Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Arvind Kejriwal

বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে, কেজরীবালের থেকে মুখ ফেরাল দিল্লি

ঘরের মাঠে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছিলেন। তার পর ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার প্রচেষ্টায় শামিল হন। সেখানে পর্যুদস্ত হওয়ার পর এ বার ঘরের জমিও খোয়ালেন অরবিন্দ কেজরীবাল।

অরবিন্দ কেজরীবাল। —ফাইল চিত্র।

অরবিন্দ কেজরীবাল। —ফাইল চিত্র।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ১৬:০৮
Share: Save:

ঘরের মাঠে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছিলেন। তার পর ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার প্রচেষ্টায় শামিল হন। সেখানে পর্যুদস্ত হওয়ার পর এ বার ঘরের জমিও খোয়ালেন অরবিন্দ কেজরীবাল।

এ বারের দিল্লি পুর নির্বাচনে শুধু আসন সংখ্যা নয়, যে ভাবে আম আদমি পার্টির শতকরা ভোট কমে গিয়েছে তা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সম্পূর্ণ একমত যে সামগ্রিক ভাবে গোটা দেশে কেজরীবাল নামক যে রাজনৈতিক বৈশিষ্ট দু’বছর আগে যত দ্রুত উঠে এসেছিল, ঠিক তত দ্রুতই সেটি মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।

অণ্ণা হজারে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন থেকে আপ নামক রাজনৈতিক দলের জন্ম। অণ্ণ হজারেকে দূরে সরিয়ে রেখে দিল্লিতে যখন কেজরীবাল নতুন দল গঠন করলেন তখন তাঁর পক্ষে ছিল সহানুভূতির হাওয়া। গোটা দেশে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর ঝড় থাকা সত্ত্বেও, ২০১৫ সালে শীলা দীক্ষিতকে সরিয়ে বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। উল্টে অরবিন্দ কেজরীবাল দাপট দেখিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে। এর পর গত দু’বছরে কেজরীবালের জনপ্রিয়তার গ্রাফ নীচে নেমেছে। দুর্নীতির অভিযোগ দলের বহু নেতা জেলে গিয়েছেন। এমনকী অরবিন্দের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। দিল্লির পুর সমস্যার সমাধান তো হয়ইনি, উল্টে দেখা গিয়েছে কেজরীবাল প্রতি দিন প্রতিনিয়ত মোদী বিরোধী প্রচারে ব্যস্ত থেকেছেন। কেজরীবালের ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে হয়। দিল্লির বদলে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদী বিরোধী ফ্রন্ট গঠনে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।’’

আরও পড়ুন: কেজরীর গড়েও গেরুয়া গর্জন, দিল্লি পুরভোটে বিজেপির জয়জয়কার

দিল্লিতে বিজেপি ঝড়ের এই কারণটা কী?

ইভিএম-কেই দুষল আপ, অজুহাতের রাজনীতির হার বলছে বিজেপি

মোদী হাওয়া, অমিতের ম্যানেজমেন্ট, ১০০% নতুন প্রার্থীতেই বাজিমাত

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দলের অর্ধেকের বেশি বিধায়ক প্রকাশ্যে না হলেও, দলের ভিতরে কেজরীবালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন। এমনকী, অনেকে মণীশ সিসৌদিয়াকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। চাপ বাড়ছে কেজরীবালের উপর, যাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। পঞ্জাবের কেজরী ঘনিষ্ঠ ভগবন্ত মান বেসুরো গেয়ে বলেছেন, ‘‘হেরে যাওয়ার পরে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলা অনুচিত।’’ অলকা লম্বার মতো নেত্রী গতকালও বলেছিলেন, বিজেপি তাঁকে আপ ছেড়ে বিজেপির হয়ে লোকসভা প্রার্থী হওয়ার জন্য টোপ দিচ্ছে। সেই অলকাই আজ নির্বাচনী বির্পযয়ের পরে দল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সরব কেজরীবালের গুরু অণ্ণাও। তিনি তাঁর প্রাক্তন শিষ্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘সরকারে আসার আগে এরাই বলেছিল গাড়ি, বাংলো বা বেতন নেবে না। অথচ, কোনও প্রতিশ্রুতি রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রীরা। দিল্লির বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কথায় ও কাজে এই ফারাকের জন্য এরা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।’’

ভারতের বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কেজরীবাল নবাগত হলেও, ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কংগ্রেস ও বিজেপি, দু’টি জাতীয় দলের মেরুকরণের বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসাবে আপ বিকশিত হয়েছিল। প্রকাশ কারাটের মতো কমিউনিস্ট নেতা একদা বলেছিলেন, বামপন্থীদের রাজনৈতিক পরিসরই কেজরীবাল দখল করে নিচ্ছেন। ধনীতন্ত্রের বিরুদ্ধে আম জনতার রাজনীতিকে মূলধন করে দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন কেজরীবাল। দিল্লির বস্তিবাসী, অটো রিকশাওয়ালা সমাজ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি কেজরীবালকে তৃতীয় শক্তি হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। এ বার দিল্লির পুরভোটে তারাই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করল গলায় মাফলার দেওয়া বুশ শার্ট আর চটি পরা কেজরীবালকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Arvind Kejriwal Delhi Election MCD Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE