প্রতীকী ছবি।
পূর্ব রেলের জামালপুর ওয়ার্কশপ। মালগাড়ির ওয়াগন সেখানে সারাই হয়, পুরনো ওয়াগন কেটে ছাঁট হিসেবে নিলামে বিক্রিও হয়। সেখান থেকেই হঠাৎ উধাও হয়ে যায় ২৫টা ওয়াগন। রেকর্ড বলছে, ওয়াগনগুলো রয়েছে। সেগুলো জামালপুরেই এসেছিল। তা হলে গেল কোথায়? তদন্তে নেমে রেলকর্তারা জানতে পারেন, অন্যান্য ছাঁট লোহার সঙ্গে ওই ২৫টা ওয়াগনও কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাতায় সে কথা লেখাই হয়নি। ফলে রেল পেয়েছে লবডঙ্কা। আর ওয়াগন নিলামের কয়েক কোটি টাকা গিয়েছে কিছু লোকের পকেটে। ঘটনাটির সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন ভিজিল্যান্স অফিসারেরা।
ঠিক এ ভাবেই ‘নিজের ঘরে ডাকাতি’ চলছে রেলে। নানা কারসাজি। পর্দা যত উঠছে, চোখ ছানাবড়া হচ্ছে কর্তাদের। ঠিক যে ভাবে তাঁরা স্তম্ভিত হয়েছিলেন অসংরক্ষিত টিকিটের কাউন্টারে বসা রেলকর্মীদের ‘চুরি’র পদ্ধতি জানতে পেরে। প্রিন্টারের সুইচ অফ করে দিয়ে কম দূরত্বের কিছু টিকিটকে ‘বাতিল’ হিসেবে সেভ করে রাখা হচ্ছে। পরে ওই বাতিল টিকিটেই দূরের গন্তব্য লিখে তা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই বদলটা আর কম্পিউটারে ‘সেভ’ করা হচ্ছে না। ফলে রেল জানছে, ওই টিকিট বিক্রি হয়নি। অথচ বেশি দামে টিকিটটা বেচে দিয়ে সেই টাকা নিজের ঝুলিতে পুরছেন কাউন্টারে বসা কর্মী।
আরও পড়ুন: অপহরণের ধারা জুড়ল, ধৃত বিকাশ
টিকিট-জালিয়াতির এই রোগটা ছড়িয়েছে গত বছরখানেক ধরে। রেলের কর্তারা দেখেছিলেন, বিভিন্ন স্টেশনের অসংরক্ষিত টিকিটের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হুহু করে কমে যাচ্ছে! যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, কয়েক হাজার স্টেশনের অসংরক্ষিত কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি কমেছে ৯ থেকে ১২ শতাংশ! সেই তালিকারই একেবারে ওপরের দিকে ছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রাঁচি ডিভিশনের হটিয়া স্টেশন। সেখানেই প্রথমে হানা দেন রেলের দুর্নীতি দমন শাখার গোয়েন্দারা।
হটিয়াকেই কেন বেছে নেওয়া হল?
রেলকর্তারা জানান, টিকিট বিক্রির নিরিখে অনেক বড় স্টেশনের সঙ্গে পাল্লা দেয় প্রান্তিক স্টেশন হটিয়া। দেশের প্রায় সব বড় স্টেশনের সঙ্গেই হটিয়ার যোগাযোগ রয়েছে। অথচ সেই স্টেশনেই বছরখানেক ধরে অসংরক্ষিত টিকিট বিক্রি কমেছে ১১%। এক রেলকর্তার কথায়, ‘‘এমন একটা স্টেশনের এই পরিণতি দেখে সন্দেহ হয়েছিল। তাই দ্রুত সেখানে তদন্ত শেষ করা হয়।’’
গত এক বছরে শুধু দক্ষিণ-পূর্ব জোনেই ১২টি স্টেশনে টিকিট বিক্রি কমেছে অস্বাভাবিক হারে। এর মধ্যে রয়েছে টাটানগর, পুরুলিয়া, রাঁচি, ঘাটশিলা, রৌরকেলার মতো স্টেশনও। সেগুলির সব ক’টিতেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বুধবার ছোট-বড় প্রায় সমস্ত স্টেশনেরই (যেগুলিতে টিকিটের বিক্রি ভাল) অসংরক্ষিত টিকিটের কাউন্টারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেল বোর্ড। অর্থাৎ বেলঘরিয়া স্টেশন হোক বা বারাণসী— ছাড় নেই কারও।
রেলকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, রেলের প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাবেই দুর্নীতির এই রমরমা। হটিয়া বা জামালপুর তাই ব্যতিক্রম নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy