Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পালানীর পরীক্ষায় পনীর-কাঁটা, আজ আস্থাভোট

অনেক টালমাটাল সামলে কুর্সি পেয়েছেন গত কাল। যা শুনে কর্নাটকের অগ্রহর জেলে বসে খানিকটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন তাঁর নেত্রী শশিকলা নটরাজন। আগামিকাল, সেই কুর্সি ধরে রাখার পরীক্ষায় নামছেন ই কে পালানীস্বামী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৬
Share: Save:

অনেক টালমাটাল সামলে কুর্সি পেয়েছেন গত কাল। যা শুনে কর্নাটকের অগ্রহর জেলে বসে খানিকটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন তাঁর নেত্রী শশিকলা নটরাজন। আগামিকাল, সেই কুর্সি ধরে রাখার পরীক্ষায় নামছেন ই কে পালানীস্বামী। শনিবারের বারবেলায় বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরীক্ষা দেবেন তিনি।

পালানীস্বামী বলছেন, পাশ নম্বরের চেয়ে ৭ বেশি পাওয়াটা তাঁর নিশ্চিত। কিন্তু অঙ্কের পরীক্ষায় তাঁকে ফেল করাতে প্রশ্নপত্র কঠিন করার চেষ্টা শেষ মুহূর্তেও চালিয়ে যাচ্ছেন সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম। এ দিন বিধানসভার স্পিকারের কাছে গোপন ভোটাভুটির জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পনীরের ভরসা বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশনও।

জয়ললিতার মৃত্যুর পরে তামিলনাড়ু বিধানসভায় সদস্যসংখ্যা এখন ২৩৪। গরিষ্ঠতা প্রমাণে প্রয়োজন ১১৭ জনের সমর্থন। পালানীস্বামীর দাবি, এডিএমকে-র ১২৪ জন বিধায়ক রয়েছেন তাঁর সঙ্গে। জাদুসংখ্যার চেয়ে ৭ বেশি। কিন্তু পালানীর বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার চেষ্টায় খামতি রাখছেন না পনীর। আজও শশিকলা তথা পালানী-শিবির ছেড়ে এক বিধায়ক পনীর-শিবিরে যোগ দিয়েছেন। পনীরসলেভমের দাবি, এডিএমকে-র অন্তত ১০ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। তা যদি সত্যি হয়, তবে পালানীস্বামীর পক্ষে গরিষ্ঠতা প্রমাণ করা যথেষ্ট কঠিন। রিসর্ট-দুর্গে সরাসরি ভাঙন ধরাতে না পেরে অন্য কৌশলও নিয়েছেন পনীরসেলভম। আজ স্পিকার পি ধানাপালের কাছে গোপন ব্যালটে ভোট নেওয়ার দাবি করেছে পনীর-গোষ্ঠী। যুক্তি, অনেক বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাতে ইচ্ছুক। কিন্তু হুমকি ও ভয় দেখিয়ে তাঁদের রিসর্টে আটকে রাখা হয়েছে। নির্ভয়ে গোপন ব্যালটে ভোট দিতে পারলে তাঁদের পক্ষে সমর্থন আরও বাড়বে। স্পিকার আজ কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি।

বিরোধী দল ডিএমকে প্রত্যাশিত ভাবেই জানিয়ে দিয়েছে, তাদের ৮৯ জন সরকারের বিরুদ্ধেই ভোট দেবে। কংগ্রেসের বিধায়ক ৮ জন। তারা তাদের চূড়ান্ত অবস্থান জানায়নি। কাল সকালে বৈঠকের পরেই তারা অবস্থান চূড়ান্ত করবে।

তবে আগামী কালই পরীক্ষা শেষ হচ্ছে না পালানী-শশীদের। পনীর-গোষ্ঠী গত কাল কমিশনের কাছে আবেদনে জানিয়েছিল, ২০১১-তে শশিকলাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন জয়ললিতা। পরের বছর দলে ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে। এডিএমকে-র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, টানা পাঁচ বছর দলে থাকলে তবেই দলীয় পদে বসা যায়। কিন্তু ভি মৈত্রয়ন গত কাল কমিশনের কাছে দাবি করেন, পাঁচ বছর হওয়ার আগেই শশিকলা অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদক পদে বসেছেন। নিয়ম মোতাবেক কমিশন শশিকলার কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শশীকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।

গত ক’দিনে ‘শশী-অনুগত’ বিধায়কদের তেমন সংখ্যায় টেনে আনতে না পারলেও পনীর শিবিরের নেতারা বলে যাচ্ছিলেন, ‘পিকচার অভি বাকি হ্যায়।’ পনীরের বাড়ির বাইরে জড়ো হওয়া মানুষদের কিন্তু কিছুটা হতোদ্যমই দেখিয়েছে সকাল থেকে। বেলার দিকে নির্বাচন কমিশন আসরে নামায় ফের চাঙ্গা হয়ে ঘুঁটি সাজাতে বসেন পনীর ও তাঁর শিবিরের নেতারা। ফের গোল্ডেন বে রিসর্টে থাকা বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন তাঁরা। তবে গত কয়েক দিনের মতো এখনও দুর্গের মতো আগলে রাখা হয়েছে ওই রিসর্টটিকে। বাইরের কারও ঢোকা বারণ। গত কাল শপথ নেওয়ার পরে মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে এই রিসর্টেই ফের ঘাঁটি গাড়েন মুখ্যমন্ত্রী পালানী। যাতে শিবিরে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা ভেস্তে দেওয়া যায়।

আরও পড়ুন:

‘দত্তক ছেলের’ কী দরকার! মোদীকে বিঁধলেন প্রিয়ঙ্কা

পালানী গোষ্ঠীর উপরে চাপ বাড়াতে আজ দলীয় বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক শশিকলাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন পনীর-গোষ্ঠী তথা দলের সভাপতি ই মধুসূদন। বহিষ্কার করা হয় শশীর ভাইপো টিটিভি দিনকরন এবং এস ভেঙ্কটেশকেও। একটি বিবৃতিতে মধুসূদন বলেন, ‘‘শশিকলা তাঁর প্রতিশ্রুতি ভেঙেছেন। তিনি জয়ললিতার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি রাজনীতিতে আসবেন না। দল বা সরকারের কাজে নাক গলানোর কোনও ইচ্ছাও তাঁর নেই। সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙার পাশাপাশি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছেন শশী।’’ পাশাপাশি পনীর শিবিরের পক্ষ থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের শশিকলা গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না রাখার আবেদনও জানানো হয়েছে।

সমস্যা হল, আজ মধুসূদন শশিকলাকে দল থেকে বহিষ্কৃত করলেও এডিএমকে-তে তাঁর নিজের জায়গা নিয়েই তো ধোঁয়াশা রয়েছে! কারণ শশী জেলে যাওয়ার আগে যে বৈঠকে পালানীস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেন, সেই বৈঠকেই মধুসূদনকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে কে এ সেনগোট্টায়নকে বসিয়েছিলেন। যাঁকে আজ বিধানসভার দলনেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছেন পালানীস্বামী। তিনি শশিকলা নিয়ে মধুসূদনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, ‘‘দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করার কোনও ক্ষমতা নেই মধুসূদনের। একমাত্র দলের সাধারণ সম্পাদকই কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন।’’ এই চাপান-উতোরের মধ্যেই শেষ রাতেও একে অপরের ঘর ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর।

পালানী না পনীর, কুর্সির ফয়সালা হয়ে যাবে কালই। কিন্তু এডিএমকে-র নেতৃত্ব শশীর হাতে থাকবে কি না সে লড়াই সবে শুরু হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। তাই দ্রাবির-দঙ্গল এখনই থামছে না, এটা নিশ্চিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE