রসায়নে নোবেল। জঁ পিয়ের শোভাজ, জে ফ্রেজার স্টোডার্ট ও বারনার্ড এল ফেরিঙ্গা
দেখতে ছোট, কাজে বড়!
মলিকিউল বা অণু দিয়ে এমন যন্ত্র তৈরি করলেন তিন বিজ্ঞানী, যা নড়বে-চড়বে, ঘুরে বেড়াবে। হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যাবো শরীরের ভেতরে যে কোনও কোষেও! এই আণবিক যন্ত্র বা মলিকিউলার মেশিন তৈরি করেই ২০১৬ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন বিজ্ঞানী— জঁ পিয়ের শোভাজ, জে ফ্রেজার স্টোডার্ট এবং বারনার্ড এল ফেরিঙ্গা।
১৮৩০ সালে প্রথম বৈদ্যুতিন যন্ত্র যখন আবিষ্কার হলো, তখন কি কেউ জানত সেই যন্ত্রের সাহায্যেই এক দিন গোটা পৃথিবী চলবে? ঘুরবে ফ্যান, ছুটবে ট্রেন! আজকের এই আণবিক যন্ত্রও ঠিক সেই ‘বাল্যবয়সে’, জানিয়েছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সস। তাদের মতে, এই যন্ত্রের ক্ষমতা যে কতটা অপরিসীম, তা এখনও বোঝাই যাচ্ছে না।
আণবিক যন্ত্র বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে?
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্সের অজৈব রসায়নের অধ্যাপক প্রদ্যোত ঘোষ বললেন, “এখানে কিছু সংখ্যক অণু একে অপরের সঙ্গে জোড়া থাকে। ঠিক যেমন, একটা শিকলের অংশ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাপমাত্রার তারতম্য বা রাসায়নিক বস্তুর অভিঘাতে এরা নড়ে-চড়ে।’’
আণবিক মানে ঠিক কতটুকু? অধ্যাপক ফেরিঙ্গা জানাচ্ছেন, হাজারখানেক যন্ত্র পাশাপাশি রাখলে সেটা একটা চুলের মতো ‘মোটা’ হবে! কিন্তু দেখতে খুদে হলেও এদের ক্ষমতা মোটেই কম নয়। ভবিষ্যতে চিকিৎসকেরা হয়তো ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই যন্ত্রই রক্তে ঢুকিয়ে দেবেন। তার পর সে নিজে নিজেই ক্যানসার আক্রান্ত কোষে পৌঁছে দেবে ওষুধ। ন্যানোটেকনোলজির দরজা খুলে দিয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড পি ফাইনম্যান। এ বার সেই রাস্তায় আরও এগিয়ে গেলেন এই তিন গবেষক।
কাল পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কারে তিন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। আজকের ঘোযণায় ইউরোপেরই তিনটি দেশকে মিলিয়ে দিল নোবেল কমিটি— ফ্রান্স, ব্রিটেন (স্কটল্যান্ড) ও নেদারল্যান্ডস। ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে পিএইচডি শেষ করেন শোভাজ। এখন তিনি সেখানকারই অধ্যাপক। স্টোডার্টের পিএইচডি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ১৯৬৬ সালে। এখন শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৮ সালে নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইডি করেন ফেরিঙ্গা। সেখানেই তিনি অধ্যাপনা করছেন।
আজকের নোবেলজয়ী গবেষণার তিনটি ধাপ। ১৯৮৩ সালে প্রথম পদক্ষেপটি করেছিলেন শোভাজ। দু’টো আংটির মতো দেখতে অণুকে একে অপরের সঙ্গে জুড়ে তৈরি করেছিলেন একটা শিকল। পরের পদক্ষেপটা স্টোডার্টের। ১৯৯১ সালে তিনি দেখিয়েছিলেন, সাইকেলের চাকার যেমন অ্যাক্সেল থাকে, ঠিক তেমন অণু দিয়ে তৈরি অ্যাক্সেলের উপর অণু দিয়ে তৈরি একটি চাকা অনায়াসেই ঘুরতে পারে। ১৯৯৯ সালে ফেরিঙ্গা বানিয়ে ফেলেন এই আণবিক যন্ত্র।
পুরস্কারের কথা শুনে বিস্মিত শোভাজ বললেন, ‘‘বহু পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু নোবেল তো সব কিছুর ওপরে।’’ স্টোডার্ট-কন্যা অ্যালিসন
নিজেও রসায়নবিদ। তাঁর কথায়, ‘‘শিকাগোতে ভোররাত। ঘুমের মধ্যে খবরটা পেয়ে বাবা চমকে উঠেছেন।’’
অনেক দিন আগে স্টকহল্ম বেড়াতে গিয়ে তাঁর জন্য চকোলেটের নোবেল পদক এনেছিলেন স্টোডার্ট। ‘‘আর এ বার আসল পদক পাবেন তিনি,’’ খুশি ঝরে পড়ল মেয়ের গলায়। আর ফেরিঙ্গা? ‘‘আমি শক্ড!’’ বললেন তৃতীয় নোবেলজয়ী। তারপর হাসতে হাসতে যোগ করলেন, “১০০ বছর আগে রাইট ব্রাদার্স যখন আকাশে ওড়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন, লোকেরা প্রশ্ন করেছিল, উড়ন্ত যন্ত্রের কোনও প্রয়োজন আছে কি...? আজ নিজেকে রাইট ব্রাদার্সের মতোই লাগছে !”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy