Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Science

মঙ্গলে আবার মিলল প্রাচীন সভ্যতার স্তম্ভ? নাসা কী বলছে?

‘সভ্যতার (সিভিলাইজেশন) চিহ্ন’ মিলল আমাদের বড় কৌতূহলের ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে! একেবারে একটি সরলরেখায় নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে মঙ্গলের পিঠে মাথা উঁচিয়ে রয়েছে তিন-তিনটি স্তম্ভ বা মিনার বা ‘টাওয়ার’!

‘লাল গ্রহ’ মঙ্গল।

‘লাল গ্রহ’ মঙ্গল।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ১০:৩৫
Share: Save:

‘সভ্যতার (সিভিলাইজেশন) চিহ্ন’ মিলল আমাদের বড় কৌতূহলের ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে!

একেবারে একটি সরলরেখায় নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে মঙ্গলের পিঠে মাথা উঁচিয়ে রয়েছে তিন-তিনটি স্তম্ভ বা মিনার বা ‘টাওয়ার’! সেই ‘টাওয়ার’গুলির ছবি দেখিয়ে একদল ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’ বিজ্ঞানীর দাবি, ‘লাল গ্রহে’ যে এখনও রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব (বা, আরও সঠিক ভাবে ‘সভ্যতা’র অস্তিত্ব), ওই ‘চিহ্ন’গুলিই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। শুধু ‘ঠুনকো’ দাবি নয়, তাঁরা সেই ছবির একটি ভিডিও ছড়িয়েও দিয়েছেন ইউটিউব চ্যানেলে। যাঁরা ওই ভিডিওটি ছড়িয়েছেন ইউটিউব চ্যানেলে, সেই ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’দের দলটির নাম- ‘মানডোডএস্কোনোসিডো’। যেটা অবাক হওয়ার মতো ঘটনা, তা হল- ওই ভিডিওয় যে স্তম্ভ (বা, মিনার) বা ‘টাওয়ার’গুলি দেখানো হয়েছে, তার প্রত্যেকটির উচ্চতা সাড়ে চার কিলোমিটারেরও বেশি (৪.৮ কিলোমিটার)। আর তিনটি ‘টাওয়ার’ই রয়েছে একটি সরলরেখায়। এবং নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে। ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’দের বক্তব্য, অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি-প্রকৌশল ছাড়া এত উঁচু ‘টাওয়ার’ বানানো সম্ভব নয়। আর মঙ্গলে যদি উন্নত বা উন্নততর সভ্যতা না থাকত বা এখনও টিঁকে থাকে, তা হলে ওই ধরনের ‘টাওয়ার’ বানানো কখনওই সম্ভব নয়। যাঁরা মঙ্গলে এখনও প্রাণ বা উন্নত সভ্যতার অস্তিত্ব রয়েছে বলে দাবি করেন, বিশ্বাস করেন ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ (ইউএফও) পাঠায় ভিনগ্রহীরাই, তাঁদেরই বলা হয় ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’। তবে নাসা এই দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করেছে।

‘সভ্যতার চিহ্ন’ মঙ্গলে? দেখুন ভিডিও। সৌজন্যে: ক্লোজ এনকাউন্টার ইউএফও


মঙ্গলে এই সেই তিন ‘টাওয়ার’...

কোথা থেকে পাওয়া গেল ‘লাল গ্রহে’র ওই সুবিশাল, সুউচ্চ ‘টাওয়ার’গুলির ছবি?

‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’দের দাবি, ওই সব ছবি নাসার ‘মার্স গ্লোবাল সারভেয়ার’ ও ‘মার্স ওডিসি মিশন’ মহাকাশযানগুলির পাঠানো। কিন্তু সেগুলি কী ভাবে মঙ্গলে এল, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তার কোনও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাননি বা যে কোনও কারণেই হোক সেই ব্যাখ্যা দিতে চাননি বলে, নাসা ওই ছবিগুলি নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। এমন উঁচু ‘টাওয়ার’ কখনও জল বা বায়ুপ্রবাহের জন্য তৈরি হতে পারে না। ওই ‘টাওয়ার’গুলির অস্তিত্বই মঙ্গলে ‘উন্নততর সভ্যতা’র আদর্শ প্রমাণ।

মঙ্গলে ‘সভ্যতার চিহ্ন’! দেখুন ভিডিও।

দীর্ঘ দিন ধরেই অবশ্য ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’রা বলে আসছেন, এখনও উন্নততর প্রাণ ও সভ্যতা টিঁকে রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের অন্যান্য প্রান্তে। তাঁরা এও বলে আসছেন, এখনও ‘উন্নততর সভ্যতা’র অস্তিত্ব রয়েছে ‘লাল গ্রহ’- মঙ্গলে।

নাসা বা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ বা, ‘এসা’) জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অবশ্য বরাবরই সেই দাবি অস্বীকার করে আসছেন, সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্যপ্রমাণ তাঁদের হাতে না থাকায়।


মঙ্গলে এই সেই তিন ‘টাওয়ার’ (ভিন্ন কৌণিক অবস্থানে)


‘প্রাণে’র মঙ্গল, স্বপ্ন, সম্ভাবনারও...

মঙ্গলে ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’দের এই ‘টাওয়ার-দাবি’ নিয়ে কী বলছে নাসা?

আরও পড়ুন- এখনও জল, বরফ মঙ্গলে, খোঁজ মিলল এই প্রথম

এ বারও নাসা উড়িয়ে দিয়েছে ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’দের এই দাবি। আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) মিডিয়া সেলের অন্যতম মুখপাত্র মালবিকা দত্তশর্মা ও নাসার গডার্ড স্পেস সেন্টারের মিডিয়া সেলের অন্যতম মুখপাত্র গাই ওয়েবস্টারের সঙ্গে। পাসাডেনা থেকে ই-মেলে মালবিকা ও গাই, দু’জনেই যা জবাব দিয়েছেন আনন্দবাজারের প্রশ্নের, তার নির্যাসটা হল-


‘প্রাচীন জাহাজ’? নাকি এটাও ‘প্যারেইডোলিয়া?


মোরগ? বা, অন্য কোনও ‘প্রাণী’? নাকি এটাও ‘প্যারেইডোলিয়া?

১) নাসা বা ‘এসা’ ওই ‘টাওয়ার’গুলিকে মঙ্গলে ‘সভ্যতার চিহ্ন’ বলে আদৌ মনে করে না।

২) ওই ‘টাওয়ার’গুলিকে দূর থেকে দেখা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তারা এক্কেবারে সরলরেখায় রয়েছে। কাছে গিয়ে দেখলে হয়তো বোঝা যাবে, সেগুলি নির্দিষ্ট কোনও সরলরেখায় নেই।

নাসার রোভারের চোখে মঙ্গলে ‘প্রাণের চিহ্ন: সৌজন্যে: সিসিটিভি নিউজ

৩) দূর থেকে দেখা হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে, সেই ‘টাওয়ার’গুলি শুধুই যে সরলরেখায় রয়েছে, তা নয়; সেগুলি রয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানেও। কিন্তু খুব কাছ থেকে দেখলে হয়তো সেই ভুল ভেঙে যেতে পারে।


ছৌ নাচের মুখোশ নয়।‘মানুষের মুখ’ মঙ্গলে? নাকি, এটাও ‘প্যারেইডোলিয়া?


৪) আকাশে মেঘ বা বরফে ঢাকা উঁচু উঁচু পাহাড়েও অনেক সময় মানুষ বা পশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ‘প্রতিকৃতি’ লক্ষ্য করা যায়। সেটা আসলে দৃষ্টির বিভ্রান্তি। এ ক্ষেত্রেও তারই সম্ভাবনা বেশি। আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহের বাসিন্দারা যখন মহাকাশে কোনও অজানা, অচেনা, অদেখা মহাজাগতিক বস্তুর হগিশ পান প্রথম, তখনই তাঁরা সেটিকে পৃথিবীতে দেখা বা পাওয়া কোনও বস্তুর চেহারা বা আকার-আকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে ভালবাসেন। মিলিয়ে দেখেন। কিন্তু সেটা কিছুতেই বাস্তব হতে পারে না। এই ঘটনাটাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে- ‘প্যারেইডোলিয়া’।


‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’দের এই সেই ‘মানুষের মুখ’? মঙ্গলে।


এটা কী জিনিস? এটাও কি ‘প্যারেইডোলিয়া?

৫) এর আগেও ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’রা মঙ্গলে ‘মানুষের মুখের প্রতিকৃতি’ (‘ফেস অন মার্স’) দেখতে পেয়েছেন বলে হই চই করেছিলেন। কিন্তু পরে তার স্বপক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি, অন্তত এখনও পর্যন্ত।


‘প্রাণ’ বা ‘সভ্যতার চিহ্ন’ খোঁজার সম্ভাব্য জায়গাগুলি। মঙ্গলে।

আরও পড়ুন: রত্ন, মণি, মাণিক্যের মেঘে ঢাকা ভিন গ্রহের হদিশ মিলল এই প্রথম

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy