Advertisement
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আজ থেকে আলু ব্যবসায় কর্মবিরতি, সঙ্কটের আশঙ্কা

পুজোর মুখে আলু নিয়ে ফের সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে এ রাজ্যে। পুরুলিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের উপরে পুলিশের ‘নির্যাতন’ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠক এখনও না হওয়ায় আজ, মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আলু ব্যবসায়ীরা। ফলে, আজ থেকে রাজ্যের সমস্ত হিমঘরে আলু ওঠানো-নামানো বন্ধ থাকবে। বাজারেও সে ভাবে আলু পৌঁছবে না। যদি কিছু আলু পৌঁছয়, দামবৃদ্ধি প্রায় অবধারিত।

পুলিশের ভয়ে বস্তা বোঝাই আলু যাচ্ছে বাসে চেপেই। সোমবার বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা গ্রামে। ছবি: শুভ্র মিত্র

পুলিশের ভয়ে বস্তা বোঝাই আলু যাচ্ছে বাসে চেপেই। সোমবার বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা গ্রামে। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

পুজোর মুখে আলু নিয়ে ফের সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে এ রাজ্যে।

পুরুলিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের উপরে পুলিশের ‘নির্যাতন’ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠক এখনও না হওয়ায় আজ, মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আলু ব্যবসায়ীরা। ফলে, আজ থেকে রাজ্যের সমস্ত হিমঘরে আলু ওঠানো-নামানো বন্ধ থাকবে। বাজারেও সে ভাবে আলু পৌঁছবে না। যদি কিছু আলু পৌঁছয়, দামবৃদ্ধি প্রায় অবধারিত। আর এই পরিস্থিতির দায় রাজ্য সরকারের উপরেই চাপিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সোমবার আরামবাগে রাজ্যের আলু ব্যবসায়ীদের অন্যতম বড় সংগঠন ‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র তরফে এক বৈঠকে ওই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠকে বসিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের ডাকা তিন দিনের ধর্মঘট প্রত্যাহার করিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়। বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফর শেষে কলকাতায় ফিরে এলেই তাঁদের সঙ্গে তিনি মুখোমুখি বসার ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করা হলেও এখনও কিছুই হয়নি। সারদা-কাণ্ডকে ঘিরে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেই বৈঠকের সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই মনে করছেন তাঁরা।

সমিতির সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “মুকুলবাবু আমাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনায় বসিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত কিছুই হয়নি। উল্টে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ আমাদের আলু আটকে দিচ্ছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলাতেও আলু পাঠাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যে কারণেই সমিতির সব সদস্যদের সম্মতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, ব্যবসায়ীদের এই সিদ্ধান্তের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “আমি ধর্মঘট না করার অনুরোধ জানিয়েছি। আলু ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে হবে। এর পরেও যদি তাঁরা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত অনড় থাকেন, তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।” দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য গত দেড় মাস ধরেই রাজ্য সরকার বিভিন্ন ভাবে আলুর জোগান বা রফতানির উপরে হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ থাকলেও বাজারে ২০-২২ টাকা দরেই জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে। চন্দ্রমুখীর দাম কেজিপিছু ২৪-২৫ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।

মাঝে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে আলু ব্যবসায়ীদের ডেকে বৈঠক করেন। সে দিন ব্যবসায়ীরা ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি চান। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য ছিল, রাজ্যের হিমঘরগুলিতে যে পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে, তাতে অন্য রাজ্যে আলু পাঠালেও এখানকার বাজারে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু ওই বৈঠকে সরকারের তরফে ব্যবসায়ীদের শর্ত দেওয়া হয়, ১২ টাকা কেজি দরে সরকারকে প্রতিদিন ৩০০ টন আলু দিলে বাইরে ৭০০ টন আলু তাঁরা পাঠাতে পারবেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেই শর্ত মানতে পারেননি। প্রতিবাদে ১ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিনের আলু ধর্মঘটের ডাক দেন তাঁরা। মুকুল রায়ের দৌত্যে সেই ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়। গোলমাল বাধে রাজ্যের নানা প্রান্তে আলুর ট্রাক আটকানো নিয়ে। রবিবারই পুরুলিয়ার ছড়রার কাছে, পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে বাঁকুড়ার এক আলু ব্যবসায়ীকে হেনস্থা, মারধরের অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। ওই ব্যবসায়ী হাসপাতালে ভর্তি। তাই তড়িঘড়ি সোমবার ওই বৈঠক ডাকা হয়। এর আগে ঝাড়খণ্ডে পাঠানোর চেষ্টার অভিযোগে শনিবার বীরভূমের মহম্মদবাজারেও ৮টি আলু ভর্তি ট্রাক আটকান স্থানীয় বাসিন্দারা। রাতেই পুলিশ ট্রাকগুলি আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমঘরগুলিতে এখনও ৩০ লক্ষ টন আলু মজুত আছে। তার মধ্যে বড়জোর এ রাজ্যের জন্য লাগবে ১২ লক্ষ টন। অর্থাৎ, এখনই ১৮ লক্ষ টন আলু ভিন্ রাজ্যে না গেলে তা স্রেফ পড়ে থেকে নষ্ট হবে। কিন্তু সরকার সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

কিন্তু ধর্মঘট হলে আলু নিয়ে সাধারণ মানুষও যে জেরবার হবেন, তা মেনে নিয়েছেন ওই সংগঠনের নেতা বরেনবাবু। সমস্যার দায় তিনি পুরোপুরি রাজ্য সরকারের ঘাড়েই চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা এক মাস ধরে রাজ্য সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করছে না। পুলিশ এমন করছে আমরা যেন মাদকদ্রব্য বেচছি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE