নজরে দেশের বৃহত্তম রাজ্যের কুর্সি দখলের যুদ্ধ। সে দিকে চোখ রেখেই সরকারের অর্ধেক মেয়াদ পূর্ণ করার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সম্প্রসারণ ও রদবদলের কাজে হাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আগামিকাল সকাল এগারোটায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ১৯ জন নতুন মন্ত্রী শপথ নেবেন। সংখ্যার নিরিখে মোদী জমানায় এটিই বৃহত্তম সম্প্রসারণ। কাজের নিরিখে একাধিক মন্ত্রকে রদবদলও করা হতে পারে। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৬৪। নতুন ১৯ জনকে ধরলে সংখ্যাটা সর্বোচ্চ সীমা টপকে যাবে। সে ক্ষেত্রে অন্তত ২ জনকে বাদ দিতেই হবে। তবে সরকারের অন্দরের খবর, বাদ পড়ার সংখ্যা তার থেকেও বেশি হতে পারে। বিজেপি সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ ভোটের দিকে তাকিয়ে রদবদলের সময় মাথায় রাখা হয়েছে সামাজিক সমীকরণও। উত্তরপ্রদেশের ভোটের ছাপ রদবদলে পড়ছে কি না, সে প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব অবশ্য দেননি মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘বাজেটে ঘোষিত সিদ্ধান্ত রূপায়ণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যেই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।’’ মোদীর বক্তব্য, তাঁর সরকার মূলত চারটি লক্ষ্যপূরণ করতে চায়। এক) অফিসের ফাইল দ্রুত পাশ করা, দুই) ব্যবসার পথ আরও সহজ করা, তিন) ক্যাবিনেট নোট তৈরির সময় কমানো এবং চার) সরকারের কোনও কাজ বাকি না রাখা।
অর্থ, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বিদেশের মতো চারটি প্রধান মন্ত্রকে কোনও হেরফের হচ্ছে না। তবে অর্থ মন্ত্রকের পাশাপাশি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব অনেক দিন ধরে সামলাচ্ছেন অরুণ জেটলি। তাঁর সেই ভার লাঘব করা হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে রাজধানীর অলিন্দে। পাশাপাশি সম্ভাব্য নতুন মন্ত্রীদের নাম বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের পিছনে রাজনৈতিক সমীকরণের অঙ্ক কী ভাবে কাজ করছে। উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে আরও বেশি দলিত ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকে (ওবিসি) মন্ত্রিসভায় আনছেন মোদী।
যেমন উত্তরপ্রদেশের প্রয়াত কুর্মি নেতা সোনেলাল পটেলের মেয়ে অনুপ্রিয়া পটেল। আপনা দলের এই ওবিসি সাংসদের পাশাপাশি রাজস্থানের পালি আসনের সাংসদ তথা দলিত নেতা পি পি চৌধরীর নাম তালিকায় রয়েছে। মহারাষ্ট্র থেকে এনডিএ জোটের শরিক আরপিআই দলের নেতা রামদাস আটাওয়ালেও এ বারে জায়গা পাচ্ছেন মন্ত্রিসভায়। ভোটমুখী উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার সাংসদ অজয় টামটা এবং লোকসভায় বিজেপির চিফ হুইপ অর্জুন মেঘওয়ালও মন্ত্রী হচ্ছেন। উভয়েই দলিত নেতা। উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণ মুখ মহেন্দ্র পাণ্ডে ঠাঁই পেয়েছেন নয়া তালিকায়। ক’দিন আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে মন্ত্রিসভা ও সংগঠনের রদবদল নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক করেন মোদী। তার পরেই আজ বিজেপি সভাপতির বাড়ির চা-চক্রে ডাক পান আদিবাসী নেতা ফগন সিংহ কুলস্তে, মধ্যপ্রদেশের অনিল দাভে, গুজরাতের পুরুষোত্তম রূপালা, দিল্লির বিজয় গোয়েলরা। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, পরবর্তী রদবদলে এঁরা ঠাঁই পাচ্ছেন মন্ত্রিসভায়।
শিকে ছিঁড়েছে বাংলারও। অরুণ জেটলি বিরোধী শিবিরের নেতা সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠ তথা দার্জিলিঙের সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া আজ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য ডাক পেয়েছেন দিল্লিতে। মোদী জমানায় বাবুল সুপ্রিয়র পর বাংলার আর এক সাংসদ কেন্দ্রে মন্ত্রী হচ্ছেন।
রদবদল হবে বিজেপি সংগঠনেও। মন্ত্রিসভার রদবদলের পরে এ নিয়ে ঘোষণা করবেন অমিত শাহ। রাওসাহেব পাটিল ও বিজয় সাম্পলার মতো দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মহারাষ্ট্র ও পঞ্জাবে দলের সভাপতি হয়েছেন। কেন্দ্রের প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অসমের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রদবদল অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
ক’দিন আগে মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিংহ চৌহান নিজের মন্ত্রিসভার রদবদল করতে গিয়ে ৭৫ বছরের বেশি বয়সীদের সরিয়েছেন। সেই সূত্র এখানে মানলে সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী নাজমা হেফতুল্লা এবং ছোট ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রী কলরাজ মিশ্রের ছুটি হওয়া উচিত। পদোন্নতি হতে পারে মুখতার আব্বাস নকভির। নতুন সংখ্যালঘু মুখ হিসেবে মন্ত্রিসভায় ঢুকছেন এম জে আকবর। পদোন্নতির দৌড়ে এগিয়ে আছেন পীযূষ গয়াল ও ধর্মেন্দ্র প্রধানের মতো মন্ত্রীও। অসুস্থতার কারণে বাদ যেতে পারেন দুই মন্ত্রী।
আগের সম্প্রসারণে শরিক শিবসেনার অনিল দেশাইকে প্রতিমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন মোদী। কিন্তু উদ্ধব ঠাকরে ক্যাবিনেট পদের নীচে নামতে চাননি। আজও উদ্ধব জানান, মন্ত্রিসভা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। তাঁরা মন্ত্রিত্ব নিয়ে কারও কাছে হাত পাতবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy