২৪ ফেব্রুয়ারি: জেএনইউ কান্ড নিয়ে এই প্রথম বার মুখ খুলল তৃণমূল। লোকসভায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্কে সাংসদ সুগত বসু দেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত বর্ণনা করে অভিযোগ তুললেন, মোদী সরকার ‘সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদের’ প্রসার ঘাটচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদের নামে যে পথে চলছে কেন্দ্র, তা ঔপনিবেশিক নীতিকেই ফিরিয়ে আনার নামান্তর। সুগতবাবুর কথায়, ‘‘শুধুমাত্র সন্দেহজনক, জোর করে বানানো কিছু তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া চলে না।’’
প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ নৈঃশব্দের পর হঠাৎ আজ কেন বিষয়টি নিয়ে এতটা আক্রমণের পথে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল? শুধু তাই নয়, একজন ইতিহাসবিদ হিসাবে পরিপ্রেক্ষিতের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে যে বক্তৃতা আজ করলেন সুগতবাবু, তাতে প্রকাশ্যেই মুগ্ধতা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল নিজেরা এগিয়ে এসে হাত মিলিয়েছেন তাঁর সঙ্গে। কংগ্রেসের নেতা বক্তৃতার প্রশংসা করে বয়ানও দিয়েছেন। ফলে রাজনৈতিক শিবিরে এই প্রশ্নও উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখে দাঁড়ানো কংগ্রেস কি কেন্দ্রীয় স্তরে মমতার পাশে দাঁড়ানোর কথা ভাবছে? তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এমনটা আদৌ নয়। রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েনের কথায়, ‘‘আমরা বরাবরই বলে এসেছি আমাদের সরকার বিরোধী যা কিছু বলার আছে, তা আমরা সংসদীয় বিতর্কের মাধ্যমে তুলে ধরব। বাইরে নয়। সংসদ দেশের গণতন্ত্রের বৃহত্তম পীঠস্থান।’’ তাঁর বক্তব্যে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে লোকসভায় জেএনইউ নিয়ে সরব হলেও, বিষয়টি নিয়ে এর আগে পর্যন্ত যে নীরবতা বজায় রেখেছিল তৃণমূল, ভবিষ্যতেও তাই রাখবে। এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে সরব হলে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আজ তাঁর বক্তৃতায় মোদী সরকারের উগ্র জাতীয়বাদের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাখ, অরবিন্দ, নেতাজির প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন সুগত বসু। তাঁর কথায়, ‘‘আজ যাঁরা সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটাচ্ছেন, তাঁরা হয়তো কাল রবীন্দ্রনাথকেও জাতীয়তাবাদ বিরোধী বলতে পারেন! কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপ ভ্রমণের পর তিনি জাতীয়তাবাদের উপর কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যা পরে বই হিসাবে প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন জাতীয়তাবাদের ভাল এবং মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে। জার্মানির জাতীয়তাবাদকে রবীন্দ্রনাথ ব্যাখ্যা করেছিলেন সঙ্কীর্ণ, স্বার্থপর এবং দুর্বিনীত বলে।’’ সরকারকে বেঁধার পাশাপাশি এই মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে সুগতবাবু আজ একহাত নিয়েছেন সিপিএমকেও। কানহাইয়া কুমারের বক্তৃতা ইউটিউবে শুনেছেন বলে জানিয়ে সুগতবাবু বলেছেন, অনেক বিষয়ে তিনি কানহাইয়ার সঙ্গে একমত আবার বহু বিষয়ে নয়। তাঁর কথায়, ‘‘একজন শিক্ষক হিসাবে আমি ওঁর সঙ্গে ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে চাই। তাঁকে বলতে চাই যে স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টরা অংশ নেননি। বরং ১৯৪২ সালের আন্দোলনে এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের আন্দোলনের সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy