Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

মুসলিমদের ডিভোর্সের ‘জঘন্যতম প্রথা’ তিন তালাক: সুপ্রিম কোর্ট

তিন তালাকই মুসলিমদের বিবাহবিচ্ছেদের ‘জঘন্যতম’ প্রথা। বেআইনিও। দেশের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ শুক্রবার এ কথা বলেছে।

সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ১৬:২১
Share: Save:

তিন তালাকই মুসলিমদের বিবাহবিচ্ছেদের ‘জঘন্যতম’ প্রথা। বেআইনিও।

দেশের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ শুক্রবার এ কথা বলেছে। ওই বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি আর এফ নরিম্যান বলেছেল, ‘‘মুসলিম সমাজের একটা অংশে এমন ধারণা চালু রয়েছে যে, বিবাহবিচ্ছেদের জন্য তিন তালাক প্রথা নৈতিকতার মানদণ্ডে সঠিক। কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের এটাই জঘন্যতম প্রথা। বেআইনিও। তাই এই প্রথা মোটেই কাম্য নয়।’’ তিন তালাক প্রথা নিয়ে শুনানির দ্বিতীয় দিনে, শুক্রবার এই মন্তব্য করল শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। কোন কোন মুসলিম ও অ-মুসলিম দেশে মুসলিমদের বিবাহবিচ্ছেদের তিন তালাক প্রথাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট এ দিন তাও জানতে চেয়েছে। তবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব ও মরক্কোর মতো মুসলিমপ্রধান দেশে যে বিবাহবিচ্ছেদের তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ, আইনজীবীদের তরফে এ দিনই তা সাংবিধানিক বেঞ্চকে জানানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের সামনে এ দিনের শুনানিতে মুসলিম সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের তিন তালাক প্রথা নিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন দুই প্রবীণ আইনজীবী সলমন খুরশিদ ও রাম জেঠমালানি।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, আইনজীবী সলমন খুরশিদের বক্তব্য ছিল, ‘‘এই প্রথা (তিন তালাক) খতিয়ে দেখার তেমন কোনও প্রয়োজন নেই আদালতের। মুসলিম মহিলাদের যে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য এই প্রথা মেনে নিতেই হবে, তাও নয়। চাইলে, মুসলিম মহিলারা বিবাহবিচ্ছেদের এই তিন তালাক প্রথা নাও মানতে পারেন। তাঁদের সেই অধিকার দেওয়া আছে। সে ক্ষেত্রে মুসলিম মহিলারা তাঁদের ম্যারেজ সার্টিফিকেটে (‘নিকাহনামা’) শর্ত আরোপ করতে পারেন।’’

এর পরেই সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ আইনজীবী খুরশিদকে বলে, কোন কোন মুসলিম আর অ-মুসলিম দেশে মুসলিম সমাজে বিবাহবিচ্ছেদের তিন তালাক প্রথা ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার তালিকাটা আদালতে জমা দেওয়া হোক। সেই সময় আইনজীবীদের তরফে আদালতকে জানানো হয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব ও মরক্কোর মতো মুসলিমপ্রধান দেশে তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন- জোর ধাক্কা গাঁধী পরিবারে, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আয়কর তদন্তের নির্দেশ

তিন তালাক প্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষে জোর সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী রাম জেঠমালানি। তাঁর বক্তব্য, সংবিধানে যে সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে, এই প্রথা তার বিরোধী। জেঠমালানির কথায়, ‘‘বিবাহবিচ্ছেদের জন্য এই তিন তালাক দেওয়ার অধিকার শুধুই স্বামীদের দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর কোনও অধিকার বা মতামতের স্বাধীনতা নেই সেখানে। এটা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করছে। এই আইনে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বিয়ে করার মতো বিয়ে ভাঙার ক্ষেত্রেও স্বামী, স্ত্রী দু’পক্ষেরই মতামতের সমান ভূমিকা থাকা উচিত। কিন্তু এই তিন তালাক আইন একপেশে। তাই এটা অনৈতিক ও পরিহার্য।’’

এই তিন তালাক আইনে যে নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদের ছাপ স্পষ্ট, সাংবিধানিক আদালতকে এ দিন সেটাও জানান আইনজীবী জেঠমালানি। তাঁর কথায়, ‘‘এই আইনে লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে। যা পবিত্র কোরানের বাণীর সঙ্গে খাপ খায় না। এক জন বৈধ স্ত্রী শুধু তাঁর স্বামীর কথাতেই প্রাক্তন হয়ে যাবেন, এটা হতে পারে না। এখানে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে। তাই এই আইনের পক্ষে সওয়াল করাটাই অর্থহীন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Triple Talaq India Marriage Dissolution Laws
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE