সপরিবার। ইন্দিরা গাঁধীর জীবনের উপর তোলা ছবি নিয়ে প্রদর্শনী। তারই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সনিয়া গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা বঢরা এবং রাহুল গাঁধী। সোমবার ইলাহাবাদের স্বরাজ ভবনে। ছবি: পিটিআই
সিদ্ধান্তটা তিনিই নেবেন, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়ে রয়েছে বহু দিন ধরে। কিন্তু একেবারে নিজস্ব ঢঙে সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে সনিয়া গাঁধী। বরং কংগ্রেসের রাশ নিজের হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি কার্যত ছেলে রাহুলের উপরেই ছেড়ে দিলেন সনিয়া।
ক’দিন আগে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনি-সহ শীর্ষ নেতারা এক সুরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে সুপারিশ করেছিলেন, রাহুলকে দ্রুত দলের সভাপতি পদে বসানো হোক। কংগ্রেসের তরফে পরে জানানো হয়, রাহুল নিজেও ওই বৈঠকে বলেছেন, দল চাইলে যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে তিনি রাজি। যদিও দল এখনও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। আজ এক টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে সনিয়াকে প্রশ্ন করা হয়, রাহুল কি গাঁধী পরিবারের ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যাবেন? সনিয়ার জবাব, ‘‘এই সিদ্ধান্ত আমি নেব না, আমি এর জবাব দেব না।’’
এই সিদ্ধান্ত কে নেবেন, সেটা তিনি স্পষ্ট না করলেও কংগ্রেস নেতাদের ব্যাখ্যা, আসলে রাহুলের উপরেই এই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছেন সনিয়া। ঘটনা হল, এই সাক্ষাৎকারেই নিজের পরিবার, শাশুড়ি ইন্দিরা গাঁধী সম্পর্কে বলতে গিয়ে সনিয়া জানিয়েছেন, ইন্দিরা কখনও নিজের ছেলেদের রাজনীতিতে পা রাখার জন্য চাপ দেননি। সনিয়া পরোক্ষে বুঝিয়েছেন, পরিবারের সেই ‘ঐতিহ্য’ মেনেই তিনি নিজেও রাহুলকে ‘চাপ’ দিতে নারাজ।
কংগ্রেস নেতাদের ব্যাখ্যা, প্রায় সাত বছর পরে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারের সনিয়া বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর পরিবারের দিকে যতই ‘পরিবারতন্ত্রের’ তকমা এঁটে দেওয়া হোক, আসলে তাঁর পরিবারে যথেষ্টই গণতন্ত্র রয়েছে। সনিয়া এ দিন জানিয়েছেন, ইন্দিরা, রাজীব এমনকী তিনি নিজেও কোনও দিন রাজনীতিতে আসতে চাননি। কিন্তু দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থেকেই বাধ্য হয়েছেন।
ইন্দিরার সঙ্গে। আনন্দবাজারের আর্কাইভ থেকে।
বারেবারে এসেছে শাশুড়ি ইন্দিরার কথা। গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের শোচনীয় ফল থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব কি না, এই প্রশ্নের জবাবে টেনে এনেছেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক লড়াই। সনিয়ার কথায়, ‘‘আমরা লড়াই করব। ইন্দিরাকেও অনেকে খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছিল। তিনি লড়াই করে ফিরে এসেছিলেন। আমরাও লড়াই করেই ফিরে আসব।’’
গত ১৯ নভেম্বর ইন্দিরা গাঁধীর জন্মদিন থেকে তাঁর জন্মশতবর্ষ পালন শুরু করেছে কংগ্রেস। সেই উপলক্ষে ইলাহাবাদের স্বরাজ ভবনে আজ এক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সনিয়া। এখানেই জন্ম হয়েছিল ইন্দিরার। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কাও উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন সনিয়ার সাক্ষাতের পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল ইন্দিরার স্মৃতি। দৃঢ়চেতা রাজনীতিকের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির অনেকেই ইন্দিরার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর তুলনা করেন। এ দিন সনিয়াকে এই প্রশ্ন করার পাশাপাশি বলা হয়, মোদীর সঙ্গে পাল্লা দিতে কংগ্রেসের কেউ কি প্রস্তুত? জবাবে সনিয়া বলেন, ইন্দিরার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর কোনও তুলনাই হয় না। আর কংগ্রেস এখন যথেষ্টই টক্কর দিচ্ছে। এক সময় ইন্দিরা গাঁধীকে দলের ভিতরেই বেশি উপহাস করা হত। সেই পরিস্থিতি থেকেও ইন্দিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন।
বিজেপি নেতারা অবশ্য রাহুলকে নিয়ে খোঁচা দিতেই বেশি উৎসাহী। তাঁদের বক্তব্য, সনিয়া এত দিন পর মুখ খুললেও এখনও পর্যন্ত বলতে পারলেন না, রাহুল কবে দায়িত্ব নেবেন। তাঁদের বক্তব্য, মোদীকে টেক্কা দিতে কংগ্রেসের কেউ যে তৈরি নন, সেটাই আজ যেন শোনা গিয়েছে সনিয়ার গলায়। এমনকী যখন প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে ইন্দিরার মিলের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করা হয়, সেটাও এড়িয়ে গিয়েছেন সনিয়া। তিনি বরং বলেন, পরিবারের সকলের উপরেই কোনও না কোনও ভাবে ইন্দিরার প্রভাব আছে। বিজেপির এক নেতার কটাক্ষ, ‘‘রাহুল এখনও যে অনভিজ্ঞ, সেটি সনিয়া নিজেও টের পাচ্ছেন। তাই ওয়ার্কিং কমিটির সুপারিশ, রাহুলের ইচ্ছার পরেও তিনি খোলাখুলি বলতে পারলেন না, কবে সভাপতি পদে রাহুলের অভিষেক হবে।’’
প্রথম দেখা
সেটা ১৯৬৫ সালের কথা। নেহরুকে নিয়ে একটি প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে লন্ডন গিয়েছেন ইন্দিরা। সে বারেই রাজীব প্রথম বার সনিয়াকে নিয়ে গেলেন মায়ের কাছে। সোমবার টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সেই দিনটির স্মৃতিচারণ করে সনিয়া বলেন, কেমব্রিজ থেকে লন্ডন আসার পথেই ভয়ে তাঁর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, সনিয়া বলছিলেন, সব ভয় কাটিয়ে দিয়েছিলেন ইন্দিরা। সনিয়া ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ নন বলে ফরাসিতে বললেন, ‘‘ভয় পেও না। আমারও একদিন তোমার মতো বয়স ছিল। আমিও প্রেমে পড়েছিলাম...।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy