সংসদে বৃহস্পতিবার রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর রেল বাজেট দ্রুত শেষ করার প্রতি আগ্রহ দেখে রবীন্দ্র-গানের একটি পংক্তি মনে পড়ে যাচ্ছে। ‘অনেক কথা যাও যে ব’লে কোনো কথা না বলি...’।
কমপক্ষে গত ৩৫ বছরে কোনও রেলমন্ত্রী আয়-ব্যয়ের বিন্দুমাত্র হিসেব না দিয়ে রেল বাজেট পেশ করেননি। সুরেশ প্রভু বললেন না, ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে রেলের আয়ের উৎস আদপে কী। এমনকী, রেলের মোট আয়ের পরিমাণটাও জানালেন না। প্রকল্প ব্যয়ের মোট পরিমাণটাও তিনি জানালেন না। সংসদে তিনি জানিয়েছেন, আগামী আর্থিক বছরে রেলের ‘অপারেটিং রেশিও’ ৯২ করা হবে। কিন্তু কী ভাবে তা হবে, তার পথটাও তিনি বাতলাননি। যাত্রিভাড়া বা পণ্য মাসুল, কিছুই বাড়েনি। তবে, বিকল্প আয়ের যে রাস্তা তিনি দেখিয়েছেন, অর্থাৎ, স্টেশনের উন্নয়ন করে তাকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এবং পিপিপি মডেলে আয়ের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। বিগত কয়েক বছরের বাজেটে এগুলির একই ভাবে উল্লেখ ছিল। বলা বাহুল্য, শত চেষ্টা সত্ত্বেও এই পথে কার্যত কিছুই আয় হয়নি। যেহেতু, রেলমন্ত্রী বাজেটে বিশদ ব্যাখ্যায় জাননি, সেহেতু বোঝা যাচ্ছে না, এর দ্বারা কী ভাবে তিনি প্রকল্পগুলি রূপায়িত করবেন।
অবশ্য নতুন কোনও প্রকল্পের কথাও রেলমন্ত্রী তাঁর বাজেটে ঘোষণা করেননি। ঠিক তেমনই, চালু প্রকল্পগুলির মধ্যে কোন প্রকল্পে কত টাকা বরাদ্দ করছেন, তারও কোনও হিসেব তিনি দেননি। রেলমন্ত্রী সাধারণ মানুষের মন জয় করার জন্য শুধুমাত্র একগুচ্ছ পরিষেবার কথা উল্লেখ করেছেন। তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, এই বাজেটে সব বয়সের এবং প্রায় সব ধরনের মানুষের কথা মনে রেখে বাজেট তৈরি করেছেন। যেমন, বয়স্ক এবং শারীরিক অসুবিধা আছে, এমন যাত্রী, মহিলা, নতুন মা ও তাঁদের সদ্যোজাত, এককথায় আমআদমিকে খুশি করার প্রয়াস আছে। প্রশ্নটা হল, এটা কি পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বাজেট রচনা?
এরই পাশাপাশি স্বাভাবিক আরও একটা প্রশ্ন উঠছে। এ বারের রেল বাজেটে পশ্চিমবঙ্গ কী পেল? এককথায় বলতে গেলে, ছিটেফোঁটাও পায়নি পশ্চিমবঙ্গ! কিছু দিন আগে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় বলে গিয়েছিলেন, লক্ষ্য ২০১৯। ওই বছরেই পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তার মানে কি, এই ২০১৬-’১৭-র বাজেটে এ রাজ্যের জন্য তেমন কিছু না দিলেও চলে?
পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্প হিসেবে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, কলকাতা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলছে। যার প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২০১৮-র জুন। অর্থাৎ, সেই ২০১৯-এর আগে। এমনকী, গত বছর মেট্রো প্রকল্পগুলির কাজ প্রায় করাই যাচ্ছিল না। তখন প্রভু নিজেই বরাদ্দ করেছিলেন, ৫৭৯.৩৩ কোটি টাকা। আর এ বছর নির্বাচন সামনে থাকায় রাজ্য সরকার
যখন এই সব প্রকল্পের ব্যাপারে কিছুটা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে তখন বরাদ্দ কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৮ কোটি টাকায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যে সব প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, তার মধ্যে শুধুমাত্র ডানকুনি রেল সরঞ্জাম তৈরির কারখানা পেয়েছে মাত্র এক হাজার টাকা। তুলনায় অসমে অবস্থাটা ভাল। রেলমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, মিজোরাম এবং মণিপুর শীঘ্রই ব্রডগেজ রেল-ম্যাপে স্থান পাবে। গত রবিবার, অর্থাৎ বাজেটের ঠিক প্রাক্কালে শিলচর এবং ত্রিপুরা থেকে বদরপুর হয়ে ব্রডগেজ লাইন চালু করেছেন। এবং সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসও চালু করেছেন। বাজেটের ঠিক আগে করার ফলে এ বারের বাজেটে নতুন ট্রেন হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
ভোট সত্যিই বড় বালাই!
(লেখক পূর্ব রেলের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy