আক্রান্ত: হাসপাতালে উসমান। মঙ্গলবার রাঁচীর রিমসে। নিজস্ব চিত্র।
এখনও মাথা তুললেই অসহ্য যন্ত্রণা। শরীরে অজস্র ক্ষতচিহ্ন। নাক-চোখে জমাট বেঁধে রক্ত। বছর সত্তরের বৃদ্ধ শুধু বললেন, ‘‘যারা আমাকে মেরেছে তারা গুণ্ডা। ওদের কোনও ধর্ম নেই। আমাদের গ্রামে সবাই মিলেমিশে থাকে। তিন পুরুষ ধরে সেখানে রয়েছি। কখনও এমন হয়নি।’’
রাঁচীর রিমস হাসপাতালে অস্থি বিভাগে ভর্তি গিরিডির দেওরি থানার বেরিয়া-হাতিটাঁড়ের বাসিন্দা উসমান আনসারি। বিছানার পাশে বসে তাঁর ছেলে সেলিম, পুত্রবধূ গুলিস্তা খাতুন। সেলিম বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই ডুকরে কেঁদে উঠছে বাবা। বিড়বিড়িয়ে কী সব বলছে, বুঝতে পারছি না। খেয়াল হলে গ্রামের খোঁজখবর নিচ্ছে।’’ তিনি জানান, হানাদাররা তাঁদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আসবাবপত্র তছনছ করেছে। গোয়াল থেকে লুট করে নিয়ে গিয়েছে গরু, ছাগল, মুরগি। তাঁর মা এখন রয়েছেন থানার আশ্রয়ে। ছোট ভাই কলিম ধানবাদের শ্বশুরবাড়িতে। কলিমের রেশন দোকানও পুড়িয়ে দিয়েছে গো-রক্ষকরা।
চোখ বুজে সব শুনছিলেন উসমান। পুত্রবধূ গুলিস্তা বলেন, ‘‘সব জেনেশুনেও বাবা ফিরে যেতে চান ওই গ্রামেই। এক দিন জিজ্ঞাসা করছিলেন, যাঁরা আমাদের গরুর দুধ কিনতেন, তাঁরা এখন দুধ কোথা থেকে পাচ্ছেন?’’ সেলিম বলেন, ‘‘ওই এলাকার অনেকে আমাদের গোয়ালের গরুর দুধ কিনতেন। কখনও কেউ ধর্ম বিচার করেননি।’’
গণপিটুনির কথা বলতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠছিলেন উসমান। তা-ও বললেন, ‘‘অসুখ হয়েছিল গরুটার। মরে যাওয়ার পর দেহটাকে ভাগাড়ে ফেলে এসেছিলাম। গলায় কাটা দাগ কী ভাবে হল, জানি না। সবাইকে তা বলেছিলাম। কেউ বিশ্বাস করল না।’’ সেলিম বলেন, ‘‘ওই গ্রামে আমাদের আরও জমি রয়েছে। ওখানে ফের ঘর গড়বো।’’ চোখ উজ্জ্বল হল উসমানের। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা। হাবভাবে বুঝিয়ে দিলেন, হাসপাতালে আর নয়। দ্রুত ফিরতে চান নিজের গ্রামেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy