Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Science News

দেখতে পেল না নাসার অরবিটার, শেষঘুমে বিক্রম! রাত নেমে এল চাঁদে

বিক্রম, তুমি হয়তো জানতে পারলে না, তোমার খোঁজ পাওয়ার শেষ চেষ্টা চালানো হয়েছিল গত ১৭ সেপ্টেম্বর। মঙ্গলবার রাতে। তুমি যেখানে নেমেছ, চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে গত মঙ্গলবার তার উপরে এসেছিল নাসার পাঠানো উপগ্রহ ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার’ (এলআরও)। তোমাকে দেখার জন্য অতটা উচ্চতা থেকেও নীচে ‘তাকিয়েছিল’ এলআরও।

ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। ছবি- এএফপি।

ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। ছবি- এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:২৭
Share: Save:

‘রেস্ট ইন পিস’! আরআইপি ‘বিক্রম’! এ বার শান্তিতে ঘুমোও চাঁদের বুকে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। হাড়জমানো ঠান্ডায়। চাঁদের টানা ১৪ দিনের ঘোর অন্ধকার রাতে। তোমার হদিশ পাওয়ার শেষ চেষ্টাও কাজে লাগল না যে!

বিক্রম, তুমি হয়তো জানতে পারলে না, তোমার খোঁজ পাওয়ার শেষ চেষ্টা চালানো হয়েছিল গত ১৭ সেপ্টেম্বর। মঙ্গলবার রাতে। তুমি যেখানে নেমেছ, চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে গত মঙ্গলবার তার উপরে এসেছিল নাসার পাঠানো উপগ্রহ ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার’ (এলআরও)। তোমাকে দেখার জন্য অতটা উচ্চতা থেকেও নীচে ‘তাকিয়েছিল’ এলআরও।

কিন্তু নাসা জানিয়েছে, বিক্রমের দেখা পাওয়া সম্ভব হয়নি এলআরও-র। কারণ, এলআরও গত মঙ্গলবার যে সময়ে পৌঁছেছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উপরের কক্ষপথে, তখন সেখানে রাত নামব নামব করছে। চার পাশে ছড়িয়ে পড়েছে গোধূলির আলো। চাঁদের পিঠের উপরটা যেন ভরে রয়েছে ধোঁয়ায়! সেই ধোঁয়া ফুঁড়ে গোধূলির আলোয় এলআরও-র পক্ষে আর তোমাকে ঠাওর করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন- একটা সাফল্যের পিছনে অজস্র ব্যর্থতা! বিজ্ঞানের ইতিহাসই তো ইসরোর সম্বল

আরও পড়ুন- কালামের জেদেই ভেঙে পড়েছিল ইসরো রোহিনী! ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করেছিলেন এক বছরের মধ্যেই​

শূন্যের ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচের তাপমাত্রার হাড়জমানো ঠান্ডায় রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। বুধবার মাঝরাত থেকে। ১৪টি পার্থিব দিনের পর। চাঁদে সেই দিন শুরু হওয়ার ভোরে চন্দ্রযান-২-এর সঙ্গী ল্যান্ডার বিক্রম দক্ষিণ মেরুতে নেমেছিল গত ৭ সেপ্টেম্বর। ভারতীয় সময় রাত ১টা ৫৫ মিনিটে।

কিন্তু তার তিন চার মিনিট আগে থেকেই বিক্রমের সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল চন্দ্রযান-২-এর অরবিটারের।

নাসার গত কালের বিবৃতির পর আর কেউ বিক্রমকে ডাকাডাকি করবে না। বিক্রমের রেডিও সিগন্যালের জন্য উৎকণ্ঠা নিয়ে আর কেউ অপেক্ষাও করবে না।

সকলেই জানেন, সেই অপেক্ষা করাটা একেবারেই অর্থহীন হয়ে গিয়েছে। কারণ, বিক্রম ল্যান্ডার আর তার শরীরের ভিতরে থাকা রোভার ‘প্রজ্ঞান’-এর চলার কথা সূর্যের আলোয়। সৌরশক্তিতে। সেই সৌরশক্তিকে ধরার জন্য বিক্রমের শরীরে বসানো ছিল সোলার প্যানেল।

কিন্তু বুধবার থেকেই যেহেতু ১৪টি পার্থিব দিনের মেয়াদের রাত শুরু হয়ে গেল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আর সেই রাতের তাপমাত্রা যেহেতু শূন্যের ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে, তাই, অত ঠান্ডায় অত দিন ধরে বিক্রমের সোলার প্যানেলগুলি কার্যকর থাকার সম্ভাবনা নেই একেবারেই।

ফলে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রাত নামার আগে বিক্রমের খোঁজ পাওয়ার শেষ চেষ্টা চালিয়েছিল নাসার এলআরও। তার আগে চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার চাঁদের পিঠ থেকে ১০১ কিলোমিটার উপরের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে বিক্রমের শেষ ছবিটা তুলেছিল গত ৮ সেপ্টেম্বর। চাঁদের বুকে তার অবতরণের এক দিন পর। সেটি অবশ্য ছিল তার অবয়বের ছবি। যাকে বলা হয়, ‘থার্মাল ইমেজ’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE