নিজের খোঁড়া কুয়োয় বাপুরাও।
কতটা পথ পেরলে তবে পথিক বলা যায়...
কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়...
আর কতটা ক্ষোভ জমলে বুকে টানা ১৪ ঘণ্টা মাটি খুঁড়ে ৪০ দিনে জলের একটা কুয়ো বানিয়ে ফেলা যায়?
ক্ষোভ তো ছিলই বহু দিন ধরে। উচ্চবর্ণের আচার-আচরণে।
সেই ক্ষোভটাই উস্কে দিয়েছিল মার্চের একটা ঘটনা। যখন তাঁর স্ত্রী গ্রামের অন্য প্রান্তে এক উচ্চবর্ণের মানুষের কুয়োয় জল তুলতে গিয়ে দারুণ ভাবে অপমানিত হয়েছিলেন। দূর দূর করে তাঁর স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। দলিত বলে। ওই কুয়ো থেকে জল তুললে উচ্চবর্ণের মানুষজনের ‘জাত যাবে’ বলে!
কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর মুখে সে কথা শুনেই মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল বাপুরাও তাজেঁর। তর সয়নি তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছিল বাজারে। কুয়ো খোঁড়ার যন্ত্রপাতি কিনতে। সেই সব যন্ত্রপাতি দিয়ে পরের দিন সকাল থেকেই কুয়ো খোঁড়া শুরু করেছিল দিন আনা, দিন খাওয়া শ্রমিক বাপুরাও। নাগপুরের ওয়াসিম জেলায় কলম্বেশ্বর গ্রামে। দিনে ৬ ঘণ্টা করে বাপুরাও মাটি খুঁড়তেন, সপ্তাহে ৭ দিনই। কিন্তু শুধুই তো কুয়ো খুঁড়লে চলবে না। কাজে না গেলে তো মজুরি মিলবে না। অথচ স্ত্রী, দুই শিশুর মুখে তো অন্ন তুলে দিতে হবে। তাই আট ঘণ্টার দিন মজুরির কাজেও বাপুরাও ফাঁকি দেননি এক দিনও। সেই কাজে যাওয়ার আগে, সকালে ঘুম থেকে উঠে চার ঘণ্টা করে মাটি খুঁড়তেন বাপুরাও। আবার কাজ সেরে বাড়ি ফিরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’ঘণ্টা করে মাটি খুঁড়তেন তিনি, অক্লান্ত।
কেউ পাশে দাঁড়াননি বাপুরাওয়ের। স্ত্রী, আত্মীয়-পরিজনরাও টিপ্পনি কেটেছেন। পাড়া-পড়শিরা, অন্য দলিতরাও মুচকি হেসেছেন তখন বাপুরাওকে দেখে। কারণ, ওই তল্লাটে কোনও জায়গায় জলের দেখা মেলেনি দীর্ঘ দিন। তিন-তিনটে কুয়ো বন্ধ হয়ে গিয়েছে জলের অভাবে। অচল হয়ে গিয়েছে একটা টিউবওয়েলও। সকলেই বলেছিলেন, ‘‘বাপুরাও, করছটা কী? এখানে কি কেউ জল পায়! তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছ?’’
আরও পড়ুন- রাজস্থানে স্কুলপাঠ্য থেকে বাদ নেহরু, বাদ গাঁধী ঘাতকও!
যেন সময়ের অপচয় করে চলেছেন বাপুরাও!
কিন্তু কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়?
৪০ দিন। দিনে ১৪ ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ৪০ দিনে শেষমেশ মাটির ১৫ ফুট তলায় প্রচুর জলের হদিশ পেয়ে গিয়েছেন বাপুরাও। বানিয়ে ফেলেছেন ৬ ফুট চওড়া কুয়ো। চাইছেন, আরও ৫ ফুট গভীরতায় খুঁড়তে। আর চাইছেন, কুয়োটাকে অন্তত ৮ ফুট চওড়া করতে। এখন পাড়া-পড়শিরা তাঁর কুয়ো থেকেই জল নিয়ে যায়। একেবারে ধন্যি ধন্যি পড়ে গিয়েছে বাপুরাওয়ের। তাঁর স্ত্রীও এখন সখেদে বলেন, ‘‘কেন যে ওই দিনগুলোয় ওকে অত গঞ্জনা দিয়েছি, এখন কষ্ট হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy