সনিয়া গাঁধী। ফাইল চিত্র
প্রস্তুতি ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু ছেলের হাতে কামান তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল নিঃশব্দ। ২০০৪ এবং ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। অসুস্থতার কারণে ধীরে ধীরে তিনি পুরোভাগ থেকে সরে এসে এগিয়ে দিচ্ছিলেন পুত্রকে। আজ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে সম্ভবত তাঁর শেষ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সেই বৃত্তটিই সম্পূর্ণ হল বলে মনে করছেন রাজনীতির লোকজন।
তবে দলের সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও সনিয়া যে রাজনীতিকে বিদায় জানাচ্ছেন না, সেটা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পরে তিনি বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী আমাদের নেত্রী এবং মেন্টর হিসেবেই থাকবেন। তাঁর নেতৃত্ব এবং উপদেশ শুধুমাত্র রাহুলজির জন্যই নয় কংগ্রেসের সকলের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’
পাশাপাশি চেষ্টা চলছে, কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও অন্তত ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন পদটি যেন সনিয়া না ছাড়েন। কারণ, মুলায়ম সিংহ যাদবের মতো ইউপিএ-র শরিক অনেক প্রবীণ নেতার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজের সূত্রে সম্পর্কে
একটা স্বাচ্ছন্দ্য তৈরি হয়েছে। তাই সনিয়ার অনুপস্থিতিতে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন দলের অনেকেই।
যদিও সনিয়া-ঘনিষ্ঠদের সূত্রে বলা হচ্ছে, নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নে রাহুলের ‘সাবালকত্ব’ অর্জনের জন্য তাঁকে পূর্ণ স্বাধীনতাই দিতে চান সনিয়া। ছেড়ে দিতে চান সমস্ত পদই। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটাই দেখার।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সভাপতি হিসেবে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তাঁর শেষ বক্তৃতাতেও সনিয়া তীব্র ভাবে আক্রমণ করেছেন মোদী সরকারকে। আসন্ন গুজরাত নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রচারের দিশাও নির্দেশ করেছেন।
তাঁর কথায়, ‘‘রাহুল ও আমার অনেক সতীর্থ গুজরাতে প্রবল পরিশ্রম করছেন, যাতে সেখানে একটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। মানুষ যাতে বোকা না বনেন এবং পরিস্থিতির সুরাহার জন্য ঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারেন, আসুন তার জন্য আমরা নিজেদের সেরাটি মেলে ধরি।’’
গুজরাতের নির্বাচনে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে আর তাই নরেন্দ্র মোদী এড়িয়ে যাচ্ছেন সংসদ অধিবেশন— আজ এই অভিযোগও তুলেছেন সনিয়া। বিজেপিকে বিঁধে তাঁর বক্তব্য, মোদী সরকারের ঔদ্ধত্য সংসদীয় শীতকালীন অধিবেশনের উপর কালো ছায়া ফেলেছে। বলেছেন, ‘‘ভুল ত্রুটিতে ভরা জিএসটি-কে নিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রী সংসদে মধ্যরাতে উৎসব করার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেন। কিন্তু এখন সংসদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই তাঁর।’’
সনিয়ার বক্তব্য, সরকার যদি ভেবে থাকে যে গণতন্ত্রের পীঠস্থানে তালা ঝুলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাংবিধানিক দায়িত্ব এড়াতে পারবেন, তা হলে তারা ভুল করছে। সংসদে প্রশ্ন উঠবেই প্রতিরক্ষা চুক্তি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঢালাও দুর্নীতি, মন্ত্রীদের স্বার্থের সংঘাত নিয়ে। সরকার উত্তর দিতে বাধ্য। কিন্তু গুজরাত নির্বাচনের আগে সমস্ত প্রশ্ন এড়িয়ে যেতেই তারা শীতকালীন অধিবেশন বন্ধ রেখেছে। যা কখনও কোনও সরকার করেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy