Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রাহুলের আগাম ছক, নিখুঁত চালে কর্নাটক জয়

বিজেপি যখন সব থেকে বড় দল হওয়ার উৎসবে মত্ত, রাহুল  তার মধ্যেই কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রস্তাব দিয়ে বদলে ফেললেন ছবি। তড়িঘড়ি বেঙ্গালুরুতে ডাকা হল দলের সব বিধায়ককে। রাজ্যপাল তার পরেও ইয়েদুরাপ্পাকেই সরকার গড়তে  ডাকবেন, সে আশঙ্কা ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০৩:৪৭
Share: Save:

সেঞ্চুরি হাঁকাতে না পারলেও কী ভাবে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হওয়া যায়, তা ছকে ফেলেছিলেন রাহুল গাঁধী। কর্নাটকের ফল প্রকাশ হতেই একের পর এক দাবার চালে অনায়াসে কিস্তিমাত করলেন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহকে।

কংগ্রেস দফতরে বসে রাহুলের কৌশলের নেপথ্য কাহিনি শোনালেন দলের এক শীর্ষ নেতা। ফল ঘোষণার আগের রাতেই গুলাম নবি আজাদ, অশোক গহলৌত, আহমেদ পটেলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাহুল। স্থির হয়, কংগ্রেস যদি একশোর কোঠা পেরোয় কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তা হলে জেডি(এস)-এর সমর্থন নিয়ে সরকার গড়বে। আর একশো না পেরোলে বিজেপিকে ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়া হবে কুমারস্বামীকে।

তখনও বিজেপি ‘আত্মবিশ্বাসে’ টগবগ করে ফুটছিল। কিন্তু ফল প্রকাশের আগের রাতেই এমন একটি ‘ঝাপসা’ সমঝোতা দেবগৌড়ার দলের সঙ্গে করেই ফেলেছিলেন রাহুল।

ফল স্পষ্ট হতেই তাই সময় লাগেনি। বিজেপি যখন সব থেকে বড় দল হওয়ার উৎসবে মত্ত, রাহুল তার মধ্যেই কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রস্তাব দিয়ে বদলে ফেললেন ছবি। তড়িঘড়ি বেঙ্গালুরুতে ডাকা হল দলের সব বিধায়ককে। রাজ্যপাল তার পরেও ইয়েদুরাপ্পাকেই সরকার গড়তে ডাকবেন, সে আশঙ্কা ছিল। ফলে তলব পড়ে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির। যাতে দ্রুত সুপ্রিম কোর্টের কড়া নাড়া যায় এবং শীর্ষ আদালত কংগ্রেস-জেডি(এস) জোটকেই সরকার গড়তে ডাকার নির্দেশ দেয় রাজ্যপালকে। কিন্তু সিঙ্ঘভি তখন চণ্ডীগড়ে আটকে। আর বিমানবন্দরও বন্ধ। তড়িঘড়ি কমল নাথের উদ্যোগে কাছেই পিঞ্জোর বিমানবন্দর থেকে দিল্লিতে উড়িয়ে আনা হয় সিঙ্ঘভিকে।

আরও পড়ুন: তেলের দাম আর শপথে শুরু জোট গড়ার প্রস্তুতি

ততক্ষণে ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ জানানোর খবর এসেছে। শাপে বর হল তাতে। দিল্লিতে রকাব গঞ্জ রোডে কংগ্রেসের ‘ওয়ার-রুমে’ ছুটলেন পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বলরা। সিঙ্ঘভি এসে বদলালেন আবেদনপত্র। কেন ইয়েদুরাপ্পাকে ডাকা হল, কেনই বা ১৫ দিন সময় দেওয়া হল— তোলা হল সেই প্রশ্ন। সারারাত শুনানি হল। পরের দিন শুনানিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ১৫ দিনের সময় কমিয়ে মাত্র এক দিন দিল শীর্ষ আদালত।

সব কিছু ঠিক যাচ্ছিল। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কংগ্রেস ও জেডি(এস) বিধায়কদের বিজেপির কবল থেকে দূরে রাখা। চার দিক থেকে বিজেপি নেতাদের প্রলোভনের ফোন আসছে। এমন সঙ্কটে আগেও পরিত্রাতা ছিলেন ডি কে শিবকুমার। ফের সঙ্কটমোচক তিনি। শুরু হল ‘রিসর্ট’ রাজনীতি। বিধায়কদের ফোনে ডাউনলোড করা হল কল রেকর্ড করার অ্যাপ। কিন্তু ইয়েদুরাপ্পা শপথ নিয়েই বদলে ফেললেন গোয়েন্দা কর্তাকে। তখন চেষ্টা হল শিবকুমারের উদ্যোগে কংগ্রেস বিধায়কদের হোটেল থেকে কোচিতে নিয়ে যাওয়ার। সেখানেও বাধা। অনুমতি মিলল না। ফের সড়ক পথে হায়দরাবাদ। বিধায়করা বেঙ্গালুরুতে ফিরলেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের দিন। সোজা বিধানসভায়।

বিধায়কদের নাগাল না পেয়ে ভেস্তে গেল অমিতের চাল। বাজি মারলেন রাহুল গাঁধীই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE