সামান্য জ্বর হল তো খেয়ে নাও অ্যান্টিবায়োটিক! পেট খারাপ হয়েছে? তুরন্ত অ্যান্টিবায়োটিক চালান করে দাও পেটে!! ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকের নির্বিচার ব্যবহারে আখেরে অবস্থাটা এমন দাঁড়াচ্ছে যে, ওই সব ওষুধে আর কাজই হচ্ছে না। কেননা শরীরে ওই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধী শক্তি তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ বার এমন এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে জীবাণুরা কখনওই প্রতিরোধের পাঁচিল গড়ে তুলতে পারবে না। যে-রোগের জন্য সেটি সেবন করা হবে, প্রতিহত হবে না তার নিরাময়। শুধু তা-ই নয়, ওই নতুন প্রজাতির অ্যান্টিবায়োটিকের যে-বাড়তি অংশ রোগীর শরীর থেকে বেরোবে, তা সহজেই প্রকৃতিতে মিশে বিলীন হয়ে যাবে। ফলে জল আর কৃষিজাত দ্রব্যের সঙ্গে মিশে তারা সুস্থ মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর দেহে ঢুকে বিপত্তি ঘটাতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার বসু বিজ্ঞান মন্দিরের ১০১তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এসে এই আশার কথাই শোনালেন নোবেলজয়ী রসায়নবিদ আডা ইয়োনাথ।
কিন্তু এই নতুন প্রজাতির অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করার প্রয়োজন আদৌ দেখা দিল কেন?
আডা জানান, অ্যান্টিবায়োটিকের বহুল ব্যবহারে ক্রমশই ভোঁতা হয়ে পড়ছে ওই জীবনদায়ী ওষুধের ধার। যে-সব জীবাণুকে প্রতিরোধ করার জন্য তাদের সৃষ্টি, তারা আর ওই ওষুধে মরছে না। মানুষের শরীরে অকেজো ওই অ্যান্টিবায়োটিক শরীর থেকে বেরিয়ে মিশে যাচ্ছে প্রকৃতিতে। জল এবং কৃষিজাত দ্রব্যের মাধ্যমে সেগুলো ঢুকে পড়ছে এমন সব মানুষের শরীরে, যাঁদের ওই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনই নেই। ফলে জটিল হয়ে পড়ছে ওই সব মানুষের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তাঁদের শরীরে নানান প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে ওই ওষুধ। পরবর্তী কালে তাঁদের শরীরে কোনও ধরনের সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না। তাই জীবনদায়ী বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যবহার করা যাবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। তাই বিশ্ব জুড়ে নতুন প্রজাতির অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওই নোবেলজয়ী রসায়নবিদ।
‘‘নতুন চরিত্রের অ্যান্টিবায়োটিকই আগামী দিনে মানবজাতির সুরক্ষায় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে,’’ আশ্বস্ত করলেন আডা। নতুন চরিত্রের যে-অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি নিয়ে গবেষণা চলছে, তা পরিবেশবান্ধব হবে বলে দাবি করেছেন ওই বিজ্ঞানী। অর্থাৎ ওই ওষুধের বাড়তি অংশটুকু রোগীর শরীর থেকে বেরিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবে নষ্ট হয়ে মাটি বা জলের সঙ্গে মিশে যাবে। তার ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের ওই অবশেষ খাদ্যশৃঙ্খল বা জলে মিশে সুস্থ মানুষের শরীরে ঢুকে অন্য কোনও বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠবে না।
অনেক পরিবেশবিদের বক্তব্য, রোগ নিরাময়ের গুণাবলি ছাপিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক এখন অনেক ক্ষেত্রে মানুষের বিপদ ডেকে তো আনছেই। পশুপাখিদের চিকিৎসার জন্য যে-সব অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, সেগুলোও একই ভাবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসার যে-সঙ্কট দেখা যাচ্ছে, তার জন্য এই সব কারণকেও দায়ী করছেন অনেক চিকিৎসক। তাঁরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকে আর সারছে না। শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। তাতে শরীরের ক্ষতি হচ্ছে নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জেরে।
আডা জানান, অ্যান্টিবায়োটিকের এই বিপজ্জনক দিকটাকেই নির্মূল করতে চাইছে এখনকার গবেষণা। বর্তমান গবেষণা বলছে, এমন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা জরুরি, যা থেকে আর কখনও প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়া তৈরিই হবে না। এবং তা অবশ্যই হবে পরিবেশের বন্ধু। ইউনিভার্সিটি অব ম্যাকাওয়ের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি পরিবেশবান্ধব অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান দিয়েছেন। তাঁদের গবেষণাপত্র রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির জার্নালে বেরিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy