প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে অল্প খরচে এই ইউনিরাল বানানো হয়েছে।
প্রায়ই অসুখ হত বন্ধুদের। কখনও জ্বর, কখনও সর্দি-কাশি, কখনও পেটে ব্যথা। অনেক সময় অসুস্থতার কারণে স্কুলই ছেড়ে দিত অনেকে। কেন রোজ স্নান করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলা সত্ত্বেও রোগে পড়ছে তাঁদের বন্ধুরা? প্রশ্নটা মনে জেগেছিল তখনই। কারণ খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছনো গেল স্কুলের টয়লেটে। দেখা গেল সমস্ত রোগের উৎস এই শৌচাগারই। নিজেদের মুশকিল আসান হল নিজেরাই। উদ্ভাবনী শক্তিতে নজর কাড়ল তামিলনাড়ুর মানাপারাই ব্লকের কুরুমবাপাট্টি ইউনিয়ন মিডল স্কুলের একদল খুদে।
সুপিকপান্ডিয়ান, সন্তোষ, ধিয়ানিথি, রঘুল আর প্রভাহরণ। সকলেরই বয়স ১৩। সকলেই কুরুমবাপাট্টি স্কুলের ছাত্র। স্কুলে না আছে কোনও ইউরিনাল, না আছে কমোড। ফলে বাথরুমের মেঝেতেই শৌচ করতে বাধ্য হত স্কুলের ছাত্ররা। শুধু তাই নয়, বাথরুমের পয়ঃপ্রণালীর অবস্থাও ভাল নয়। ফলে ইউরিন জমে যাওয়ার সমস্যাও ছিল। আর এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকেই ছড়াচ্ছিল জীবাণু। ওরা পাঁচ বন্ধু মিলে ঠিক করে, যে করেই হোক সমাধান করতেই হবে এই সমস্যার। ‘ডিজাইন ফর চেঞ্জ’ নামের একটি প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহণ করেছিল ওরা। বাথরুমের সমস্যা সমাধান করাই ছিল সেই প্রচিযোগিতার মূল লক্ষ্য।
কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় অন্য এক সমস্যা। বাজেট কম। তাই স্কুলের বাথরুমকে মুহূর্তে ঝাঁ চকচকে করে তোলা সহজ কাজ নয়। বাছতে হবে বিকল্প পথ।
আরও পড়ুন: মার্কিন ফাইটার হেলিকপ্টার ইউনিটের বিজ্ঞানী জয়পুরের ছেলে!
ঝকঝক করছে কুরুমবাপাট্টি ইউনিয়ন মিডল স্কুলের বাথরুম
ভাবতে ভাবতেই মাথায় বুদ্ধিটা আসে। যে করেই হোক ইউরিনাল তৈরি করতে হবে। না হলে সংক্রমণ রোখা যাবে না। এ দিকে বাজার থেকে রেডিমেড ইউরিনাল কেনার সামর্থ্যও নেই স্কুলের। ঠিক হল ২০ লিটারের জলের বোতল দিয়েই কাজ চালানো হবে।
এক শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করল পাঁচ বালক। লম্বালম্বিভাবে কেটে ফেলল ২০ লিটারের জলের বোতল। তারপর সেটা ঘষে মেজে রং করে তৈরি হল ইউরিনাল। অল্প খরচে, ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়েই তৈরি হল এই ইউরিনাল। এ বার সমস্যা শুরু হল সেই ইউরিনাল ‘সেট’ করা নিয়ে। কারণ টয়লেটে সেগুলি উপযুক্ত পয়ঃপ্রণালীর সঙ্গে যুক্ত করতে টাকার দরকার। টাকা আসবে কোথা থেকে? সহায় হল স্কুলের অন্য ছাত্র আর শিক্ষকরাই। চাঁদা তোলা হল। কেনা হল পাইপ। বোতলের সঙ্গে সেই পাইপ যোগ করা হল। ইউরিনালে ফ্লাশের জন্য ইরিগেশন পাইপেরও ব্যবস্থা হল। বাথরুমের দেওয়াল নিজেরাই রং করে নিল পাঁচ বন্ধু। হ্যান্ড মেড ইউরিনাল দিয়ে তৈরি হল ঝাঁ চকচকে বাথরুম। নাম দেওয়া হল, ‘সেফ মোড পিসিং সিস্টেম’।
দেখুন ভিডিও
এখন আশেপাশের স্কুল থেকেও মাঝেমধ্যেই ডাক পড়ে পাঁচ বন্ধুর। আবদার, তাঁদের স্কুলেও বানিয়ে দিতে হবে বোতলের ইউরিনাল। পাশাপাশি চলে সচেতনতার প্রচারও। প্রভাহরণের মতে, ‘‘এই প্রজেক্ট সব জায়গায় ব্যবহার করা গেলে রোগের সংক্রমণ অনেক কমবে।’’ সেই জন্য শুধু স্কুল, কলেজেই নয়, পাবলিক প্লেসেও এ ধরনের ইউরিনাল বসানোর পরিকল্পনা করছে তারা। তাদের এই উদ্যোগ প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারেও নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
গত বছরই ‘বোল্ডেস্ট আইডিয়া’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ওরা। ‘ন্যাশনাল ডিজাইন কম্পিটিশন’-এ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারও জিতেছে। এ বার ‘আই ক্যান অ্যাওয়ার্ডস’-এও ৩৬০০ জন প্রতিযোগীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করবে কুরুমবাপাট্টি ইউনিয়ন মিডল স্কুলের এই ‘পঞ্চ পান্ডব’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy