত্মক রোগ ছড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য পার্থর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর চার্জশিট দেওয়ার পরে ১৯ জানুয়ারি ব্যাঙ্কশাল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন পার্থ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

ফিরবেন না বাড়িতে, পার্থ মাদার হাউসেই গেলেন

ঘটনার পরেই চিকিৎসার জন্য পার্থকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়েছিল কোর্ট। সেখান থেকে সুস্থ হওয়ার পরে তিনি চলে গিয়েছিলেন মাদার হাউসে। তাঁর ফ্ল্যাট ‘সিল’ করে দিয়েছিল পুলিশ। এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে বিচারক অনুপম সরকারের এজলাসে পার্থের আইনজীবী মৃণালিনী মজুমদার জানান, পার্থ বাড়িতে ফিরতে চান। তাই চাবি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হোক। বাজেয়াপ্ত হওয়া যে সব জিনিসপত্র আদালতে নথি হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি, সেগুলিও ফেরত দেওয়া হোক। অরবিন্দবাবু ও দেবযানীর মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার আর্জিও জানান ওই আইনজীবী। বিশেষ সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় জানান, আদালত তিনটি আর্জি মঞ্জুর করে।

এ দিন বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ পার্থ, তাঁর ঘনিষ্ঠ এক পাদ্রীকে নিয়ে রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে পৌঁছন কঙ্কাল কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার স্বরাজ দাস। এত দিন লাগানো তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। নতুন একটি তালা কিনে এনে পার্থের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। ভিতরে ঘুরে-ফিরে নিজের কয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়েছেন তিনি। পরে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘‘বাড়িটা নিয়ে কী করব, তা এখনও ঠিক করিনি। কাকার সঙ্গে কথা বলে দেখব।’’ তিনি ফের কবে ফিরবেন তা-ও জানাননি তিনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পর থেকে তাঁর পিছনে যে ভাবে সংবাদমাধ্যম দৌড়ে বেড়াচ্ছে, তাতেও যারপরনাই ক্ষুব্ধ তিনি। এ দিন কথা বলার আগে ঘনিষ্ঠ-পরিচিতদের সে কথা জানিয়েছেন তিনি। এবং রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি ছেড়ে বেরনোর আগে বলে যান, ‘‘কফিশপে গেলে সাংবাদিকেরা পিছু নিক, এটা আমি চাই না। আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE