প্রতীকী ছবি।
বিদেশ থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র কেনার নিরিখে ভারত এখন বিশ্বের এক নম্বর দেশ। ইজরায়েল, রাশিয়া, আমেরিকার মতো দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতি বছর কোনও না কোনও অস্ত্রচুক্তি করছে। প্রতিরক্ষা খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অস্ত্রভাণ্ডারকে আরও মজবুত করছে। কিন্তু সত্যিই যুদ্ধ হলে এই মুহূর্তে কতটা তৈরি ভারতীয় সেনাবাহিনী? পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে টুকটাক বিরোধ অনেক দিনের। সম্প্রতি চিনের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধ যুদ্ধ হাওয়া উঠেছে। চিনের সঙ্গে সাম্প্রতিক টানাপড়েনের মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন, ১৯৬২-র ভারত নয় এটা। অস্ত্রসম্ভার নিয়ে ভারতের যে গর্জন বাস্তব তার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ? কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-এর দেওয়া রিপোর্ট কিন্তু তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। শুক্রবার সংসদে ভারতের গোলা-বারুদের সম্ভারের বিষয়ে ক্যাগ যে রিপোর্ট পেশ করেছে তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
রিপোর্টে কী বলেছে ক্যাগ?
সাধারণত পুরোদস্তুর যুদ্ধের জন্য একটা দেশের নূন্যতম ৪০ দিনের গোলা-বারুদ মজুত থাকা প্রয়োজন। যাকে সেনার পরিভাষায় ‘ওয়ার ওয়েস্টেজ রিজার্ভ’ বা ডব্লিউডব্লিউআর বলে। ক্যাগের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের অস্ত্রভাণ্ডারে যে ১৫২ ধরনের গোলা-বারুদ রয়েছে তার মাত্র ২০ শতাংশ (অর্থাত্ ৩০ ধরনের গোলাবারুদ) ৪০ দিনের যুদ্ধের মতো মজুদ আছে। ৮০ শতাংশই ৪০ দিন যুদ্ধ চালানোর মতো পরিমাণে নেই।
আরও পড়ুন: ভারতে তৈরি বফর্স কামানে সস্তার চিনা মাল! মামলা সিবিআইয়ের
পুরোদস্তুর ১৫-২০ দিন যুদ্ধ করার মতো গোলাবারুদ মজুদ থাকাকে বলা হয় ‘মিনিমাম অ্যাকসেপ্টেবল রিস্ক লেভেল’ বা এমএআরএল। অর্থাত্ এর কম রসদ নিয়ে যুদ্ধে নামাটা খুবই ঝুঁকির। ভারতীয় সেনার হাতে যে ১৫২ ধরণের গোলাবারুদ রয়েছে, তার ৫৫ শতাংশই এমএআরএল-এর নীচে। আর ৪০ শতাংশ গোলাবারুদ যে পরিমাণে রয়েছে তাতে ১০ দিনও পুরোদস্তুর যুদ্ধ চালানো সম্ভব নয়।
মর্টার পরীক্ষা। ছবি: সংগৃহীত।
শুধু তাই নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে কামানের গোলাকে এর যে অংশ সক্রিয় করে, যা না থাকলে গোলাবারুদ থেকেও অচল, যাকে যুদ্ধাস্ত্রের পরিভাষায় ফিউজ বলা হয়, তার মজুতের পরিমাণ মাত্র ১৭ শতাংশ। অর্থাত্ ক্যাগ রিপোর্ট অনুযায়ী এই ফিউজের অভাবে কামানের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোলার ৮৩ শতাংশই বাস্তবে অকেজো।
এর আগে ২০১৩-তে ক্যাগ এ বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, দেশের অস্ত্রভাণ্ডারে যে পরিমাণ গোলা-বারুদ মজুত রয়েছে, খুব বেশি হলে তা দিয়ে ১৫-২০ দিন যুদ্ধ করা সম্ভব। গত চার বছরে যে গোলা-বারুদের সম্ভারের তেমন কোনও উন্নতিই যে হয়নি, রিপোর্টে সেটা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে কেন্দ্রের ইউপিএ-২ সরকার অনুমোদন দেয়, ২০১৫-র মার্চের মধ্যে গোলা-বারুদের মজুত ডব্লিউডব্লিউআর-এর (৪০ দিনের যুদ্ধক্ষম) ৫০ শতাংশের বেশি করতে হবে। এবং ২০১৯-এর মধ্যে গোলা-বারুদের পুরো ঘাটতি মেটাতে হবে। কিন্তু ক্যাগ তার রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০১৩-য় এ বিষয়ে কেন্দ্রের অনুমোদন সত্ত্বেও গোলা-বারুদের মজুতের ক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ কোনও পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়নি।
যদিও ক্যাগের এই রিপোর্ট নিয়ে কেন্দ্রের তরফে সরকারি ভাবে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, সামনের মাসের গোড়া থেকেই গোলাবারুদের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়ে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮র শেষে ৪০ দিনের পুরোদস্তুর যুদ্ধের মতো রসদ জমা হয়ে যাবে। এ ছাড়া কয়েক দিন আগেই কেন্দ্র সেনাকে ৪৬ ধরনের গোলা-বারুদ জরুরি প্রয়োজনে নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বানানোর অনুমতি দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy