সংসদে পাশ হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনও মিলেছে। কেন্দ্র চাইছে আত্মহত্যাকে অপরাধের তকমামুক্ত করার নয়া আইন আগামী বছরের শুরু থেকেই চালু হয়ে যাক।
সেই লক্ষ্যে ‘মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা আইন ২০১৭’-এর কার্যকরী কাঠামো চূড়ান্ত করার কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষে তার খসড়া প্রকাশ্যে এনে তার উপর সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামত চেয়েছে কেন্দ্র। এর জন্য ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে মত জানানো যাবে।
আরও পড়ুন: ‘লভ জেহাদে’ ফের সরব হাদিয়ার বাবা
মন্ত্রক সূত্রের খবর, আগামী জানুয়ারি মাস থেকেই নতুন এই আইন দেশে বলবৎ হয়ে যাবে এবং আত্মহত্যার চেষ্টাও খাতায়কলমে ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতা থেকে বাদ পড়বে। ভারতের মতো দেশে বিপুল জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, ৫ কোটি ৬০ লক্ষ ভারতীয় অবসাদগ্রস্ত। ৩ কোটি ৮০ লক্ষ ভারতীয় ‘অ্যাংজাইটি ডিসর্ডার’-এ ভুগছেন। আরও বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা, স্কিৎজোফ্রেনিয়া প্রভৃতি তো আছেই। সেখানে এই নতুন আইনকে বেশির ভাগ মানুষই স্বাগত জানিয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতেও, আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে কাউকে ‘অপরাধী’ বলে দেগে দিয়ে গরাদে ঢোকানোর মতো অমানবিক কিছু হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তৈরি যে বিশেষজ্ঞ কমিটি এই আইনটি তৈরি করেছে, তার অন্যতম সদস্য তথা মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী রত্নাবলী রায়ের কথায়, ‘‘একটি মেয়ে গার্হস্থ্য হিংসায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে অবসাদে আত্মহত্যা করতে গেল, কিম্বা স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত এক তরুণী হাতের শিরা কেটে ফেলল, কিন্তু মরল না— এঁদের যদি তারপর অপরাধী বলে শাস্তি দেওয়া হয়, সেটা অত্যাচারের সামিল।’’
মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপের মতেও, ‘‘এক জন কেন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন সেই কারণগুলিকে খুঁজে, তার বিহিত করে তাঁকে সাহায্য করার বদলে তাঁকে শাস্তি দিলে তাকে ভাল আইন বলা যায় না। তাই নতুন বিধি স্বাগত।’’
খসড়া আইনে আরও কতকগুলি উল্লেখযোগ্য সংযোজন রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ বার থেকে কোনও বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে ইচ্ছামতো কেউ কাউকে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ঢুকিয়ে দিতে পারবেন না। তার জন্য প্রত্যেক জেলায় এক বা একাধিক ‘মেন্টাল হেলথ রিভিউ বোর্ড’ থাকবে এবং তার অনুমোদন লাগবে। রোগী কার কাছে কী ধরনের চিকিৎসা চান, কোথায় কী ভাবে থাকতে চান, কোন ধরনের ওষুধ চান, ইঞ্জেকশন চান কিনা— শারীরিক অবস্থা অনুকূল থাকলে সে সব রোগী নিজেই ঠিক করতে পারবেন। সেটি লিখিত ইচ্ছাপত্র হিসাবে রিভিউ বোর্ডের কাছে থাকবে। তারা নজরদারি করবে।
বিধিতে আরও বলা হয়েছে, খুব জটিল পরিস্থিতি ছাড়া মানসিক রোগী মায়ের থেকে শিশুকে আলাদা করা যাবে না। শিশু রোগীদের কোনও ভাবে ইলেকট্রিক শক দেওয়া যাবে না। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রয়োজনে রোগীকে অজ্ঞান করে তবেই শক দেওয়া যাবে। মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতাতেও আনা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy